চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক কয়েনের দাম কোটি টাকা!

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৮ জানুয়ারি, ২০২১ | ৭:০১ অপরাহ্ণ

পুরোনো একটি ধাতব মুদ্রা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কাছে কোটি কোটি টাকায় বিক্রির লোভ দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক চক্র।

সম্প্রতি চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই’র সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতারক চক্রটির সদস্যরা পুরোনো ধাতব মুদ্রা, টক্কর (এক প্রকার গিরগিটি) এবং সীমান্ত পিলারকে মূল্যবান বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে সেগুলো বিক্রির নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত। পুরোনো এসব ধাতব পদার্থ নাসায় গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয় বলে দাবি করত প্রতারক চক্র। বিভিন্ন দেশ থেকে ধাতব মুদ্রা চড়া দামে নাসা কিনে নেয় ও এগুলো বিক্রি করে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাওয়া সম্ভব। আর এই ফাঁদেই পা দিয়ে নিজের জমানো শেষ সম্বলটুকুও খুইয়েছেন অনেকে।

ঘটনার বর্ণনায় আরও বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতারক চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয় আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। প্রতারক চক্রের সেই সদস্য আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাকে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান বলে পরিচয় করিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। আদতে দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি এসএসসি পাস ও পেয়ারা ব্যবসায়ী। এছাড়া ব্যবসায়িক কাজে তিনি কুয়েত, স্পেন, দুবাই, মালয়েশিয়া, লন্ডন – এসব জায়গায় ঘুরে বেড়ান বলেও দাবি করা হয়।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, তদন্তের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন- একপর্যায়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি ব্যবসায়ীকে বলেন, তার কাছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে জড়িত এমন একজন ক্রেতা আছেন। তিনি বাইরে থাকেন, তবে পুরোনো ধাতব মুদ্রা কিনতে চান। আর সীমান্ত এলাকায় থাকেন এমন এক বিক্রেতা আছেন যিনি ভারত থেকে এসব জিনিসে নিয়ে আসেন। পুরো লেনদেনটি যেহেতু মিলিয়ন ডলারের ব্যাপার, তাই আনন্দ গ্রুপের ওই ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়।

বনজ মজুমদার আরও জানান, যে ব্যক্তিকে ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে, তিনি আসলে একজন শাড়ি ব্যবসায়ী। আর যে ব্যক্তি বিক্রেতা, তিনি ঝিনাইদহে একটি বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেন। এই চক্রের আরেক সদস্য, যাকে মুদ্রার ক্রেতার ব্যক্তিগত সচিব বা পিএস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, তিনি আসলে টুকরো কাপড় ঝুটের ব্যবসায়ী।

পিবিআই বলছে, এই ঘটনার পর প্রতারণার শিকার ব্যক্তির পক্ষ হয়ে কাজ করছেন এমন একজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারক ব্যক্তিটি ক্রেতা সেজে চুয়াডাঙ্গায় ধাতব মুদ্রাটি দেখতে যায়। সেখানে তাদের একটি ভল্ট এবং একটি টেকনিক্যাল রুম দেখানো হয়। আর তখনই প্রতারকের টার্গেটরা পুরো বিষয়টি বিশ্বাস করতে শুরু করে। মুদ্রাটির দাম ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। যে ব্যক্তি মুদ্রাটি কিনবেন, তিনি তখন সাড়ে আট কোটি টাকার একটি চেক দেন বিক্রেতাকে। তবে বাকি দেড় কোটি টাকা তার কাছে নেই বলে জানালে ঝিনাইদহে বসে সেই টাকা দিয়ে দেন আনন্দ গ্রুপের পক্ষে এক কর্মকর্তা। পরে কয়েনটি নিয়ে চলে যান আনন্দ গ্রুপের ওই কর্মকর্তা।

এর তিন দিন পর যিনি কয়েনটি বিক্রি করেছিলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে জানান তারা যে কয়েনটি কিনেছেন সেটি আসল নয়, নকল। তবে আসল কয়েনটি তার কাছে রয়েছে এবং সেটি পেতে হলে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে। তখন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বুঝতে পারেন যে, পুরো বিষয়টি ভুয়া, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই পূর্ব-পরিচিত এবং এরা কেউই মার্কিন নাগরিক কিংবা নাসার সদস্য নয়।

পরে চলতি মাসের ৬ তারিখ প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক বাদি হয়ে ঝিনাইদহের সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়া হলে তারা এই অভিনব কায়দায় প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে। এর তদন্তের জেরে যশোর, ঝিনাইদহ ও ঢাকা থেকে পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ভল্ট, দুটি পুরোনো মুদ্রা বা কয়েন, নগদ টাকা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে পিবিআই জানিয়েছে।

পিবিআই-এর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এরা এত লাভ দেখায় ও মানুষ এমন সম্মোহনের মধ্যে পড়ে যায় যে সম্পূর্ণরূপে প্রতারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা বুঝতে পারে না। এমনকি প্রতারণার শিকার হওয়ার অনেক দিন পরও বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন লজ্জায় কাউকে বলেও না। এই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানানো হয়।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট