চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড সিনেমা নারী স্বাধীনতার হুঙ্কার কুইন

আকাশ মিশ্র

৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট, বাংলায় যার অর্থ হতে পারে নারীচেতনার উন্মেষ। এই উন্মেষ, বা চেতনার প্রকাশ মানেই কি শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বার বার সামলোচনার কাঠগড়য়ায় দাঁড় করানো? নাকি নারীর বিশেষ স্বাধীনতা চাওয়ার হুঙ্কার ! নাকি উওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট নারীবাদের সমর্থক শব্দ। হয়ত, এই নারীদের অধিকার, অস্তিত্ব নিয়ে কাগজপত্রে, সংবাদমাধ্যমে বার বার উঠে আসা নারী সংকটের ভারি ভারি গল্পকথার মাঝখানে, নারীচেতনা পেতে থাকে নতুন নতুন সংজ্ঞা। যা অনেক সময়ই বোধগম্যের সীমানা ছাড়িয়ে এক কঠিন, খুব কঠোর নারীসত্তাকে তুলে ধরে। ধন্যবাদ জানাই পরিচালক বিকাশ বহেলকে। ধন্যবাদ জানানো উচিত ছবির নায়িকা কঙ্গনা রানাওয়াতেকও।

কারণ, বিকাশ ও কঙ্গনার নতুন ছবি ‘কুইন’ উওম্যান এমপাওয়ারমেন্টের ছবি হয়েও, অনেক বেশি সহজ ও অনেক বেশি সরল, আবার একাধারে গভীর ও অর্থপূর্ণ। যেখানে নারীর চেতনা মানে ছোটবেলা থেকে মেয়েদের উপর চাপানো নিয়মকানুনের বেড়া ভেঙে, নিজেকে নতুন আবিষ্কারের গল্প। হবু স্বামীর কাছ থেকে প্রত্যাখিত হয়েও, একেবারেও নড়বড় নয় তিনি, কিছুক্ষণের ইমোশনাল টালমাটালকে সামলে নিয়ে স্বাধীন ইচ্ছেকে সবুজ সংকেত। বিছানায় মুখ বুজে কান্না নয় বরং প্যারিস, অমস্টাডারমে নিজের মতো করে নিশ্বাস নেয়া। আর পুনরায় বয়ফ্রেন্ডের দমবন্ধ আবহাওয়া টের পেয়ে, ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হাতের অনামিকায় আটকে থাকা সমাজের দেয়া এনগেজমেন্ট ট্যাগ। এটাই তো নারী। যে পুরুষতান্ত্রিক সামাজের কাছে স্বাধীনতা ভিক্ষে নয়, নিজেই স্বাধীন হওয়ার পথ খুঁজে নেয়া আর বিকাশের ‘কুইন’ ছবি ঠিক এই জায়গা থেকেই সফল ও স্বতন্ত্র।
উপরের লেখা থেকে গল্পের আঁচ পেয়ে মনে হতেই পারে বলিউডে এর আগে ‘কুইন’ ঘরানার প্রচুর ছবি হয়েছে। মিল পেতে পারেন সইফ-দীপিকা-ডায়না অভিনীত ‘ককটেল’ ছবিরও। তবে পরিচালক বিকাশ বহেলের ছবির আসল পাঞ্চ কিন্তু অন্যান্য ছবির মতো, নায়িকার শারীরিক ভোলবদলে নয়, এখানে চেতনার ভোলবদলকে তুলে ধরেছে। আর সেদিক থেকেই অন্যান্য ছবি থেকে অনেকটাই হটকে ‘কুইন’। সম্প্রতি ইমতিয়াজ আলির ‘হাইওয়ে’তেও নারীর আত্মমুক্তিকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছিল। যেখানে সমাজ, পরিবারের সেই মেয়েদের গায়ে ছোটবেলা থেকে লাগান নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আলিয়া ভাট অভিনিত নারী চরিত্র। নিজের মতো করেই বেছে নিয়েছিল নিজের জীবন। ‘কুইন’-এর কঙ্গনা রানাওয়াতও প্রতিবাদ অনেকটা এইরকমই। চারদেওয়ালের গ-ি ছেড়ে বেরিয়ে পরেই এ যেন আত্মশুদ্ধির গল্প।

ছবিটি কি দেখা উচিত? উত্তর একটাই। কারণ, এই ছবি শুধুমাত্র চিত্রনাট্যে শক্তপোক্ত নয়, এ যাবত শুধুমাত্র অভিনয়ের ওপর ভর দিয়ে যে সব ছবি বলিউডে নির্মিত হয়েছে, সেই সব ছবির তালিকায় অনায়েসে প্রথম স্থান অধিকার করতে পারার মতো ছবি হল কুইন। গোটা ছবি জুড়ে মুগ্ধ হয়ে দেখতে হবে কঙ্গনার অভিনয়কে। বাহবা দিতে হবে তাঁর প্রত্যেকটি অভিব্যক্তিতে। শক্তপোক্ত পার্শ্ব চরিত্রের ওপর ভর দিয়ে থাকলেও কঙ্গনা এই ছবিতে একাই একশো। ছবির গোটা ভার তাঁরই কাঁধে। তাই শুধুমাত্র কঙ্গনার জন্যই এ ছবি বার বার দেখা যেতে পারে। তবে দুর্বলতা রয়েছে সম্পদনাও। ছবিটি বেশ কিছু জায়গাতেই বেশ শ্লথ। ছবির গতি একটু দ্রুত হলে, ছবি আরও বেশি শক্তপোক্ত বা বলা ভাল কমপ্যাক্ট হতে পারত। অভিনয়ে কঙ্গনার ওপর যেহেতু গোটা ছবির ভার, সেহেতু অন্যদিকে চোখ যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। তার মধ্যে রাজ যাদব, লিস হেডেন বেশ ভাল। শেষমেশ, ‘কুইন’ একেবারেই যেন এক রানি গল্প। যে বদ্ধ রাজ দরবার থেকে বেরিয়ে, নিয়মের বাঁধ ভেঙে বেছে নেয় রানির মতো জীবন। যেখানে রয়েছে মুক্ত বাতাস, আর রঙিন বিশ্ব।
কুইন মহিলা দর্শকদের ভালো লাগবে। এছাড়াও যারা নারীমুক্তিতে আস্থাশীল তাদের চলচ্চিত্রটি কিছুটা হলেও ভাবনার খোরাক জোগাবে। এটি হিন্দি সিনেমার বাণিজ্যিক ধারার একটি চলচ্চিত্র।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট