চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্পোরের্ট-পির

শাহিদ হাসান

২৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫২ পূর্বাহ্ণ

আম, জাম, কাঁঠাল, তাল আর সুপারি গাছের ছায়ায় ঘেরা বিষ্ণুপুরে প্রায় আড়াই কানি জমিতে বিষ্ণুর দিঘি। এলাকায় গল্প চালু আছে, দিঘিটি নাকি এক রাতে খনন করা হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকে তা বিশ^াস করেন। প্রজারা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় বিশাল এক দিঘি। এ নিয়ে মুরুব্বিদের মধ্যে বিশ^াস-অবিশ^াসের তর্ক চলে, ঘরে-বাইরে। তাদের মুখ থেকে আরো শোনা যায়, বিষু চৌধুরীকে স্বপ্নের মাধ্যমে এক অজ্ঞাতনামা দেবী দিঘি খননের আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তার আদেশ অমান্য করে বিষ্ণু চৌধুরী নির্বংশ হবে। এ বিপদ থেকে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। জমিদার বিষ্ণু চৌধুরী তাই দিঘিটি খনন করিয়েছিলেন।

সদয়বান জমিদার হিসেবে বিষ্ণু চৌধুরী’র সুনাম আছে। হিন্দু ও মুসলিম প্রজারা তাকে সম্মানের চোখে দেখে। প্রজারা যথা সময়ে খাজনা দিতে না পারলে জমি-জমা, ঘর-ভিটে ও হালের বলদ কেড়ে নেয় না। তবে বাঘের মতো চোখ লাল করে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে, ‘আগামিতে এরকম যেন আর না হয়।’ এতে প্রজাদের নিম্নাংশে কাপড় নষ্ট হতে বেশি সময় লাগে না।
বিষ্ণু চৌধুরী’র স্ত্রী রমা চৌধুরী ধার্মিক মহিলা, গম্ভীর এবং গৃহকর্মে পটু। বিষ্ণু চৌধুরী একটা মাত্র বদ-অভ্যেস তার পছন্দ নয়। মধ্য রাতে ঢুলুঢুলু অবস্থায় বাড়ি ফেরে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে অনেকবার মনোমালিন্য হয়েছে। রমা চৌধুরী রাগ করে বেশ ক’বার বাপে বাড়ি চলে গিয়েছিল। তাদের দু’ছেলে, এক মেয়ে। মেয়েকে ক’বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন। তার কোলে পুত্র সন্তান । বিষ্ণু চৌধুরী’র বড় ছেলে কলকাতায় আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা করছে। ছোট ছেলে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। দলবল নিয়ে বনে-বাদাড়ে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাব। একবার বটবৃক্ষের কোটর থেকে পাখির ছানা নিতে গেলে সাপে ফণা তুলেছিলো। ছোবল মারতে পারেনি। প্রায় বছর বার্ষিক পরীক্ষায় পাশ করে না। পাশ না করলেও এক ক্লাসে তাকে দু’বার পড়তে হয়নি। নতুন ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হরি সাধন বাবু এ ব্যাপারে জমিদারকে জানালে জমিদার উত্তরে বললেন, ‘সবার সব কিছু হয় না, মাস্টার মশায়। দেবেন্দ্র’র কপালে যা লেখা আছে তাই হবে, আমি আর আপনি কিছুই করতে পারবো না। সব ভগবানের হাতে।’ হরিসাধন বাবু আর কোন কথা না বলে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলেন। তার স্ত্রী ভেতর থেকে এতক্ষণ সব শুনছিলেন। স্বামীকে বললো, ‘তুমি দেবার ব্যাপারে কঠোর হও, এখনো সময় আছে।’ জমিদার বললো, ‘কোন লাভ নেই, দেবা মা কালীর ভোগে গেছে।’ গাঁয়ের ক’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করতে আসলে রমা অন্দরে চলে যায়।

বেশ বড়োসড়ো বৈঠকখানা। পালিশ করা কারুকার্যময় শেগুন কাঠের সারি সারি চেয়ার। সামনে একটা টেবিল, তাও শেগুন কাঠে গড়া। সবাইকে বসার ইঙ্গিত দিলেন।
: কী ব্যাপার, সদলে। কোন অঘটন। সময় ভালো যাচ্ছে না মাস্টার মশায়।
: জমিদার বাবু, শুনলাম সাহেবরা এ মাটি খ-িত করে চলে যাবেন।
: আমিও অমন শুনেছি।
: খ-িত হলে কে কোথায় যাবো তা বলা মুশকিল জমিদার বাবু।
: মাস্টার, ভগবান জানেন আমাদের ভবিষ্যৎ।
: কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে আপনার দ্বারস্থ হয়েছি।
: বলুন।
: আপনার দিঘির পাশে যে জমিটা পড়ে আছে সেখানে যদি একটা মন্দির…
: ভালো প্রস্তাব। আমি অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। মাস্টার মশায়, দায়িত্বটা আপনি নিন। টাকার ব্যাপারে চিন্তা করবে না।
তাদের আলাপ চলাকালে একজন লোক সদর দরোজায় দাঁড়ালো। দেহের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। পরনে শাদা কাপড়, মাথায় টুপি, মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি, হাতে লাঠি এবং খালি পা। জমিদার জিজ্ঞাসা করলো, ‘কী চান, ফকির বাবা?’
: কথা আছে বৎস।
: বলেন।
: খাবার পানি দাও। অনেক দূর থেকে এসেছি। দু’পায়ে পথের বালি।
: ফকির বাবা ভেতরে আসুন।

ফকির ভেতরে প্রবেশ করলো। চারপাশ এক নজর দেখে নিয়ে চেয়ারে বসলো। দেয়ালে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও রাবণের যুদ্ধ ক্ষেত্রের তৈলচিত্র। কোন কথা বলছেন না ফকির। মাথা নিচু করে মাটি দিকে চেয়ে আছে। এক ঘটি জল সাথে মুড়ি, গুড় আর কলা দেয়া হলো। পানি পান শেষে আবার মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। সকলের নজর তার দিকে। জমিদার বললো, ‘কলা খান বাবা।’ মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো। কিছুক্ষণ পর বললো, ‘আমি আপনার তল্লাটে থাকতে চাই।’
: থাকুন, আমার কোন আপত্তি নেই ফকির বাবা।
: তবে গাছ-পালা ঘেরা দিঘির পাড়ে। ওখানে আমার জন্য একটা ঘর তুলে দেবে। আমি এবং আমার ক’জন শিষ্য থাকবো।
: ঠিক আছে।
: আর হ্যাঁ, দিঘিতে আমরা গোসল করবো।
: কোন অসুবিধা নেই।
: আল্লা তোমার ভালো করুক।
জমিদারকে সালাম দিয়ে চলে গেলো। সকলে জমিদারের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো । অন্যরা চুপচাপ। মাস্টার মশায় বললেন, এটা কী করলেন জমিদার বাবু। চরও তো হতে পারে।
: আরে না মাস্টার মশায়। এ স্বপ্নের ফল। ঠিক আছে, আপনাদের সঙ্গে একথাই রইলো।
নানা ঢেউয়ের ভেতর একটা জোড়াতালি রেখা টেনে নীলকুঠিয়ারা চলে গেলো চিরতরে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার পর এখন কেউ এপারে আর কেউ ওপারে। ওপারের কাছে এপারের মানুষ বিদেশি আর এপারের মানুষ ওপারের কাছে অনুরূপ। পাসপোর্ট নিয়ে এপারে-ওপারে আসা যাওয়া করতে হয়। এপারের মানুষ আবার পরের অধীনে চলে গেল। সুদীর্ঘ বছর ঝড়-ঝাপ্টার মধ্য জিন্নাহ টুপিদের তাড়ানোর পর নিজেদের পতাকা তলে আশ্রয় নিল এ অঞ্চলের মানুষ।

বিষ্ণুপুর বর্তমানে শামসেরপুর। আজ থেকে বেশ ক’বছর আগে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনোরদের অনেকে এখনো বিষ্ণুপুর বলে। প্রায়জনের হাতে মুঠোফোন। তরুণ-তরুণীর পোশাক-আশাক, চুলের কাট হিন্দি সিনেমার নায়ক-নায়িকার অবিকল অনুকরণ আর কথায় কথায় হিন্দি সংলাপ।
শামসেরপুরের তিন রাস্তার মোড়ে শে^ত পাথরে গড়া বিশাল মসজিদের ভেতর ফকির বাবার মাজার। মখমলের দামি গিলাফে মোড়া। উচ্চপদস্থ জনৈক সরকারি কর্মকর্তা মাজার নির্মাণের সমস্ত খরচ বহন করেছেন। প্রতি মাসে তার নিকট থেকে মোটা অংকের বরাদ্দ আসে! বর্তমানে গদিতে আসীন ফকিরের কথিত পুত্র। শাদা রঙের কাবুলি ড্রেস, মাথায় টুপি, অ্যান্ড্রোয়েট মোবাইল আর পুরো শরীরের দামি সেন্টের ঘ্রাণ ম ম করছে। মেরুন কালারে গাড়িতে ওঠার সময় অনুসারিরা তার মাথায় ছাতা ধরে। একজন শিষ্য পেছনের সিটে বসে। ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘সুমন, কোথায় যাবো আজ?’
: আগ্রাঘাট, গত সপ্তাহে খাতুনপাড়ায় গিয়েছিলাম। সওদাগররা আমাদের বেশ আর্থিক সাহায্য করেছে।
পুরনো বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনপাড়া। সেকাল থেকে ব্যবসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সুনাম রয়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা খাতুনপাড়ায় বসে পুরো নগরের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।

ফকিরের কথিত পুত্র আগ্রাঘাটের দিকে যাবার আদেশ দিলো। গাড়ি চলার সাথে সাথে চালক এসি অন করলো। মসৃণ পিচঢালা সড়কের দু’পাশে অগণন শপিংমল আর অ্যাপার্টমেন্ট। গাছ-পালার সংখ্যা আগের তুলনায় কম। ডাস্টবিন উপছে ময়লা রাস্তায়। কাক আর কুকুরের মধ্যে উচ্ছিষ্ট নিয়ে টানাটানি। পথচারীরা নাকে হাত দিয়ে ডাস্টবিন অতিক্রম করতে হয়। গত রাতে ঘণ্টাখানিক বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। গাড়ির চাকার সঙ্গে ময়লা পানির ঘর্ষণে তা ছিটকে পথচারীকে ভিজিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়। জেব্রা ক্রসিং না থাকাতে যত্রতত্রভাবে পথচারীরা রাস্তা পার হচ্ছে। মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল বাতিগুলো দীর্ঘদিন থেকে জ¦লছে না। পুরোদমে চলছে উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজ। যেগুলো সমাপ্ত হয়েছে তা উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বেলা ১২টার দিকে জ্যাম সাধারণত থাকে না। আধা ঘণ্টার মধ্যে আগ্রাঘাটের একটা কর্পোরেট অফিসে পৌঁছে গেলো। খবর পাঠানো হলো মহাব্যবস্থাপকের কাছে। বিদ্যুৎ চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে অসহ্য গরম। অসহনীয় মাত্রায় বিদ্যুতের লুকোচুরি। মনে হয় টম অ্যান্ড জেরি’র ‘এই আসা এই যাওয়া’। পিয়ন এসে বললো, আপনারা বসুন, স্যার ডাকবেন। সুমন মাথা নাড়লেন। ফকিরের কথিত পুত্র কোন কথা বললেন না, মোবাইলে ফেসবুক দেখছেন আর প্রয়োজনে লাইক দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে কমেন্টও করছেন। জেনেরেটর চালুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ আসলো। মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করার ডাক পড়লো। গ্লাসফিটিং তার রুম। দু’জনে তার রুমে ঢুকলেন। মহাব্যবস্থাপক সালাম দিয়ে তাদেরকে টেবিলের সামনে তার মুখোমুখি দু’টি চেয়ার বসতে বললেন। কাঁচের দেয়াল ঘেঁষে একটি তিন সিটের, দু’টি এক সিটের সোফা আর টি-টেবিল।
ইতোমধ্যে মার্কেটিং ম্যানেজার মনসুর আলি ভাউচার সাইন করার জন্যে ঢুকলেন, তাকে ইশারায় সোফাতে বসতে বললেন। তিনি সোফা গিয়ে বসলেন। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। গায়ের রঙ শ্যামলা। উচ্চতা এভারেজ বাঙালির সমান। মাথায় চুল কম। ক্রিম কালারে ফুল শার্ট, টাই, গাবাডিং প্যান্ট আর এপেক্সের কালো জুতো।

মহাব্যবস্থাপক বললেন, সরি দেরি হয়ে গেলো, আপনাদের কী সেবা করতে পারি?
: আমার নাম সুমন আহমেদ স্যার। ইনি পির শামসের আলির পুত্র ওসমান পিরজাদা। ওনার বাবার নামে এলাকার নাম রাখা হয়েছে শামসেরপুর।
: আচ্ছা।
: স্যার, ওনার বাবা অনেক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁর হুকুমে নদীর পানি দু’ভাগ হয়ে যেতো এবং গাছে ফু দিলে পাতা সব ঝরে পড়তো।
: শৈশবে রূপকথায় অমন ঘটনা পড়েছিলাম।
: স্যার এ রূপকথা নয়, সত্যি ঘটনা।
: তাই।
: জি¦ স্যার।
: সুমন সাহেব, আপনার কথা মতে উনি অনেক কিছু পারেন। আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো উনি টাকা বানাতে পারেন?
: বৈষয়িক ব্যাপারে উনার আগ্রহ ছিল না স্যার। আগামি মাসের শামসের বাবা ওরস। ওরসে নামি-দামি ব্যক্তিরা অংশ গ্রহণ করবে। তাই আপনাদের দাওয়াত দিতে এসেছি।
: ওরস কোথায় হবে?
: শামসেরপুরের তুলাতলিতে স্যার।
: ঠিক আছে যাবো।
: স্যার, অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কিছু সহযোগিতা প্রয়োজন।
: আপনি হয়তো জানেন, আর্থিক সহযোগিতার সঙ্গে বৈষয়িক সম্পর্ক নিবিড়। যেহেতু উনি বৈষয়িক ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না, সেহেতু…
ওসমান পিরজাদার মোবাইল বেজে উঠলো। কল রিসিভ করে বললেন, হ্যালো বলুন।
: আমি আপনার নাখান্দা ভক্ত আমির আলি।
: খাতুনপাড়ার ব্যবসায়ি?
: জ¦ী হুজুর।
: বলুন।
: হুজুর আমার বুকে দীর্ঘ দিন থেকে অসহ্য ব্যথা। বেশ ক’জন ডাক্তার দেখিয়েছি কোন কাজ হয়নি। তাই আপনাকে ফোন করলাম।
: চিন্তা কোন কারণ নেই। আপনার মোবাইলটা বুকে ধরুন, আমি আমার মোবাইলের মাধ্যমে ফু দিচ্ছি। আপনার বুকে ধরেছেন?
: জ¦ী হুজুর।
ওসমান পিরজাদা ঠোঁট দু’টি নেড়ে মোবাইলে ফু দিলো বেশ ক’বার। মহাব্যবস্থাপক এবং মার্কেটেং ম্যানেজার মনসুর আলি তা দেখলেন।
: পাঁচ মিনিট পর আমাকে কল ব্যাক করবেন।
: ঠিক আছে হুজুর।
মহাব্যবস্থাপক বললেন, ‘এবিষয়ে আর্থিকভাবে সাহায্য করার কোন ফান্ড আমাদের নেই। রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়নি।’
: বাবা দোয়ায় আপনাদের ব্যবসা আবার চাঙ্গা হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই।
: কারণ আছে সুমন সাহেব। এবার আমাদের ইনক্রিমেন্ট হয়নি। জানেন তো নিজে বাঁচলে বাপের নাম।’
ওসমান পিরজাদার মোবাইল আবার বেজে উঠলো। রিসিভ করে বললেন, ‘ভালো লাগছে?’
: ভালো হুজুর।
: মুশকিল আহসানের মালিক ওপরঅলা, আমি উছিলা মাত্র।
ওসমান পিরজাদা কল কেটে দিলেন। সুমন জিজ্ঞাসা করলেন, ভালো হয়েছেন আমির সওদাগর ?
: না হয়ে উপায় আছে।
সুমন বললেন, স্যার আপনি চেষ্টা করলে হবে।
: দেখুন, আমার নির্দিষ্ট ক্ষমতা। এর জন্য আমাকে উপরের লেভেলে কথা বলতে হবে। ঠিক আছে আমি দেখছি।
দু’জনে চলে গেলেন। মহাব্যবস্থাপকের ইশারায় মনসুর আলি সোফা থেকে উঠে তার সামনের চেয়ারে মুখোমুখি বসলেন।
: দেখলে মনসুর আলি।
: জ¦ী স্যার। আসলে স্যার এক সময় তাদের দৌর্দ- প্রতাপ ছিলো। ওরসের সময় ভক্তকুল দলবেঁধে গরু-মহিষ-ছাগল নিয়ে তাদের কাছে যেতো ।
: ঠিক বলেছ। আয়ের এটাই উৎস।
: স্যার, তাদের ভক্ত আগে তুলনায় কম। বর্তমানে যারা আছে তাদের মধ্যে ঘুষখোর, অসাধু ব্যবসায়ি আর মূর্খ জনগণ। আপনি নিজেই জানেন, ভক্ত মানে অন্ধ, অন্ধ মানে তার কাছে জগতের নতুন আলো বন্ধ।
: মনসুর, এখন তো তারা কর্পোরেট অফিসে ধর্ণা দিচ্ছে।
: স্যার, তা দেবে। মানুষের সচেতনতা ক্রমশ বাড়ার কারণে আগের তুলনায় তাদের আয় অনেক কমে গেছে। তাই কর্পোরেট অফিসে আনাগোনা। এদেরকে বর্তমানে কর্পোরেট-পির বলা যায় স্যার।
: তা তুমি বলতে পারো মনসুর। আরেকটা কথা, যতদিন সব মানুষ সত্যিকারের আধুনিক হবে না, ততদিন এ ধারা চলবে। আধুনিক মানুষ অবশ্যই বিজ্ঞান মনস্ক ও যুক্তিবাদী আর ওরা…
: স্যার, আমি একমত। আপনার সঙ্গে সুমন কথা বলার সময় ওসমান পিরজাদার মোবাইলে কল এসেছিলো। তার সঙ্গে পিরজাদা যা বললেন আপনি তো শুনলেন।
: তা আগে থেকে ঠিক করা আছে।
: স্যার, আমিও তাই বলতে চেয়েছিলাম।
: মনসুর, আমাদের অনেক সময় নষ্ট হলো। তুমি ভাউচারগুলো রেখে যাও। আমি দেখে আধা ঘণ্টার মধ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
মনসুর সালাম দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

বিচিত্র এদেশের মানুষ। প্রযুক্তির আলোয় বাস করেও চিন্তাগত দিক থেকে আদিম। হায়রে মানুষ! বুঝতে পারছো না সময়ের গতি-প্রকৃতি। সমাজে যখন বোধ উদয় হবে তখন সময় থাকবে না। অন্যরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আরো যাবে। কেঁদেও পাবে না তখন কূল-কিনারা। এসব ভাববার পর ভাউচার দেখা শেষ করে মহাব্যবস্থাপক পিয়নের উদ্দেশ্যে কলিং বেল টিপলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট