চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইমান ও আমলের প্রতিদান

ড. মো. শাহজাহান কবীর

৬ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

ইমান ও আমল মহান আলল্গাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষই ইমান ও নেক আমলের নিয়ামত লাভে আলল্গাহতায়ালার রহমতের প্রত্যাশী। কারণ তাঁর রহমত ছাড়া কোনো মানুষই ইমান লাভ করতে পারে না। ইমান ব্যতীত নেক আমল পরকালে কোনো কাজে আসবে না।

ইমান শব্দের অর্থ :বিশ্বাস করা, আনুগত্য করা, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা ও অবনত হওয়া। ইসলামের যাবতীয় ইবাদত ও নেক আমলের বুনিয়াদ হচ্ছে ইমান। ইসলামের পরিভাষায় ইমান হলো- সৃষ্টিকুলের একমাত্র স্রষ্টা মহান আলল্গাহর একত্ববাদ, ক্ষমতা ও গুণাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করে তাঁর কাছে নিজেকে নিরঙ্কুশভাবে সঁপে দিয়ে প্রশান্তি অর্জন করা এবং অন্য সবকিছু থেকে নির্ভয় ও নির্ভীক হয়ে যাওয়া। আমরা জানি, আমল মানে কর্ম বা কাজ; আমলে সালেহ মানে সেসব কাজকর্ম ও আচরণ, যা সৎ. ভালো, উৎকৃষ্ট, সঠিক, যথার্থ, গ্রহণযোগ্য ইত্যাদি। এ ছাড়াও আলল্গাহর নির্দেশিত পথে সমঝোতা স্থাপন, মিলেমিশে চলা, নিষ্পত্তি করে নেওয়া, মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, সমঝোতা করে চলা, সন্ধি স্থাপন করা, মীমাংসা করে নেওয়া ও সংযমশীল হওয়া। অর্থাৎ ইমান সহকারে আল্লাহ নির্দেশিত পথে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে যে কোনো সৎ ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করাই আমল অথবা ইমান সহকারে ইসলামের বিধিবিধান মেনে জীবনযাপন করাই প্রকৃতপক্ষে আমল।

ইমান কোনো ব্যক্তির জীবনে অমূল্য সম্পদ। যে ইমান হারাবে, সে দুনিয়ায় নিকৃষ্ট জীবনযাপন করবে এবং মৃত্যুর পরের জীবনে জাহান্নাম হবে তার স্থায়ী ঠিকানা। ইমান ছাড়া মৃত্যুবরণকারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে। আলল্গাহতায়ালা সুরা আল মায়েদার ৭২ আয়াতে এরশাদ করেন : নিশ্চয় যে আলল্গাহর সঙ্গে শরিক করে, তার জন্য অবশ্যই আলল্গাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।

ইমান দুনিয়া ও আখেরাতে সব সাফল্যের চাবিকাঠি। যে ইমান সহকারে নেক আমল করবে, তাকে আল কোরআনে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুরা আন নাহলের ৯৭নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে : যে মুমিন অবস্থায় উত্তম আমল করবে, সে পুরুষ বা নারী হোক আমি তাকে দুনিয়ায় উত্তম জীবনদান করব। আখেরাতে তাদের প্রদান করব সর্বোত্তম আমলগুলোর প্রতিদান। এ আয়াতে নেককার মুমিনদের দুটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে- উত্তম জীবন ও সর্বোত্তম আমলের প্রতিদান। এ আয়াতে যে উত্তম জীবনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা মুমিনরা দুনিয়াতেই লাভ করবে। এখানে উত্তম জীবনের অর্থ :আত্মতুষ্টি, মানসিক প্রশান্তি, হালাল রিজিক এবং আলল্গাহর ইবাদত ও আনুগত্যে প্রশান্তি লাভ করা। এসব কিছু মিলেই একজন মুমিনের দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। আখেরাতের জীবনে তার জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে অনন্ত জান্নাত।

যে কোনো আমল মহান আলল্গাহর দরবারে কবুল হওয়ার পূর্বশর্তই হলো ইমান থাকা। যদি কেউ অজস্র নেক আমল করে, কিন্তু তার ইমানই না থাকে, তবে এসব নেক আমল আখেরাতে তার কোনো কাজে আসবে না। এমনকি যে কেউ ইমান ব্যতীত সালাত, সাওম, হজ, জাকাত, সাদকা, কোরবানি, সমাজসেবা কিংবা অন্য যে কোনো ভালো কাজই করুক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য আলল্গাহতায়ালা আল কোরআনে নেক আমলের প্রতিদান পাওয়ার শর্ত হিসেবে বারবার ইমানকে জুড়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আলল্গাহতায়ালা সুরা তাহারের ১১২নং আয়াতে এরশাদ করেন : যে ইমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করবে, সে কোনো জুলুম বা ক্ষতির আশঙ্কা করবে না। সুরা আল আম্বিয়ার ৯৪নং আয়াতে আল্লাহ আরও এরশাদ করেন : যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আমি তো তা লিপিবদ্ধ করে রাখি। এই আয়াতগুলো পাঠে জানা যায়, আমলে সালিহ বা নেক আমলের দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হলো ইমান থাকা। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, ‘ইমান ছাড়া কোনো নেক আমলই আলল্গাহতায়ালার দরবারে কবুল হবে না। সুতরাং দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য ইমান আনা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট