চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোকিলের বৈচিত্র্যময় জীবন

রোজী আকতার

২২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

কোকিলের নাম শোনেননি বা চিনেন না এমন লোক দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোকিলের সুমিষ্ট সুর মন ভরিয়ে দেয়। বসন্ত কালে কোকিল আমাদের দেশে বেশি নজরে পড়ে। তাই আমরা বহুদিনের অদেখা কাউকে দেখলেই উপমা দেই ‘তুমি দেখছি বসন্তের কোকিল হয়ে যাচ্ছো’। কোকিলকে নিয়ে অনেক কবি বা ছড়াকার লিখেছেন। কোকিল আমাদের আবাসিক পাখি। বাংলাদেশের সর্বত্র কোকিল চোখে পড়ে। গ্রামে ও শহরেও এদের বিচরণ যত্রতত্র। এরা বৃক্ষচারী পাখি। গাছের ডালে ডালে উড়ে বেড়ায়। এরা ফলভুক। বটের ফল প্রিয় খাদ্য। এদের দৈর্ঘ্য ৪২-৪৫ সে.মি. হয়।

পৃথিবীতে সব প্রাণীই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে। একমাত্র কোকিল ব্যতিক্রম। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির পাখি। এরা কখনও তাদের ছানাদের চোখে দেখেনি।

যার জন্য তারা মাতৃত্বের অধিকার নিয়ে ছানাদের লালন-পালন করতে জানে না। এরা নিজেরা বাসা তৈরি করতে পারে না। অন্যান্য পাখিদের বানানো বাসায় মেয়ে কোকিল ডিম দেয়। দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে।

এরা ধোঁকাবাজিতে পারদর্শী। খুব সহজেই অন্য প্রজাতির পাখিকে বোকা বানাতে পারে বলেই পরের উপর নিজেদের বংশ বৃদ্ধির দায়িত্ব অনায়াসে দিতে পারে।
ডিম পাড়ার সময় হলে তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে।

কাক বা অন্যান্য পাখির বানানো বাসার আশেপাশে পুরুষ কোকিল ডাকতে থাকে। পুরুষ কোকিলের শব্দ পেয়েই কাক বা অন্যান্য পাখি যাদের বাসা তৈরি করা আছে ও সেই বাসায় ডিম আছে তারা পুরুষ কোকিলকে তাড়া করে। অন্যান্য পাখি মনে করে পুরুষ কোকিল তাদের ডিম ছিনিয়ে নিতে এসেছে। বাস্তবে তা নয়। যখন কাক বা অন্যান্য পাখি পুরুষ কোকিলকে তাড়া করে সেই সুযোগে পাশে লুকিয়ে থাকা মেয়ে কোকিলটি অন্যান্য পাখির বাসায় টুপ করে বসে পড়ে, সেখান থেকে দু’একটি ডিম সরিয়ে ফেলে। এবং সেখানে ডিমের সংখ্যা ঠিক রাখতে পাখিটি নিজের ডিম রেখে যায়।
এভাবে দুই থেকে তিনটি বাসায় মেয়ে কোকিল ডিম দিয়ে চিরতরে সেই স্থান ত্যাগ করে। কোনদিন ফিরেও দেখে না তার দেয়া ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলো কিনা! অথচ অন্যান্য প্রজাতির পাখি ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মাতৃত্ববোধ জেগে উঠে। পালা করে মেয়ে ও পুরুষ পাখি ডিমে তা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করে তোলে।
আর এটাই হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম। অথচ কোকিল পরের বাসায় ডিম দিয়ে নিশ্চিন্তে উড়াউড়ি করতে থাকে।

কাক বা অন্য পাখির বাসায় কোকিলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা ফোটার পর কোকিলের বাচ্চারা অদ্ভুত আচরণ করে। কাকের বাসায় রাখা কোকিলের ডিম থেকে সবার আগে বাচ্চা ফোটে। পরে সেই কোকিলের বাচ্চা অন্য ডিমগুলো ঠেলে বাসার নিচে ফেলে দেয়। মা পাখি দেখে দুটি ডিম নেই।

তারপরও সে সদ্য ফোটা কোকিলের ছানাদের নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে ও পরম যতেœ লালন পালন করে। অনেক সময় এর ব্যতিক্রমও ঘটে। কাক বা অন্য পাখির বাচ্চার সাথে কোকিল ছানাও বড় হতে থাকে। বিভিন্ন খাবার মা ও বাবা পাখি সংগ্রহ করে কোকিলের ছানাকে খাওয়ায়।
একসময় কাক বা অন্যান্য পাখি বুঝতে পারে এই ছানা তাদের না। তখন আপন মনে কোকিলের ছানা কাক বা অন্য পাখির বাসা থেকে উড়ে পালিযে যায়। এই হচ্ছে কোকিলের জীবন বৃত্তান্ত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট