চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

কুয়েত দূতাবাসে প্রবাসীকে হেনস্তা করায় নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা 

অনলাইন ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১০:০০ অপরাহ্ণ

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে সেবা নিতে আসা এক প্রবাসীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে এক নিরাপত্তাকর্মী। এ ঘটনায় শাহীন কবির নামের ওই নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম এ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দূতাবাসের ভেতরে এক বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি শাহীন কবিরকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।’ এদিকে শাহীন কবিরের খারাপ আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ভুক্তভোগী প্রবাসী ওই নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সম্প্রতি কুয়েত দূতাবাসে সেবা নিতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মী শাহীনের দুর্ব্যবহারের শিকার হন আজিজুল নামে এক বাংলাদেশি নাগরিক। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে টনক নড়ে দূতাবাস কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক উইংয়ের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ভুক্তভোগী আজিজুল জানান, তিন বছর ধরে তিনি কুয়েতে কাজ করছেন। তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের পথে থাকায় ২ সেপ্টেম্বর কুয়েত শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যান পাসপোর্ট নবায়নের জন্য। দূতাবাসের দ্বিতীয়তলায় সোনালী ব্যাংকে কাজ শেষে তিনি নিচতলায় গেস্টরুমের কাছে একটি বেসিন থেকে পানি পান করেন। বাইরে বেশ গরম থাকায় পরে তিনি দূতাবাসের ভেতরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মী শাহীন কবির তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মী শাহীন কবির আজিজুলকে বলেন, এখানে থাকা যাবে না, বাইরে যান। এখান থেকে কেন যেতে হবে জানতে চাইলে শাহীন বলেন- একটা উত্তর দেবেন, যাবেন কী যাবেন না? আজিজুল বলেন, কেন যাবো?
এ সময় আজিজুলের হাত থেকে কাগজ টান দিয়ে ছিনিয়ে নেন শাহীন। তাকে আঙুল তুলেও কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় কাগজ টান দিয়ে নিলেন কেন জানতে চাইলে শাহীন তাকে বলেন, আপনাকেসহ বের করবো আমি। এরপর ছবি তোলার অভিযোগে আজিজুলের কাছ থেকে মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেন নিরাপত্তাকর্মী শাহীন। আজিজুল তখন মোবাইল ফোনে ছবি কোথায় জানতে চাইলে তার দিকে তেড়ে আসেন শাহীন। এ সময় অন্যদিকে তাকিয়ে শাহীন বলেন- ‘এরে মারতে মন চাইতেছে’।

এ সময় আজিজুলকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে শাহীন বলেন, ‘ভদ্র মতো বলতেছি এখান থেকে বাইর হইয়া যাও।’ এরপর শাহীন ও দূতাবাসের আরেক কর্মচারী মিলে আজিজুলকে দরজার বাইরে নিয়ে আসে। দরজার বাইরে এসে ‘তুই’ সম্বোধন করে শাহীন বলেন- ‘বেশি কথা বললে থাপড়ামু ধইরা’।

শাহীন বারবার মোবাইলে ছবি তোলার অপরাধের কথা বললেও আজিজুল তা অস্বীকার করে মোবাইল চেক করে দেখাতে বলে। এরপর আজিজুলকে ধরে ভেতরে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে নেওয়া হয়।

ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গত ১০ সেপ্টেম্বর দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।একজন বাংলাদেশি কুয়েত প্রবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মীর বাদানুবাদ ও অসদাচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। দূতাবাস বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কুয়েত প্রবাসীদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ দূতাবাস বর্তমানে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হওয়ায় এখনও সবকিছু গুছিয়ে ওঠা (যেমন- সিসিটিভি স্থাপন) সম্ভব হয়নি। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে কিছুটা সময় লাগছে। সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দূতাবাসের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সবার সহায়তা চাওয়া হয়।

পূর্বকোণ/তাসফিয়া

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট