চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: দিল্লিতে রুশ ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১ এপ্রিল, ২০২২ | ১০:৩৭ অপরাহ্ণ

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান যে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা এবং ব্রিটেনকে উদ্বেগ এবং অস্বস্তিতে ফেলেছে তা স্পষ্ট। ভারতের কাছে সেই অস্বস্তি, উদ্বেগ এবং বিরক্তি প্রকাশ করতেও এখন তারা তেমন রাখঢাক করছে না।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের দিল্লি সফর, সেখানে গিয়ে ভারতের সাথে ব্যবসা বাড়ানো নিয়ে তার প্রস্তাব, আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ৪০ মিনিট ধরে তার বৈঠক – এগুলো যে সেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দেবে তাতে সন্দেহ নেই। মি. লাভরভ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি চিঠি তুলে দিয়েছেন।সেই চিঠিতে কি রয়েছে তা তিনি বলেননি, তবে দিল্লি পৌঁছে যেসব কথা মি. লাভরভ বলেছেন তাতে স্পষ্ট যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ভারতের সাথে ব্যবসা অব্যাহত রাখা তার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সেইসাথে, ইউক্রেন প্রশ্নে ভারতের অবস্থান নিয়ে মস্কোর ‘কৃতজ্ঞতা’ তিনি খোলাখুলিই প্রকাশ করেছেন। মি. লাভরভ বলেন ভারত যে ইউক্রেন প্রশ্নে অন্য অনেকের মত “এক চোখা নীতি” অনুসরণ না করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েছে – তা নিয়ে তিনি কৃতজ্ঞ।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি ভারসাম্য চাই যা টেকসই …আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ যে ভারত এই সমস্যাকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখছে। মি লাভরভ বলেন, ভারতের মত দেশগুলোর সাথে ব্যবসা বাড়াতে রাশিয়া ডলার এবং ইউরো বাদে অন্যান্য মুদ্রায় দাম নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, “ভারত যা কিনতে চায় সেটাই রাশিয়া বিক্রি করতে প্রস্তুত। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত এখন পর্যন্ত রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করতে অস্বীকার করছে। রাশিয়ার নিন্দা করে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা এবং সাধারণ পরিষদে যে কয়টি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে – ভারত তাতে ভোট দেয়নি।সবচেয়ে বড় কথা, ভারত রাশিয়া থেকে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে রুপি দিয়ে রাশিয়ার কাছে থেকে ৩০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত ।

ব্লুমবার্গের এক রিপোর্ট বলছে, রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর আগেই তাদের উরাল গ্রেড তেল প্রতি ব্যারেলের জন্য ভারতকে মাত্র ৩৫ ডলার প্রস্তাব করেছে। রাশিয়া চাইছে এ বছরেরই ভারত ১ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেল কেনার চুক্তি করুক। এই প্রস্তাব নিয়ে দুই সরকারের মধ্যে কথা চলছে।

আর এতেই পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা এবং ব্রিটেন, উদ্বিগ্ন যে ভারতের এই উদ্যোগ অন্য অনেক দেশকে উৎসাহিত করবে এবং রাশিয়ার ওপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা দুর্বল হয়ে পড়বে। আর সে কারণেই হয়তো শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের দিল্লি সফরের আগের দিন রাতেই ভারতে যান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তার আগের দিন (বুধবার) দিল্লিতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দালিপ সিং।

ভারতে রুশ তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ, ক্ষোভ চেপে রাখেননি দালিপ সিং। ভারতের কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও মি. সিং সতর্ক করেছেন যে সব দেশে রাশিয়ার ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করবে – তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে। ভারতকে সতর্ক করে তিনি এমন কথাও বলেছেন, “চীন যদি ভারতকে কখনো অক্রমণ করে তাহলে রাশিয়া সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও মি. জয়শঙ্করকে টেলিফোন করেছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন