যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে গত ২৫ মে সন্ধ্যায় পুলিশের হাঁটু দিয়ে গলা চেপে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার পর পুরো বিশ্ব বিক্ষোভে ফুঁসে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে নিষিদ্ধ হতে চলেছে পুলিশের হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরা। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন-তখন পুলিশি হস্তক্ষেপ করার মতো বিষয়গুলোও।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার (৫ জুন) এক জরুরি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তগুলো পাস হয়েছে। তবে এগুলো কার্যকর হতে একজন বিচারকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এছাড়া, এ দুটি বিষয়সহ পুলিশ বিভাগের একাধিক সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস সিটি কাউন্সিল। এসব সিদ্ধান্ত ক্যালিফোর্নিয়াতেও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাস হওয়া সংস্কার প্রস্তাবে আরও রয়েছে, জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ার গ্যাসসহ অন্য অস্ত্র ব্যবহারের জন্য মিনিয়াপোলিস পুলিশ প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
পুলিশের নথি বিশ্লেষণ করে এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪ বার মানুষের গলা চেপে ধরে অজ্ঞান করা হয়েছে। তবে অনেক পুলিশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি হবে।
মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটিই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত নেতাদের জবাবদিহিতা থেকে শুরু করে কাঠামোগত সংস্কার।
গত ২৫ মে শহরের এক খাবারের দোকানের কর্মচারী ৯১১ নাম্বারে কল করে অভিযোগ করেন, এক ক্রেতা সিগারেট কেনার পর তাকে ২০ ডলারের জাল নোট দিয়েছে। ওই অভিযোগ পাওয়র পর ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে পুলিশের গাড়ি আসার ৭২ মিনিট পর রাস্তায় তিন পুলিশের নিচে চাপা পড়ে থাকা ফ্লয়েড সজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন। তার মধ্যে প্রাণের কোনো সাড়া ছিল না।
এর আগে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের হাঁটুর নিচে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিলেন ফ্লয়েড। আশপাশের লোকজন তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও এতে ওই পুলিশের মন গলেনি।
এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, এই শভিনই ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দিয়ে তাকে রাস্তার সঙ্গে চেপে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্বেতাঙ্গ ওই পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে রেখেছিলেন। ফ্লয়েড জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরও শভিন তার হাঁটু সরাননি। চিকিৎসাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার পরও পুরো এক মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে ধরে রেখেছিলেন তিনি।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরদিন মঙ্গলবার ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে পুলিশ বিভাগ। এরও দুইদিন পর শুক্রবার পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে সমারা বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমনে বিভিন্ন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই হুমকির সমালোচনায় ফেটে পড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
পূর্বকোণ/এএ