চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মার্ট বাংলাদেশ: তরুণরা কতটুকু প্রস্তুত

১২ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে। শিক্ষার হার বাড়ছে দিন দিন। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে অজপাড়াগাঁয়েও। ঘরে বসে অনলাইন প্ল্যাটফরমে ক্লাস করতে পারছে শিক্ষার্থীরা।

করোনার সময় আমরা দেখেছি—টেলিভিশন, ইউটিউব, জুম ইত্যাদি মাধ্যমগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজ গৃহে বসে স্যারদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিল। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় তখন বন্ধ থাকলেও বন্ধ থাকেনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। প্রযুক্তির কল্যাণে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী এক হতে পেরেছে। শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।

আজ প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারছে। অনলাইনে কোর্স করে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য। বাড়িতে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ পাঠিয়ে দিতে পারছে অভিভাবকরা। বিদ্যুৎ বিল দিতে আর লাইনে দাঁড়াতে হয় না, মোবাইল দিয়েই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেটসহ অন্যান্য বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে।

মেসে রান্নাবান্না করে খাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এখন হয়ে উঠেছে আরো সহজ। কুকারে বিদ্যুত্সংযোগ করেই রান্না করা যাচ্ছে বিভিন্ন রেসিপি। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, আমাদের জীবনযাত্রা হয়ে উঠছে আরো সহজ। বিদেশে বসে ছেলে মা-বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারছে। আমার আম্মু আগে স্মার্টফোন তেমন বুঝতেন না। কয়দিন আগে আমাদের এসে বললেন, আমিও একটা ক্যামেরা সেট চালাতে চাই। যে কথা সেই কাজ। ছোট ভাইকে টাকা পাঠিয়ে দিলেন ও বাড়িতে আসার সময় তার জন্য একটা স্মার্টফোন নিয়ে আসতে বললেন। ও বাড়ি আসার সময় আম্মুর জন্য ফোন কিনে আনল। আম্মু খুব খুশি। আমাদের সঙ্গে বাড়িতে বসে এখন ভিডিও কলে কথা বলেন।

বড় আপুও আগে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার সম্পর্কে তেমন জানত না। কিন্তু তার নতুন নতুন জানার আগ্রহ তাকে এগুলো সম্পর্কে জানতে তাড়া করেছে। আমি আর ছোট ভাই আপুকে এগুলো কীভাবে চালাতে হয় তা শিখতে সাহায্য করেছি। ইউটিউবে আপু এখন সেলাই কাজ, নতুন নতুন রেসিপি রান্নাসহ বিভিন্ন জিনিস শিখছে। বাড়িতে টিউশনিও করছে। ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছে। অঙ্ক বা কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে ইউটিউবে চার্জ দিয়ে শিখে নিচ্ছে। ঘরে বসে ইনকাম করতে পারছে।

বর্তমানে তরুণ থেকে বৃদ্ধ প্রায়ই মানুষের হাতে স্মার্টফোন দেখা যায়। তাদের বেশির ভাগেরই এক বা একের অধিক ফেসবুক আইডি রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়জনে স্মার্টফোনের সদ্ব্যবহার করি! ফেসবুকে অযথা সময় ব্যয় করি অনেকে। অন্যকে আক্রমণ করতে সরব হই। অন্যের পোস্ট বা কমেন্টে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে বসি। অশালীন ভাষায় কথা বলি। অন্যের ইনবক্সে প্রবেশ করে বাজে ম্যাসেজ করে থাকে অনেকে। আবার তরুণ-তরুণীদের অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একে অন্যের সঙ্গে চ্যাটিং করে অপচয় করে দিচ্ছে নিজের মূল্যবান সময়। অশালীন ভিডিও কিংবা খারাপ সাইটগুলোতে প্রবেশ করে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে কেউ কেউ। টিকটক বা গ্যাং কালচারে জড়িয়ে তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে; যা কখনো কাম্য নয়। আজকের তরুণরাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তাই তাদের হতে হবে সময় সচেতন, জ্ঞানপিপাসু ও স্মার্ট।

ইচ্ছা থাকলেই অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আপনি শিখতে পারেন নতুন নতুন জিনিস। কমিউনিকেশন স্কিল, ভাষায় দক্ষতা, আইটি জ্ঞান, লেখালেখি, আর্ট জানা, রান্না করতে পারা, ভালোভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো একজন তরুণকে বর্তমান চ্যালেঞ্জের এ সময়ে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে। আমরা চাইলে অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ভাষার জ্ঞান, আইটি কোর্স, আর্ট, রান্না ইত্যাদি শিখে নিত পারি সহজেই।

গুগল, ইউটিব ও ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের স্কিল বা দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিজেকেই চেষ্টা-সাধনা করতে হবে, সময় অপচয় নয়। এখন গুগলে চার্জ দিয়ে ই-পেপার পড়া যাচ্ছে। অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি দেশ-বিদেশের নানান খবরাখবর। নিকটস্থ লাইব্রেরিতে নিজের পছন্দের বইটি না পেলে এখন মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই, রকমারি বা বই কেনার অন্যান্য সাইটগুলোতে সার্চ দিয়ে বইয়ের অর্ডার করা যাচ্ছে। অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। ঘরে বসেই বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটা যাচ্ছে ফোন দিয়ে।

দিন দিন প্রযুক্তি হচ্ছে উন্নত। একটার পর একটা আপডেট এসে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রায় বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। রোবটিক্স ও অন্যান্য প্রযুক্তি এসে সংকোচিত করে দিচ্ছে কর্মসংস্থান। আমাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের। কাজেই তরুণদের উচিৎ নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের রাখতে হবে সদা প্রস্তুত। তবেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো। তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্বকোণ/সাফা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট