চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কালে কি ডায়েট করা যাবে?

২১ জুলাই, ২০২৩ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ

আমায় অনেকেই জিজ্ঞেস করেন ‘সদ্য মা হয়েছি, বেবিকে এক্সক্লুসিভলি ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছি, এদিকে প্রেগন্যান্সিতে যে ওজন বেড়েছিলো তা এখনও কমেনি, আমি কী ডায়েট করতে পারবো’?

এই প্রশ্নটা খুব কমন। এর উত্তরটাও সোজা। আজ লিখব পোস্ট পার্টাম ডায়েট নিয়ে ।

বেবিকে ব্রেস্ট ফিড করালে কী ডায়েট করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে প্রথমে জানতে হবে ডায়েট করা কথাটার অর্থ কী। ডায়েট করা মানে শরীরের ঠিক যতটা পুষ্টি প্রয়োজন ঠিক ততটা খাবার খাওয়া। আমাদের শরীরের পুষ্টির প্রয়োজন জীবনের প্রতিটা ফেজে চেঞ্জ হয়। শৈশবে বা বয়ঃসন্ধিতে আমাদের যা পুষ্টির প্রয়োজন, গর্ভাবস্থায় বা প্রসূতিকালে সেই প্রয়োজন অনেক আলাদা। তাই প্রতিটা সময়ের ডায়েটই আলাদা হয়।

কিন্তু হ্যাঁ ডায়েট করার অর্থ যদি আপনার কাছে উপোষ করা হয় তাহলে সেই কাজটি আপনি এই সময় করতে পারবেন না। উপোষ করে বা আধপেটা খেয়ে থাকা চলবে না এই সময় ওজন কমানোর তাগিদে।

ডেলিভারির পর অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফিট থাকতে ডায়েটের জুড়ি মেলা ভার। কেনো? এর কারণ সিজারিয়ান ডেলিভারি হলে প্রথম ছয় সপ্তাহ এক্সারসাইজের ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু ডেলিভারির পরই যেহেতু বেবি ফিড নেওয়া শুরু করে, মিল্ক প্রোডাকশনের জন্য আমাদের পুষ্টির রিকয়ারমেন্ট বেড়ে যায়। সেই সময় যদি আমরা সঠিক খাবার না খাই, উল্টোপালটা ক্রেভিং হওয়ার এবং আনহেলথি খাবার খেয়ে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

তাহলে আদর্শ পোস্ট পার্টাম ডায়েট হবে কেমন? প্রথমেই বলি, ক্যালোরি কাট ডাউন করা যাবে না। প্রতি একশো মিলি ব্রেস্ট মিল্কে ৬৫ কিলক্যালরি এনার্জি থাকে। এই এনার্জি আপনার শরীর সংগ্রহ করে আপনার নিত্যদিনের খাবার থেকে। আপনি যদি ভাবেন যে আপনি ভাত রুটি ইত্যাদি কার্ব খাওয়া ছেড়ে দেবেন, শরীরের স্টোর্ড ফ্যাটের এনার্জি দিয়ে ব্রেস্ট মিল্ক প্রডিউস হবে, তাহলে বলি- সেটি হবে না। তাই ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনারে কার্ব রাখতে হবে। রুটি,মুড়ি, চিড়ে, ওটস, মাল্টিগ্রেন পাউরুটি, ডালিয়া ইত্যাদি যা কিছু খেতে পারেন ।

ব্রেস্ট মিল্কে থাকে প্রোটিন আর ক্যালসিয়ামও। বায়ো অ্যাভেলেবেল ক্যালসিয়াম সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় দুধ আর দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারে। তাই পোস্ট পার্টাম ডায়েটে দুধজাতীয় খাবার থাকা জরুরি। কিছু শাক সবজি এবং মিলেটেও ক্যালসিয়াম থাকে। কিন্তু সিগনিফিক্যান্ট সোর্স নয় সেগুলো পুওর অবসর্পশনের কারণে ।

পোস্ট পার্টাম ডায়েটে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে ডিম, মাছ, চিকেন। দিনের অন্তত দুটো মিলে এনিম্যাল প্রোটিন আর একটি মিলে প্ল্যান্ট প্রোটিন যেমন ডালজাতীয় খাবার রাখতে পারলে ভালো।

ওয়েট লস করার কথা ভাবলে আমরা ফ্যাটকে ব্রাত্য করে দিই। কিন্তু জীবনের প্রথম ছয় মাস বেবির জন্য ফ্যাট অত্যন্ত জরুরি। আজকাল দেখবেন ফর্মূলা ফুডে ডিএইচএ-এর কথা উল্লেখ করা হয় খুব। এই ডিএইচএ কিন্তু ফ্যাটেরই একটি উপাদান। এছাড়া ফ্যাট সলিউবল ভিটামিনগুলির অবসর্পশনও সমস্যাজনক হয় যদি আপনি সম্পূর্ণ ফ্যাট বাদ দিয়ে দেন ডায়েট থেকে।

মনে রাখবেন আপনার ডায়েট আপনার ব্রেস্ট মিল্কে রিফ্লেক্ট করে। জীবনের প্রথম ছয় মাস বেবির সমস্ত প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন বেবি আপনার ডায়েট থেকেই পাবে। তাই ফল শাকসব্জিও রাখুন যথাযথভাবে ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পূরণ করার জন্য।

অ্যাপেটাইট অনুযায়ী খান। সহজপাচ্য খাবার খান। প্রচুর জল খান। ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে ট্রাবল দেবে এমন খাবার অ্যাভয়েড করুন। ঘরে তৈরি খাবার খান। প্যাকেজড খাবার এড়িয়ে চলুন। আনহাইজেনিক ভাজাভুজি অ্যাভয়েড করুন।

এইসময় মিল রিপ্লেসমেন্ট ট্রাই করবেন না। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ট্রাই করবেন না। ইউটিউব দেখে দুম করে যে কোনো ওয়েট লস প্ল্যান শুরু করবেন না। নিজে নিজে এক্সপার্টের পরামর্শ ছাড়া ওয়ার্ক আউট শুরু করবেন না। ডক্টর ক্লিয়ারেন্স দিলে এবং ট্রেনারের গাইডেন্সে ওয়ার্ক আউট করতে পারেন।

অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে কোন খাবার খেলে মিল্ক প্রডাকশন বাড়ে। ওটস, সাবু, মেথি, গার্লিক, দুধ, ফ্লেক্সসিড ইত্যাদিকে গ্যালাক্টোগগস বলে অর্থাৎ যারা মিল্ক প্রোডাকশন বাড়ায় বলে মনে করা হয়। এগুলোর সায়েন্টিফিক এভিডেন্স কম কিন্তু অনেকে উপকার পেয়েছেন। চাইলে এগুলো ডায়েটে রাখতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন বেবি সঠিক ল্যাচ করলে আপনিই মিল্ক প্রোডাকশন হবে যদি আপনি খাওয়া দাওয়া না কাট ডাউন করেন।

যাই হোক, হ্যাপি পেরেন্টিং।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট