চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাম্পস হলে যা করবেন

অনলাইন ডেস্ক

২০ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ

দেশে মাম্পসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। মানবদেহের উভয় কানের নিচে, চোয়ালের পেছনে দুটি লালাগ্রন্থির নাম প্যারোটিড গ্রন্থি।

এই প্যারোটিড গ্রন্থির মাম্পস ভাইরাস আক্রান্তজনিত প্রদাহকে বলা হয় ‘মাম্পস’। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। এর ফলে জ্বর, মাথাব্যথার সঙ্গে গলা ও কানের নিচে দুই পাশে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়, খাবার গিলতে ব্যথা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এ থেকে পরে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত শিশুদের বেশি মাম্পসে আক্রান্ত হতে দেখা গেলেও বড়দের যে মাম্পস হয় না তা নয়। সাধারণত দু’পাশের গ্রন্থিই আক্রান্ত হয়।

এ ছাড়া জিহ্বার নিচের বা সাবলিংগুয়াল, চোয়ালের নিচের বা সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থিও আক্রান্ত হতে পারে। যদি টিকা না দেওয়া থাকে বা আগে মাম্পস না হয়ে থাকে, তাহলে প্রায় প্রত্যেক শিশু মাম্পসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে একবার মাম্পসের ভাইরাস সংক্রমিত হলে বা টিকা দেওয়া থাকলে সারা জীবনের মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। মাম্পসের ভাইরাস সাধারণত শ্বাসনালি পথে আক্রমণ করে। ১৪ থেকে ২১ দিন পর শরীরে লক্ষণ দেখা দেয়। মাম্পস হওয়ার দুদিন আগ থেকে এবং লক্ষণ প্রকাশের পাঁচ দিন পর্যন্ত মাম্পস ছড়াতে থাকে। এজন্যই শিশুদের মাম্পস হলে প্রথম পাঁচ দিন স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়, যাতে সে অন্য শিশুদের মধ্যে মাম্পস ছড়াতে না পারে।

উপসর্গ ও লক্ষণ:
১) প্রথমে জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা এবং কানের নিচে ব্যথা শুরু হয়। পরে এক দিকের প্যারোটিড গ্রন্থি ব্যথাসহ ফুলে ওঠে। পরে অন্য গ্রন্থিও ফুলে ওঠে। গ্রন্থির নিঃসরণ মুখের যেখানে এসে মেলে, সে স্থানও লাল হয়ে ফুলে যায়।
২) জ্বর ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কয়েক দিন থাকতে পারে।
৩) এ সময় রোগী বেশি দুর্বলতা বোধ করে, অস্বস্তি অনুভব করে, বড় হা করে মুখ খুলতে পারে না। মুখে দুর্গন্ধ হয়, চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ঢোক গিলতে ও খেতে কষ্ট হয়। দু-এক সপ্তাহ লাগে সাধারণত গ্রন্থি ফোলা কমতে।

জটিলতা:
১) মস্তিষ্কে প্রদাহ: মস্তিষ্কে প্রদাহের অন্যতম কারণ হলো মাম্পস। মাম্পস ম্যানিনজাইটিক বা মাম্পস ইনকেফালাইস্টিসে শিশুর জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা এবং বমি উপসর্গ দেখা দেয়।
২) মাম্পস থেকে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বা প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়। তখন প্রচণ্ড পেটের ব্যথা হয়।
৩) বড় শিশুদের এবং কিশোর-তরুণদের মাম্পস হলে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্ডকোষের প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত এক পাশের অন্ডকোষ ফুলে ওঠে ও লাল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জ্বর আসে। আবার মেয়েদের মাম্পস হলে স্তনগ্রন্থিতে ব্যথা ও প্রদাহ হতে পারে।
৪) গর্ভবতী নারীর মাম্পস হলে এ থেকে গর্ভপাত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
৫) মাম্পস থেকে থাইরয়েড প্রদাহও হতে পারে।
৬) শ্রবণশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা: সাধারণত মাম্পস নিজে নিজেই সেরে যায়। এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। জ্বর ও ব্যথার জন্য ওষুধ দিতে হবে। তবে জ্বর ও ব্যথার জন্য সিরাপ প্যারাসিটামল না দিয়ে আইবুপ্রোফেন দিতে হবে। ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়া মস্তিষ্কে প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস, শ্রবণশক্তিতে সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হলে নির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অন্ডকোষের প্রদাহ হলে অন্ডকোষের নিচে একটা গজ বা তুলার গলা দিয়ে সাপোর্ট দিতে হবে এবং স্টেরয়েডের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ছয়-সাত দিন লাগে মাম্পস সারতে।

প্রতিরোধ: মাম্পসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুকে ১১ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে এমএমআর ভ্যাকসিন দিন। তাহলে সে সারাজীবন মাম্পস থেকে মুক্ত থাকবে। আর মুক্ত থাকবে হাম ও রুবেলা থেকেও।

করণীয়:
১) তরল বা আধা তরল নরম খাবার খেতে হবে। হালকা গরম লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করা ভালো। মাম্পস হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। তবে মিষ্টি পানীয় বা জুস ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। কারণ এগুলো লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে ব্যথা বাড়াবে।
২) জ্বরের জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করতে হবে ও মাথায় পানি দিতে হবে।
৩) রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা উচিত।
৪) রোগীর ব্যবহৃত চামচ, গ্লাস, পেয়ালা বা প্লেট এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অন্য কারও ব্যবহার করা নিষেধ।
৫) এ রোগ ছোঁয়াচে বলে এ সময় শিশুকে খুব কাছ থেকে আদর করা বা চুমু দেওয়া ঠিক নয়। এতে রোগ ছড়াবে।
৬) রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৭) কোনোরকম ঝাড়ফুঁক করাবেন না।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন: আক্রান্ত অবস্থায় রোগীর প্রচণ্ড জ্বর, ঘন ঘন বমি ও ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে, তলপেটে ব্যথা করলে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে অন্ডকোষে ব্যথা অনুভব করলে তা মাম্পসের জটিলতা নির্দেশ করে। এসব জটিলতার ক্ষেত্রে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে অথবা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরামর্শদাতা: ডা. মনজুর হোসেন, সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল; সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট