দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা বা ই-কমার্স। গত বছরের শুরুর দিক থেকে, করোনা মহামারির ফলে মানুষের মাঝে সম্ভাবনাময় এই খাতের গ্রহণযোগ্যতা কয়েক গুণ বেড়েছে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের প্রয়াসে ক্রমেই দেশে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্মের পরিমাণ বাড়ছে। তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে আনুমানিক আড়াই হাজার ই-কমার্স সাইট রয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে ব্যবসা করছেন প্রায় ২ লাখ উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনকারী, বিক্রেতা ও ডেলিভারিম্যানসহ লাখ লাখ মানুষ এখন ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। দেশের অর্থনীতিতেও এই সম্ভাবনাময় খাতকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা। জার্মান পরিসংখ্যান পোর্টাল স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, চলতি বছরে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের আকার হবে প্রায় ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা টাকার হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ এই খাতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
উল্লেখিত পরিসংখ্যান থেকে এই বিষয়টি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও নির্ভরশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠা এই ই-কমার্সকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে দেশের অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন। তবে, এক্ষেত্রে খাত সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদেরকে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
ই-কমার্স খাতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলেন ক্রেতারা। ই-কমার্স খাতের বিকাশে ক্রেতাদেরকেও সচেতন থাকতে হবে। যেকোনো উন্নয়নশীল খাতেই নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, এসব মোকাবেলায় ক্রেতাদেরকে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।
কোনো ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনার পূর্বে ক্রেতাদেরকে সেই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিৎ। পাশাপাশি, সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য ডেলিভারি নীতি, পেমেন্ট ব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। ক্রেতারা যে পণ্য কিনতে যাচ্ছেন তার উপাদান, ব্যবহার নীতি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিৎ। এতে ক্রেতার নিজের যেমন চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেতে সুবিধা হবে এবং প্রতারিত হবার শঙ্কা কমবে, একইভাবে উদ্যোক্তারাও সঠিক উপায়ে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে পণ্য বিক্রয়ে উৎসাহিত হবে। এটি ই-কমার্স খাতের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিশ্বস্ত একটি ই-কমার্স সাইটকে বেছে নিতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বহু বিশ্বস্ত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে সহজেই।
ক্রেতাদেরকে অবশ্যই আকাসকুসুম অফার আর ছাড়ের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়া যাবে না। অবিশ্বাস্য ছাড় দেখলে তা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। এই ধরণের ছাড়ে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এছাড়াও, এসব ছাড় ই-কমার্সের পরিবেশকেও ভারসাম্যহীন করে তোলে। অল্প সময়ে অধিক ক্রেতা আকৃষ্ট করতে যেসব প্রতিষ্ঠান এমন অবিশ্বাস্য অফার দেয়, একটা সময়ে এসে তাদের ব্যবসা’ই হুমকির মুখে পড়ে যায়। বড় অঙ্কের ক্যাশব্যাক, অফারের নামে ক্রেতাকে সময়মতো পণ্য না দেয়া ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অর্থ না দেয়াসহ বিভিন্ন ধরণের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয় এ ধরণের ব্যবস্থায়। সাম্প্রতিক সময়ের ই-কমার্সের ব্যপারে যেসব সমালোচনা দেখা যায়, এসবের পিছনে এই বিষয়টিকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ই-কমার্স সাইটের রিটার্ন পলিসি ও ক্যাশব্যাক নিয়েও বিস্তারিত জেনে নেয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার এ সম্পর্কে নীতিমালা প্রকাশ করেছে। ক্রেতারা এসব বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পণ্য ক্রয় করলে নিজেদের যেমন প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে, তেমনি এর ফলে উদ্যোক্তারাও তখন তাদের পলিসি উন্নত করার বিষয়ে আরও উদ্যোগী হয়ে উঠবেন।
নিরাপদে অনলাইনে পণ্য ক্রয়ে ক্রেতারা বিশ্বস্ত মার্কেটপ্লেস হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারেন। বিশ্বের স্বনামধন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আলিবাবার অঙ্গসংগঠন দারাজ, আসছে নভেম্বরেই বাংলাদেশে চতুর্থবারের মত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পেইন ১১.১১ শুরু করতে যাচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদে অনলাইন শপিং করতে ক্রেতারা এখনই তাদের উইশ-লিস্ট তৈরি করে রাখতে পারেন। এছাড়াও, দেশে অনেক বিশ্বস্ত ও স্বনামধন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেখান থেকে ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। সুষ্ঠুধারায় ই-কমার্স খাতকে আরও বিকশিত করতে ক্রেতাদের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পূর্বকোণ/এএইচ