চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজার আগেই চড়ছে বাজার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

চাল ও তেলের দাম কয়েক মাস ধরেই অস্থির। ক্ষণে ক্ষণেই উত্থান-পতন। তার মধ্যে আসছে রমজান মাস। রমজানকে সামনে রেখে রোজার অত্যাবশকীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল তিন-চার বছরের। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ইতিমধ্যেই রোজার প্রধান অনুষঙ্গ ডাল, চিনি, চিড়া ও ছোলার দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার ছাবেরী বলেন, ‘চাল ও তেলের দাম উর্ধ্বগতিতে সরকারের ভূমিকা ছিল গৌণ। বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আসন্ন রোজায় অব্যবস্থাপনা আরও বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে’। রমজানের বাকি আরও এক মাস ২০ দিন বাকি। প্রতি বছরের মতো এবারও পাইকারি বাজারে দাম বাড়ানোর প্রবণতা চলে আসছে। বিশেষ করে রোজার প্রধান অনুষঙ্গ ভোগ্যপণ্যের দাম। গতকাল খাতুনগঞ্জের একাধিক আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর প্রচুর পরিমাণে ছোলা আমদানি করা হয়েছে। স্থানীয় আমদানিকারক ছাড়াও দেশের কয়েকটি শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ছোলা আমদানি করছে। এসব ছোলা ইতোমধ্যেই পাইকারি মোকাম চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন গুদামে যাচ্ছে। আরও বিপুল পরিমাণ পণ্য আসার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আগের মতো এবারও রোজার মাস-দেড় মাস আগ থেকেই বাজার চড়তে শুরু করেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘রমজানের নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না। দামও বাড়বে না। করোনো পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর আমদানি প্রক্রিয়া প্রায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। তবে ডাল, চিড়া ও চিনিরদাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। এতে কোনো কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।’ তিনি বলেন, রোজার ভোগ্যপণ্য বেচাকেনা শুরু হয়েছে। শবে বরাতের পর থেকে পাইকারি বাজারে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে। রোজার প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে।

পাইকারি বাজারে, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২৪শ টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৬৪ টাকা। মাসখানেক আগে তা ১৯৫০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মধ্যমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৯৫০ থেকে দুই হাজার টাকা। কেজিপ্রতি প্রায় ৫৪ টাকা। খুচরা বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০-৮০ টাকা দরে।

চিনির দাম দিনে দিনে বাড়ছে। একদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৩৪০ টাকা দরে। কেজিপ্রতি ৬৩ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭০ টাকা দরে। মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছিল ২০৫০ টাকায়। তিন-চার মাস আগে ১৮৫০-১৮৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

তবে চালের মতো হু হু করে বাড়ছে চিড়ার দাম। গতকাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৩৭শ টাকা দরে। মাসখানেক আগেও তা দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সব ধরনের ডালের দামও বাড়ছে। রোজায় মটর, খেসারি ডালের ব্যবহার বেশি থাকে। মটর ডাল এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩২-৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেসারি ৬০-৬৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খুচরা বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ ও ১২০ টাকা। খেসারি ৮০-৮৫ টাকা, মটর ডাল ৪৬ টাকা দরে।

চাল ও ভোজ্যতেলের দাম কয়েক মাস ধরে অস্থির। সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ৬ মাস ধরে লাগামহীন। পাম অয়েল ২৩শ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮শ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর সয়াবিন তেল ২৭শ টাকা থেকে ৪২শ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছিল। উত্থান-পতনে গতকাল পাম তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩৭২০ টাকা দরে। গত সপ্তাহেও তা ৩৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাসখানেক আগে ৩৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সয়াবিনের দামও একই অবস্থা। ২২শ টাকা থেকে বেড়ে ৪২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০৫০ টাকা দরে। আন্তর্জাতিক বাজার পণ্যের দাম উঠা-নামার কারণে দেশীয় বাজারে প্রভাব রয়েছে বলে জানান আমদানিকারকেরা। খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১২ টাকা দরে। পলিব্যাগে এক লিটারের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১৩৫ টাকা।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রোজার জন্য পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। কোনো সংকট হবে না। দামও বাড়বে না।

চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরে লাগামহীন। চাল আমদানির পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২২শ থেকে ২২৫০ টাকা। মাসখানেক আগে তা ১৮শ টাকা বিক্রি হয়েছিল। মোটা সিদ্ধ ১৮শ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নূরজাহান সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৩শ টাকায়। বেতি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৭-২৮শ টাকা। বেতি-২৯ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৫-২৬শ টাকা দরে।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘আমদানি করা চাল বাজারের বদলে মোকামে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে নতুন মোড়কে বাজারে আসছে। এভাবে কৌশলে দাম বাড়াচ্ছে মিল মালিক ও আমদানিকারকেরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট