চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্যবহার কমাতে যা করতে পারি আমি-আপনি

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১১ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্লাস্টিকের জীবনচক্র ভূগর্ভে শুরু হয়, যেখানে ভূ-পৃষ্ঠের গভীর নিচ থেকে তেল এবং গ্যাস বের করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিকে তারপরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পানি আর শক্তি ব্যবহার করে পরিমার্জিত করা হয়। এর অনেকটা অংশ উপজাত হিসেবে ছোট ছোট দানায় রূপান্তরিত হয়, যেগুলো অনায়াসে গলিয়ে পানির বোতল, প্যাকেজিং, জামাকাপড় ও আবর্জনা ইত্যাদির ব্যাগের মতো জিনিসগুলো তৈরি হয়। এটাই প্লাস্টিক। এক্ষেত্রে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার। এ জিনিসগুলি আমরা একবার ব্যবহার করি এবং তারপর ফেলে দিই। মুশকিল হলো, এই প্লাস্টিক একবার প্রকৃতিতে নিক্ষিপ্ত হলে ভেঙে যায় না, বা প্রকৃতিতে মেশেনা। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই মাত্র ৯% প্লাস্টিক প্রকৃতপক্ষে পুনর্ব্যবহৃত হয়।

পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থাগুলোর মতে, এই যদি হয় অবস্থা, তবে নিশ্চিতভাবেই বাদবাকি বিশ্বের অবস্থা আরো খারাপই হবে। আমরা সহজে বুঝতে চাইনা যে, এটি শুধুমাত্র একটি দূষণ সমস্যা নয়। এটি একটি জলবায়ু সমস্যা। এবং যখন আমরা পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করি, ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে।

 

২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, প্লাস্টিক শিল্প বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী শিল্প। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি হলো কয়লা। প্লাস্টিক বুঝি তার স্থান দখল করতে বসেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সহসাই এর ব্যবহারটি কমছে না। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সমানে দূষণও ঘটে যাবে। এর উৎপাদন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত, প্লাস্টিক তার জীবনচক্রের প্রতিটি পর্যায়ে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে।
এখানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের সুবিধা নিতে গিয়ে আমরা কীভাবে জলবায়ুর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি তারা এর প্রভাব কমাতে আমরা কী করতে পারি তারও কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রভাব পরিমাপ করা

‘বিয়ন্ড প্লাস্টিক’ নামের একটি সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, প্লাস্টিক শিল্প প্রতি বছর কমপক্ষে ২৩২ মিলিয়ন টন গ্রহ-উষ্ণায়ন গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। তাদের রিপোর্টের লেখকদের মতে, এটি ২০২০ সালে ১১৬টি কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র’র গড় গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমনের সমান পরিমাণ। ইপিএ অনুসারে এটি প্রায় ৫০ মিলিয়ন গাড়ির বার্ষিক গড় গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমনের সমান।

সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা আরো একটি মারাত্মক সমস্যার কথা বলেছেন, যদি দেখেন যে জলবায়ু দূষণের ৯০% এরও বেশি প্লাস্টিক শিল্পের দ্বারা নির্গত গ্যাস’র দ্বারা হচ্ছে, তবে ধরে নিতে পারেন, এর উৎস নিম্ন-আয়ের স¤প্রদায়গুলো। সহজলভ্যতার নিরিখে বলা যায় এ শ্রেণি প্লাস্টিক সহসাই ছাড়বে না। তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উৎসেই এর উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। এছাড়া এ গ্রহটিকে বাঁচানো যাবে না।

 

আমি-আপনি এ ব্যাপারে কী করতে পারি
‘পুনর্ব্যবহার’ এই বিশাল সমস্যার সমাধান নয়, তবুও আমাদের এটা (পুনর্ব্যবহার) করে যাওয়া উচিত। প্লাস্টিকের আইটেমগুলির নীচে নম্বর সিস্টেমটি কোনোও গ্যারান্টি আসলে বহন করে না। প্লাস্টিকের অনেক বোতল ইত্যাদিতে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে আমাদের ধারণা দেয়া হয়- কোনটি একবার ব্যবহারযোগ্য বা কোনটি পুনব্যবহারযোগ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ‘সাময়িক ব্যবস্থা’, মোটেই কোনোও স্থায়ী সমাধান নয়। এই কারণেই তারা বলছেন, প্রথম স্থানে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর উপর ফোকাস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ খাতে আমাদের লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন,

বোতলজাত পানিকে না বলুন : আপনার জীবন থেকে প্লাস্টিকের এই প্রধান উৎসটি ছেঁটে ফেলুন।

পুনঃব্যবহারযোগ্য মুদি ব্যাগ : দোকান আপনার পণ্যাদির জন্য যে প্লাস্টিকের উৎপাদিত ব্যাগ সরবরাহ করে তা ব্যবহার না করে আপনি সহজেই এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। আপনি যদি সরাসরি কার্টে পণ্য রাখতে অস্বস্তি বোধ করেন, চেকআউটে না যাওয়া পর্যন্ত এটি বহন করার জন্য একটি বিশেষ ব্যাগ রাখুন। এমন কোনও নিয়ম নেই যা বলে যে আপনাকে আপনার ফল এবং সবজিগুলিকে দোকানে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখতে হবে।

প্যাকেজিং নিজস্ব পছন্দে করার চেষ্টা করুন : দোকানে আপনি যদি একই পণ্যের দুটি সংস্করণ দেখে থাকেন- যার একটি কাগজ বা কার্ডবোর্ডে প্যাকেজ করা এবং অন্যটি প্লাস্টিকের, তবে পছন্দটি হবে স্পষ্ট। অর্থাৎ যথাসম্ভব প্লাস্টিক-মুক্ত বিকল্পগুলির সন্ধান করুন।

প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে একটু বেশি পরিমাণে কিনুন : বাদাম, চাল এবং মটরশুঁটি এমন অনেক জিনিসই প্লাস্টিকের সিলড ব্যাগে করে আসে, আবার অন্যভাবেও (খোলা- চট বা বোর্ডের বাক্সে) আসে। চেষ্টা করুন ‘খোলা’ প্যাকেজ থেকে একটু বেশি বেশি করে প্রয়োজনীয় পণ্যাদি কিনতে। ফলে ঘন ঘন আর প্লাস্টিক ঘরে আসার সুযোগ পাবেনা।

প্লাস্টিকের কাটলারি প্রত্যাখ্যান করুন : ঘরে বা রেষ্টুরেন্টে প্লাস্টিক কাটলারি (ছুরি-কাাঁটা-চামচ ইত্যাদি) ব্যবহারে বিরত থাকুন। বাইরে থেকে খাবারাদি আনতে হলে যথাসম্ভব নিজস্ব পাত্রাদি (অবশ্যি প্লাস্টিকের নয়) ব্যবহার করুন।

আরও যা করা যায়

শেষ কথা হলো- জীবাশ্ম জ্বলানি এবং প্লাস্টিক শিল্পের জলবায়ু-প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিশ্বে বড় আকারের পরিবর্তন প্রয়োজন। সেজন্যে প্রয়োজনে সরকারগুলো স্থানীয় অধ্যাদেশ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক কমানো শুরু করতে পারে। অনেক দেশেই অবশ্য এমন অধ্যাদেশ’র ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে ব্যাপারটা এখনো ঠিক আশানুরূপ গতি পায়নি।
তবে পাশাপাশি ভোক্তা এবং ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলি অব্যাহতভাবে বড় বড় কোম্পানিগুলোকে পণ্যাদির প্লাস্টিকে মোড়কিকরণের বিকল্প অনুসন্ধানে জোর আওয়াজ তুলতে পারে।

আমাদের এ গ্রহটি জলবায়ু পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ কোথাও আজ জ্বলছে তো, কোথাওবা প্লাবিত হচ্ছে; আবার কোথাওবা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা আজ অনস্বীকার্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর এই প্লাস্টিক। এটি আমাদের অন্যান্য উপায়েও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই আমরা যদি একটি একক বৈশ্বিক সমাজ হিসেবে এই প্লাস্টিকের উৎপাদন কমানোর কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পারব। [তথ্যসূত্র : সিএনএন]

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট