চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হুমায়ূন আহমেদ : চলে যাওয়ার ৯ বছর আজ

অনলাইন ডেস্ক

১৯ জুলাই, ২০২১ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আজ (১৯ জুলাই) নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হ‌ুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের না-ফেরার দেশে চলে যাওয়ার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার।
২০১২ সালের এই দিনে হিমু-মিসির আলি-রূপার মতো অসংখ্য জনপ্রিয় চরিত্র তৈরির এই কারিগর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবারও মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে তেমন কোনও আনুষ্ঠানিকতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সীমিত আকারে পরিবার ও ভক্তরা দিনটিকে স্মরণ করবে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে, দেশজুড়ে। জানা গেছে, সীমিত আকারে দোয়ার আয়োজন থাকছে হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান নেত্রকোনা এবং লেখকের সবচেয়ে প্রিয় স্থান গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকছে তার নাটক, চলচ্চিত্র, গান ও সাহিত্য নিয়ে দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
২০১২ সালের এই দিনে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। দেশে নিয়ে আসার পর তার মরদেহ সমাহিত করা হয় গাজীপুরে নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। প্রতিবছর হুমায়ূনের মৃত্যুদিনে তার প্রিয় নুহাশপল্লীতে ছুটে আসতেন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ ছাড়াও সেখানে এতিম ও অনাথ শিশুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হতো। তবে করোনাকালীন বিধিনিষেধ মানতে এ বছর এসব অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছেন নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম।
অন্যান্য বছরে সহস্রাধিক মানুষকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হতো। এবার করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠান হবে না। খাওয়ানোর অনুষ্ঠানে যে টাকা খরচ হতো, সে পরিমাণ অর্থ এতিম ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তবে আজ সকালে নুহাশপল্লীতে উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।
শিল্প-সাহিত্যের বেশিরভাগ শাখায় কীর্তি রেখে গেছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ তাকে এনে দেয় পরিচিতি। এরপর লিখেছেন তিন শতাধিক গ্রন্থ। যার প্রায় সবই সাড়া ফেলেছে দেশ-বিদেশের পাঠক মহলে।
হ‌ুমায়ূন আহমেদ একদিকে সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন পাঠককে, অন্যদিকে নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, চলচ্চিত্র ও গান। তার হাত ধরেই তারকার সম্মান পেয়েছেন এ দেশের অনেক শিল্পী। তার সৃষ্টিতে উঠে এসেছে নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, বৃষ্টিসহ বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির ব্যঞ্জনা।
টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক রচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে হ‌ুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। এটি ২০০৬ সালে অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া এটি প্রদর্শিত হয় কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ পরিচালনা করেন তিনি। তার সব চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ গান রচনা করেছেন তিনি নিজেই।
২০১২ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কুতুবপুরে জন্মেছিলেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। হ‌ুমায়ূনের মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তার দুই ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব।
এদিকে হ‌ুমায়ূন আহমেদের সূত্র ধরে এর মধ্যে নির্মাণে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তার যোগ্য উত্তরসূরি নুহাশ হ‌ুমায়ূন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট