গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অ্যামনেস্টি চলাকালীন সময়ে আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট, দেশের ইমিগ্রেশন, আমের সেন্টার, টাইপিং অফিসগুলোয় প্রবাসীদের ভিড় লেগে ছিল। বিশেষ করে শেষদিকে অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাসজুড়ে সাধারণ ক্ষমা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিবাসীদের পদচারণা ছিল বেশি।
এ সময়কালে আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস মোট ই-পাসপোর্ট ইস্যু করেছে ১৩,৯৩১টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৫৮১৫টি, ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে ৮১৭টি এবং এক বছরের জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করেছে ২০০৩ টি বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং এর প্রধান, কাউন্সিলর (ভিসা ও পাসপোর্ট) সাইফুল ইসলাম।
আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, এবারের সাধারণ ক্ষমায় আমাদের ধারণা ৫০ হাজার লোক রেগুলার হয়েছেন। পাশাপাশি আবুধাবি ও দুবাই থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী নিয়মিত হয়ে ট্রাভেল পারমিট বা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। যাদের ওপর কোন ব্যান লাগেনি।
দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে কর্মরত প্রথম সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, গত চার মাসে দুবাই কনস্যুলেট ৪৮৪০টি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে। এ সময় ই-পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে ৪৭,৬০৯ টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৭১৭৫ টি, পাসপোর্ট সেবা দেয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার প্রবাসীকে। তবে সাধারণ ক্ষমার আওতায় কতজন প্রবাসী দুবাই কনস্যুলেটের অধীনে নিয়মিত হয়েছেন সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অদ্যাবধি স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তবে আবুধাবির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস এন্ড পোর্ট সিকিউরিটি (ICP) র মহাপরিচালক সুহেইল আল খাইলি জানিয়েছেন, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৮% তাদের অবস্থান বৈধ করে আমিরাতে থেকে যাচ্ছেন এবং ১২% তাদের অবস্থান বৈধ করে কোন রকম ব্যান ছাড়াই দেশে ফিরে গেছেন।
ক্ষমা অমান্যকারীদের ব্যাপারে কঠোর হতে যাচ্ছে আমিরাত কর্তৃপক্ষঃ
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন বলেছেন, চলতি জানুয়ারি থেকে সাধারণ ক্ষমা লংঘনকারী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে যাচ্ছেন আমিরাত কর্তৃপক্ষ। এ সময় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চলতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। আমিরাত কর্তৃপক্ষও আগে থেকে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।
১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য পরিচালিত সাধারণ ক্ষমার সুযোগ না নিয়ে যারা অবৈধ রয়ে গেছেন, বিনা জেল-জরিমানায় বৈধ হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেননি ১ জানুয়ারি থেকে তাদের উপর সাধারণ ক্ষমার পূর্বের আরোপিত সকল জেল জরিমানা আগের মতই কার্যকর হবে। তার ওপর বাড়তি প্রতিদিনের ওভারস্টের জন্য অভিবাসী নাগরিককে দৈনিক ৫০ দিরহাম করে জরিমানা গুনতে হবে।
আবুধাবির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস এন্ড পোর্ট সিকিউরিটি (ICP) এবং দুবাইর জেনারেল ডাইরেক্টরেট অব রেসিডেন্সি অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স (GDRFA) উভয় কর্তৃপক্ষ এই মর্মে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে ৩১ ডিসেম্বরের পর যারা অবৈধ অধিবাসীদেরকে কাজ দেবে তাদেরকে ১ লক্ষ দিরহাম থেকে ১ মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
GDRFA’র মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আহমদ মাররি বলেছেন, আমরা তাদের (অবৈধদের) জীবন সহজ করতে চেয়েছি যাতে তারা তাদের অবস্থানকে বৈধ করে নতুন জীবন শুরু করতে পারেন কিন্তু যারা তা করেননি। তারা এজন্য ভবিষ্যতে নিজেদেরকে দুষবেন। আমিরাত কর্তৃপক্ষ আগামী দিনগুলোয় শ্রমঘন প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায়, নির্মাণ সাইটে, শ্রমিক আবাসনে, জনসমাগমস্থলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশিদের ভিসা অবমুক্তকরণে খানিক আশার আলোঃ
২০১২ সালের মধ্য অগাস্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের সব ধরনের কর্মী ভিসা বন্ধ রয়েছে। এটি যেহেতু দেশের বাইরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার এবং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ তাই সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজারটিতে ভিসা অবমুক্তকরণে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে আমিরাতে প্রদর্শিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রবাসী কর্মীদের অংশগ্রহণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিছুটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও আবুধাবি দূতাবাসের শ্রমিক কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন মনে করেন, দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে এসব ইস্যুর সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি তিনি প্রবাসীদের স্বাগতিক দেশের আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার উপরও গুরুত্ব দেন। তিনি আরো বলেন, আমরা সবগুলো প্লাটফর্মে ভিসা ইস্যু নিয়ে কথা বলছি, আমরা আশাবাদী।
গত ২৩ ডিসেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কমিউনিটি ইউএই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমনই একটি সবুজ সংকেত দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএই’র রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আবদুল্লাহ খাশিফ আল হামুদি। এতে আব্দুল্লাহ হামুদি জোর দিয়ে বলেন, কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ হয়নি। আগামী জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের সাথে আমিরাতের ভিসা জটিলতা দূর হবে। বাংলাদেশসহ অসংখ্য দেশের জন্য আমিরাতে ভিসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যেখানে আমিরাতে বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র সাত থেকে আট লাখের মধ্যে ছিল, সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
পূর্বকোণ/ইব