চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

অর্ধলক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈধ হলেন আরব আমিরাতে

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, ইউএই প্রতিনিধি

১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

গোড়াতে বিগত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দু মাসের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বিনা জেল জরিমানায় দেশত্যাগ কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের জন্য ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ পরবর্তীতে আরো দুমাস বাড়ানোর পর তা গতকাল ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়।

 

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও ওয়াকিবহাল মহলের মতে আমিরাতে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই অবৈধ অবস্থানকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। সেদিক থেকে এবারের অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া না গেলেও কমপক্ষে অর্ধ লক্ষ বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে এদেশে তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

কেন এই সাধারণ ক্ষমা : পেট্রো প্রাচুর্যে ভরপুর আমিরাত শাহীর মোট এক কোটির মত জনগোষ্ঠীর তিন চতুর্থাংশই অভিবাসী নাগরিক। আমিরাতের সবচেয়ে শ্রমঘন জনপদ দুবাই ও উত্তর আমিরাত এবং দেশের মোট ভূখণ্ডের ৮৭ শতাংশ এলাকাজুড়ে থাকা রাজধানী আবুধাবীর এমন কোন জনপদ নেই যেখানে আরব্য গৃহকর্মী থেকে শুরু করে পেশাজীবীদের মধ্যে গরিষ্ঠ সংখ্যক অভিবাসীদের পদচারণা নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে দেশের উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ, অধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জন। অবৈধ অভিবাসীদেরকে আইন শৃঙ্খলার বজ্র আঁটুনির মধ্যে আনা চ্যালেঞ্জের।

 

এরই লক্ষ্যে ইতিপূর্বে ২০০৩, ২০০৭, ২০১৩, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ ইংরেজিতে অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান নিয়মিত করণে সাধারণ ক্ষমাগুলো ঘোষিত হয়। বিভিন্ন কারণে অনিয়মিত/ আনডকুমেন্টেড/ অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের যাদের ভিসার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে তারা এই সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পান। এবারে সাধারণ ক্ষমার চলাকালে কেবল দুবাই ও উত্তর আমিরাতে তার সুযোগ গ্রহণ করেন ২,৩৬,০০০ জন। এর মধ্যে ৫৫,২০০টি ছিল আউটপাশ। আবুধাবী থেকে চূড়ান্ত অফিসিয়াল হিসাব পাওয়া না গেলেও মহল বিশেষের মতে তা আরো এক দেড় লাখ হতে পারে।

 

এবারের সাধারণ ক্ষমা বিভিন্ন দিক দিয়ে ছিল উদার : এবারের সাধারণ ক্ষমা বিভিন্ন দিক দিয়ে ছিল উদারতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রথমত সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ দুমাস বাড়ানো হয়েছে এরপর এক্সিট পারমিট বা আউট পাসের মেয়াদ ১৪ দিন থাকলেও পরে তা সাধারণ ক্ষমার মেয়াদকাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যারা আমিরাতে ভ্রমণ ভিসায় এসে অবৈধ হয়েছেন তাদেরকেও সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে। অভিবাসী নাগরিকদের সন্তানদের যারা ইউএইতে জন্মগ্রহণের পরও তাদের রেসিডেন্সি নিশ্চিত করা হয়নি তাদেরকেও বিনা জরিমানায় নিয়মিতকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

 

সাধারণ ক্ষমার আওতায় বাংলাদেশিরা কেমন সাড়া দিলেন : ২০১২ সালের মধ্য অগাস্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের কর্মী ভিসা বন্ধ। ভিসা জালিয়াতিসহ নানা অপরাধ প্রবণতায় অধিক হারে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ, বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের আনুপাতিক তুলনায় বাংলাদেশিদের সংখ্যাবৃদ্ধিসহ বিবিন্ন কারণে আমিরাত গৃহকর্মী, ফ্রি জোনসহ কিছু সীমিত সেক্টরে এবং পেশাজীবীদের জন্য কেবল ভিসা উন্মুক্ত রাখে।

 

করোনার পূর্বে ইনভেস্টর ভিসায় এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ ভিসায় এদেশে আসার পথ শিথিল করা হলে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি এদেশে পুনরায় এসে পড়েন। যার সংখ্যা কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক। ভিজিট ভিসায় এসে অনেকেই বৈধ হলেও তাদের একটি বড় অংশ আমিরাতে অবৈধই থেকে যান। যার পরিমাণ লক্ষাধিক হতে পারে। অভিবাসীদের এন্ট্রি ও এক্সিটের হিসেব নিকেশ থেকে তাদের সংখ্যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অজানা নয়।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন