চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

করোনার ছোবলে তছনছ শিক্ষাব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ | ২:৫৯ অপরাহ্ণ

২০২০ সালে শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পেয়ে যেভাবে তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল তা কিন্তু ম্লান হয়ে যায় আড়াই মাস পেরুতেই। কারণ হয়ে দাঁড়ায় মহামারী করোনা। দেশবাসী যে উদ্দীপনায় দুই হাজার বিশকে বরণ করেছিল, করোনাভাইরাস মহামারী তাকে বিষময় করে তুলে চোখের পলকেই।

গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার এবং এ ছুটি  দফায় দফায় বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত  প্রলম্বিত হয়েছে। মোদ্দা কথা, ২০২০ সালের শিক্ষাব্যবস্থা তছনছ হয়েছে করোনার ছোবলে। বইয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব বেড়েছে সামাজিক দূরত্বের মতোই। প্রতিদিন সূর্য উঠলেও শিক্ষার্থীদের জীবন প্রতিদিনই অন্ধকারে ডুবতে বসেছে। উচ্চশিক্ষায় সেশন জটের সৃষ্টি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে ভাবিয়ে তুলেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খাঁ খাঁ করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কাযক্রম চালু রাখা গেলেও অভিভাবকরা সন্তানের জন্য অধিক টাকা খরচ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনুষ্ঠিত হলো না এ বছরের পিইসি ও জেএসসি  এবং মাদ্রাসার পরীক্ষাগুলো। হলো না এইচএসসি পরীক্ষাও। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে সব ক্লাসে অটোপাস দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে সব মহলে প্রশ্নও উঠেছে বিস্তর। এ সব পরীক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে অবমূল্যায়ন হতে হবে কি না, এ সন্দেহ সকলের। পরীক্ষার ফল নিয়ে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো চার কোটি শিক্ষার্থী।

তবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী বলেছেন, করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে ঠিকই কিন্তু এ ব্যাপারটা তো বিশ্বময় একটা বিপর্যযের ফল। সরকার এটা কাটিয়ে উঠার নানা কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক কারণেও নানা সময় শিক্ষার্থীদের সংকটে পড়তে হয়েছে। তা আবার কাটিয়েও উঠা গেছে। এবারও আশাকরি শিক্ষার এ বিপর্যয় কাঠিয়ে উঠা সম্ভাব হবে।

অনলাইন পাঠদান: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাতে সরকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে টিভি পাঠদান শুরু করে। চলছে অনলাইন পাঠদানও। কিন্তু এই মহামারীতে অনেকেই সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসে সিংহভাগ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছে না।  বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকের ঘরে এনড্রোয়েড ফোন নেই। আবার থাকলেও প্রতিনিয়ত ডাটা কিনতে সামর্থ্য না থাকায় গরীব  মা-বাবার সন্তানরা এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। সরকার এ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা জানালেও তা কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক অঞ্চলে মোবাইলে নেট সংযোগ পাওয়াও একটা দুরূহ ব্যাপার। এতে করে এ শিক্ষাও কোনো কাজে আসছে না সিংহভাগ শিক্ষার্থীর।

এ প্রসঙ্গে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক জরিপে দেখে গেছে, প্রযুক্তিগত সুবিধায় শিক্ষা লাভ করেছে মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকাতে কিশোর শিক্ষার্থীরা মা-বাবারও অবাধ্য হয়ে উঠছে। তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে অভিভাবক। ফলে কিশোর শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আমরা ন্যূনতম ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখনই তারা স্কুলে যাবে। যেহেতু কবে প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তা আমরা জানি না।  মাধ্যমিকের এক প্রধান শিক্ষক বলেছেন- এসাইনমেন্ট নেয়ার লক্ষ্য একটাই, শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলমুখী করা। এটা তাদের মূল্যায়নের জন্য নয়। *

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট