চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

শিশুর ঘুমের সমস্যা ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

মানুষ খিদে পেলে তবেই খায়, ঘুম পেলে তবেই ঘুমোয়। পেট ভরা থাকলে যেমন খাওয়া যায় না, ঘুমও তেমনি জোর করে আনা যায় না। শুধু মানুষ নয়, যে কোনও প্রাণীই ঘুমোয় সম্পূর্ণ-শারীরিক কারণে। এই ঘুম মানুষের বহু আকাক্সিক্ষত। শরীরের অনেক রোগ জ¦ালা নিবারণে-এমনকি সাময়িকভাবে মনের ভার লাঘব করতেও ঘুম আমাদের বিশেষ বন্ধু। ঘুম আমাদের জীবনীশক্তি জোগায়, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই বাচ্চাদের জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা এবং আনুষঙ্গিকে প্রতিবিধান নিয়েই আজকের নিবন্ধ।

ঘুম কী : ঘুম হল জীবনের একটি প্রাথমিক জৈবিক বৈশিষ্ট্য। এবং মানুষের অস্তিত্বের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের সবরকম মানসিক ও শারীরিক শক্তিকে ফিরিয়ে আনে ঘুম। নানারকম কাজের পর যখন আমাদের ¯œায়ু এবং মাংশপেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই ঘুম পায়।
কত বয়সে কতটা ঘুম : ঘুমের সঙ্গে বয়সের সরাসরি সম্পর্ক আছে। সদ্যোজাত একটি শিশু সারাদিনে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা ঘুমোয়। যদিও জেনেটিক এবং শারীরিক ও মানসিক কারণে ঘুমের সময়ের হেরফের হয়। আবার খুব শিশু বয়সের পারিপাশির্^কতার ওপর ও তার পরবর্তী জীবনের ঘুমের সময় অনেকটা নির্ভর করে। জন্মের পর থেকে সারা দিন রাতই শিশু ঘুমোয়। কিন্তু এই যে রাত্রে বেশি ঘুম, এটা জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়। শিশুটি যত বড় হতে থাকে ক্রমশ তার প্রথমে সকালের ঘুম তারপর দুপুরের ঘুম বাদ হয়ে যায়। আবার এটাও ঠিক যে সারা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষই দিনের বেলায় একটু ঘুমোয়। এ অভ্যেস তাদের সারা জীবন ধরেই থাকে।

বাচ্চাদের কিছু ঘুম সংক্রান্ত অসুখে : বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা যেমন খুবই স্বাভাবিক তেমনই এটা সাময়িকও বটে। কখনও কখনও অবশ্য এটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও হয়ে দাঁড়ায়। যেসব শিশুদের রাত্রে ঘুম পাড়ানো বেশ মুশকিল তারা সাধারণত একটু অস্থির বা বিরক্তিকর প্রকৃতির হয়। আবার যদি কখনও মা-বাবার প্রকৃতি তেমন হয়, তবেও শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। একটু বড় বাচ্চারা কখনও রাত্রে চোর-ডাকাত অথবা ছেলে ধরার ভয় পায়। অনেক বাচ্চার ঝড় বা বজ্রপাতের ভয়ও থাকে। এ সবই বাচ্চার ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়।
আজকাল অনেক মা-বাবাই বাচ্চাকে আলাদা ঘরে শোওয়ান। শিশুরা কখনও কখনও ভাবে ঘুমোতে যাওয়া মানেই বাবা-মার ¯েœহ ভালবাসা থেকে সরে যাওয়া।

পরামর্শ : অনেক মা-বাবা জানতে চান বাচ্চার ঘুম ঠিকমতো না হলে কোনও ওষুধ ব্যবহার করা যায় কিনা? যখন ঘুমের সমস্যা খুব বেশি হয় তখন প্রথম কয়েকদিন ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কখনই তা নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা অনেক সময় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু কিছু ওষুধে বেশি পায়। সাধারণত সর্দি-কাশির ওষুধ, অ্যালার্জি বা খিদে বাড়ানোর ওষুধে ঘুম খুব বেশি হতে পারে। তেমনই আবার কোনও কোনও ওষুধে ঘুম কমেও যায়। কাজেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধই বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত না। ঘুমের সঙ্গে খাবারের কোনও সম্পর্ক নেই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। মা-বাবার প্রতি : বাচ্চার শারীরিক, মানসিক ও পারিপাশির্^ক অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সে নিজে থেকেই ঘুমোবে। জোর করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। ঘুমের জন্য যে ধরনের শান্ত পরিবেশ দরকার সেটা তৈরি করুন।
চারপাশের অনুকূল পরিবেশের মাধ্যমেই শিশ ভালভাবে ঘুমোয়। বাচ্চাকে অযথা ঘুমের ওষুধ দেবেন না চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া। এরপওর যদি রাত্রে অযথা কান্নাকাটি করে হোমিওপ্যাথিতে ক্যামোমিলা, লক্ষণ ভেদে সিনা এবং ঘুমে ভয় কিংবা আতঙ্কে উঠলে একোনাইট ফলদায়ক।
ঘুমের মধ্যে উড়ে যাচ্ছে বা পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলে ‘থুজা’ প্রয়োজন বোধে প্রয়োগ করা চলে তা না হলে হিতে বিপরীত হয়। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়াতে নেই।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট