চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন বছরে নাগরিক প্রত্যাশা

বাসুদেব খাস্তগীর

১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলা নববর্ষ যেমনি আমাদের নানাভাবে আনন্দ দেয়, ইংরেজি নববর্ষও এখন আনন্দ বা খুশির অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে ক্রমাগত। বাংলা নববর্ষের যেমন একটি ইতিহাস আছে, ইংরেজি নববর্ষেরও নানা ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত আছে। ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাসে পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন- জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয় বলে অনুমান করা হয়। তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমস¤্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়। তবে আরো নানা ধরনের কথাও প্রচলিত আছে। ইংরেজি ২০১৯ সাল বিদায় নিয়ে ২০২০ আমাদের সামনে উপস্থিত। নানা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগ বিয়োগে ২০১৯ সাল আমাদের অনেক প্রাপ্তির আবার হারানোর কষ্টেও ভরপুর। নানা সমস্যার মধ্য দিয়েই আমাদের পথ চলা। চাহিদার তুলনায় সম্পদ সীমিত সম্পদের এ দেশে নানা সমস্যা আমাদের প্রতিনিয়তই সামনে এসে দাঁড়ায়। তবুও আমরা আশায় বুক বাঁধি। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম। এরই নাম জীবন। ব্যর্থতার গ্লানি ঝরে পড়ে সাফল্যের স্বর্ণালী সুখ আমাদের হাতের মুঠোয় আবার ধরা দেবে এ প্রত্যাশা আমাদের মনে প্রতিনিয়তই আলোড়িত করে। জীবনের নানা সংকটকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার শপথে আসে নতুন বছর। নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দেশ আজ এ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আছে এখনো নানা সমস্যা। এ সমস্যাকে অতিক্রম করেইতো আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বছরের শুরুতেই প্রত্যাশা সবার সুন্দর আগামীর লক্ষে শুরু হোক নতুন বছর। সত্যিকার অর্থে শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বরাই সমাজের বন্ধু, দার্শনিক, পথ প্রদর্শক ও সমাজের দর্পণ হিসেবে চিহ্নিত। সে হিসাবে আমাদেরও অনেকগুলো দায়িত্ব রয়েছে। সত্যিকার অর্থে সমাজ পরিবর্তনে আমাদের শিক্ষিত সুশীল সমাজকে কার্যকর অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে, সমাজের চাহিদার সাথে তার সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। সমাজের কুসংস্কার, কূপম-ূকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখককে সৎ ও সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। বৃহত্তর সমাজের মৌলিক অনেক আকাক্সক্ষার সাথে একাত্বতা সৃষ্টি করতে হবে। আশা করি নতুন বছরে আমাদের সকলের বলিষ্ঠ ভূমিকা দেশকে অগ্রগতির পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে। সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমানে দেশে প্রচুর সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে, বলা হচ্ছে সংবাদপত্র প্রচুর স্বাধীনতাও ভোগ করছে। এটা সুখকর লক্ষণ। একটি সংবাদপত্রে প্রত্যেকের ভালো দিক তুলে ধরার অধিকার যেমনি আছে, তেমনি মন্দ দিকগুলোও তুলে ধরার অধিকার আছে। তবে তা হতে হবে অবশ্যই রাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষে এবং সংবাদপত্র নীতিমালার ভিত্তিতে। যদি তা না থাকে তাহলে সংবাদপত্র যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে না। সংবাদপত্র সকলের বন্ধু হতে পারে, প্রতিপক্ষ নয়। মানুষের সবকিছু জানার অধিকার আছে। অধিকার আছে বলেই সংবাদপত্র সব ভালোমন্দ, অপকর্মÑদুর্নীতি ইত্যাদি প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় দেশের নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করে। সংবাদ পত্র সমাজের দর্পণ। নতুন বছরের ঊষালগ্নে আমরা কামনা করি একটি সুন্দর আগামীর। অনাচার অবিচারের বিরূদ্ধে একটি সুন্দর বর্ষ। যে বর্ষের প্রতিটি দিন হবে স্বপ্নময়, সোনালী স্বপ্নের দিন।

বাসুদেব খাস্তগীর সহকারী অধ্যাপক, বি এম সি কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট