চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটনসম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

কালান্তরে দৃষ্টিপাত

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:০২ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের নর-নারী বেড়ানোর জন্য বিদেশ যাচ্ছে ¯্রােতের মত। যারা নি¤œ বা মধ্যম আয়ের পরিবার তাদের দৃষ্টি ভারতের দিকে। আবার অনেকে যাচ্ছেন ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা। এ চার দেশে এরাইভাল ভিসা (অৎরাধষ ঠরংধ) পাওয়া যায়। আরও যারা সচ্ছল তাদের দৃষ্টি এ সব দেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার দিকে। যারা বেশি পয়সাওয়ালা তারা এসব দেশের সাথে সাথে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে বেড়াতে যায়।

বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধারণাতীত উন্নতি লাভ করায় মানুষের বেড়ানোর প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বেড়ানোর মাধ্যমে শরীরের কল্যাণের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনে সহায়ক। আমাদের দেশ থেকে কষ্টার্জিত কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন চিন্তা চেতনা, খেয়াল আছে বলে মনে করি না। আমাদের দেশের মত সুন্দর অনুকূল পরিবেশ বিশ্বে বিরল। যেমন সবুজের সমারোহ তেমনি আবহাওয়া অনুকূল। বরফ পড়ে না। ৪০/৫০ ডিগ্রী তাপে দগ্ধ হতে হয় না। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারীভাবে পর্যটনখাতে বড় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমার জানা নেই। দেশে রয়েছে সরকারী পর্যটন কর্পোরেশন। এদের ঢাকায় থাকবে বড় বড় কর্মকর্তারা। সারা বছর তাদের কি কি করণীয় তা অজানা। দেশের বিভিন্ন শহরে ১৫/২০টি মোটেল হোটেল নির্মাণ করেছে। হয়ত প্রতিটি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। এতে আর্থিকভাবে সরকার কতটুকু লাভবান হচ্ছে? স্বচ্ছতার অভাবে দুর্নামকে অস্বীকার করা যাবে না।
বেসরকারীভাবে ৫/১০ একর বা ২০/৩০ একর এরিয়া নিয়ে বিনোদনের জন্য স্পট রয়েছে। এখানে কয়েক ‘শ’ বা হাজার মানুষ কয়েক ঘণ্টার জন্য বেড়াতে যায়। ২/১টিতে হয়ত রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে। তাও ব্যয়বহুল পয়সাওয়ালাদের জন্য। পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাহাড়-পর্বত, লেক, নদী নিয়ে এ অঞ্চলে রয়েছে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীর নজরদারি। পর্যটন কর্পোরেশন তথা বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় বড় কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিতে পারে। নীলগিরি, বগালেক, চিম্বুক, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই লেক অঞ্চলে ১০০/২০০ একর বা ১০০০ একর এরিয়া নিয়ে প্রতিটিতে শত কোটি টাকা বা কয়েক ‘শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলে দেশ বহুমুখী লাভবান হবে সন্দেহ নাই। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মার খাচ্ছে, তার মূলে স্বচ্ছতার অভাব বলা যেতে পারে। কিন্তু সরকারী বড় অংকের তহবিল সামরিক বাহিনীকে দিয়ে দিলে পরিকল্পিত পরিকল্পনা দ্বারা বাস্তবায়িত হলে স্বচ্ছতা থাকবে আশা করা যায়। এতে টাকাও উঠে আসবে সরকারও বহুমুখী লাভবান হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে শত বা কয়েক ‘শ’ এরিয়া নিয়ে পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এখানে থাকবে লেক, ক্যাবলকার, বিনোদনের নানা আইটেম, চিড়িয়াখানা, বাগান, শিশুপার্ক ইত্যাদি। থাকবে একদিকে স্টারমানের হোটেল কটেজ, অন্যদিকে মধ্য ও নি¤œবিত্তদের জন্য হোটেল, ডর্মেটরী। থাকবে প্রবেশ মূল্য। এতে অনায়াসে দেশের মানুষ বিদেশমুখী হওয়ার চেয়ে এদিকে ধাবিত হবে বেশি।

গত ৮/১০ বছরের ব্যবধানে ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার পুনঃ নীলগিরিতে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়েছিল। সাথে ছিল এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াস, নিজাম উদ্দিন, এমদাদ উল্যাহ ও নুরুল ইসলাম। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০/৪৫ কি.মি দক্ষিণে নীলগিরি পর্বত। পর্বত শীর্ষে রয়েছে দুইটি ভি আই পি কটেজ। পর্বতের পাদদেশে রয়েছে আরও ৫/৬টি কটেজ। রুমের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমেত আমাদের কটেজটির এক রাতের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। হয়ত পর্বতের পাদদেশেরগুলো কম হতে পারে। আমরা ছিলাম উর্দ্ধতন সামরিক অফিসারের বধান্যতায়। ঐদিন বান্দরবান শহরে জুমা পড়ে বিকালে এখানে আসা হয়। জানলাম আজ শুক্রবার হাজারের মত নর-নারী এখানে ঘুরে গেছে। তাদের জন্য রয়েছে বাহিরে গাড়ি পার্কিং, রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরে রয়েছে বসার, কেনা কাটার নানান ব্যবস্থা। প্রবেশ করতে হলে জন প্রতি ৬৫ টাকায় টিকেট নিতে হবে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরাফেরার এ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। পর দিন প্রায় বেলা ১১ টাকার দিকে নীলগিরি পর্বত ত্যাগ করাকালীন শত শত নর-নারী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন এখানে ঘুরাফেরা করতে প্রত্যক্ষ করি। সময় বাড়লে আগমন আরও বাড়বে মনে হয়। বান্দরবান থেকে পাহাড় পর্বতের মধ্যে দিয়ে এখানে আসার রাস্তাটি অতি সরু। যে হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়তেছে এতে রাস্তা অতি বিপদজনক বলা চলে। এখানে রাস্তার ধারে পাওয়া যায় পেঁপে, কলা, জাম্বুরাসহ নানান উৎপাদিত ফল ফলাদি। গত বছর সাজেকেও রাত্রি যাপন করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব সামরিক বাহিনীর নিজস্ব অর্থায়নে স্বল্প পরিসরে। ফলে এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণে অত্যধিক ব্যয় হওয়ার কারণে ভাড়া বেশি বলা যাবে। ভাড়া পেতে হয় তাদের নিয়ম শৃংখলা মেনে নিতে হবে।

শত বা কয়েক ‘শ’ একর এরিয়া নিয়ে সরকারী অর্থায়নে সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় বড় একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সারাদেশের মানুষ এখানে আসবে, ঘুরবে, রাত্রিযাপন করবে। রাত্রিযাপন করার জন্য ধনী ও মধ্যবিত্তদের জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ তৈরি হবে। ফলে ব্যয় কম থাকবে বেড়ানোর জন্য বিদেশ গমনের প্রবণতা কমবে। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন তথা বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে। সেনাবাহিনীর সাথে বৈঠক করবে, সরকার থেকে অর্থ যোগান পেতে এগিয়ে যাবে আশা করি।

এ বিষয়ে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার মাধ্যমে পূর্বেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লেখা-লেখি করেছিলাম। এতেও উল্লেখ ছিল যে, সেন্টমার্টিন দেশের সর্ব দক্ষিণে একটি ছোট দ্বীপ। যা মিয়ানমার থেকে মাত্র ১২/১৪ কিলোমিটার দূরত্বের। এ দ্বীপটিতে ৫-৬ হাজার লোকের বসতি রয়েছে। দেশের নিরাপত্তাসহ বৃহত্তর স্বার্থে দ্বীপটিকে নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা কল্যাণকর মনে করি। এখানকার কয়েক হাজার মাত্র লোককে টেকনাফের পাহাড়ী এরিয়ায় সুন্দরভাবে বসতি করে দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নৌবাহিনীর সহায়তায় এখানে সীমিত আকারে ট্যুরিজমের প্রকল্প গ্রহণ করা যায়। এতে দ্বীপের কোন ক্ষতি হবে না। পর্যটন কর্পোরেশন এবং নৌবাহিনী আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বর্তমানে টেকনাফ থেকে দৈনিক কয়েকটি বড় বড় জাহাজসহ,ছোট ছোট ট্রলারে ¯্রােতের মত মানুষ যে হারে যাওয়া আসা করছে তাতে ছোট দ্বীপটি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখা-লেখি হয়েছে। কিন্তু সরকারের টনক নড়তেছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট