চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র হান্নান-জিয়ার উপস্থিতি ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের পটভূমি

পূর্ব প্রকাশিতের পর

মুহাম্মদ শামসুল হক

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

২৬-২৯ মার্চের মধ্যে বিভিন্ন সময় আরও যুক্ত হন মাহবুব হাসান, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ (ইনি বেতারকর্মী ছিলেন না), বেতার প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, আবদুল্লাহ আল ফারুক, ডা. আনোয়ার আলী, ডা. সুলতান-উল-আলম, আবদুস সোবহান, কবি আবদুস সালাম, কাজী হোসেন আরা, ফজলে হোসেন প্রমুখ। পরে আরও যুক্ত হন ওয়াপদার ইঞ্জিনিয়ার আশিকুল ইসলাম, বেতার প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, অনুষ্ঠান প্রযোজক মোস্তফা আনোয়ার, বেতার প্রকৌশলী এ এইচ এম শরফুজ্জামান, রেজাউল করিম চৌধুরী, রাশেদুল হোসেন (কারিগরী সহকারী), দিলীপ চন্দ্র দাশ, মেকানিক আবদুস শাকুর প্রমুখ। ডা. সুলতান-উল-আলম ছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের সংবাদ পাঠক (অস্থায়ী) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র।

বেলাল মোহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গীরা প্রথমে চেয়েছিলেন আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র থেকে অনুষ্ঠান ঘোষণা করে কালুরঘাট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে তা প্রচার করতে। নিরাপত্তার অভাববোধ হওয়ায় তা আর হয়নি। এ অবস্থায় বেলাল মোহাম্মদ ফোনে যোগাযোগ করে বেতারের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক আবদুল কাহ্হারের পরামর্শ অনুযায়ী সহযোগিদের নিয়ে কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্র থেকে অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। সন্ধ্যাকালীন এই অনুষ্ঠানটিকে বেলাল মোহাম্মদ অভিহিত করেন ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের’ প্রথম অধিবেশন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, বেতার কেন্দ্রের নাম হবে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র।’ ‘বিপ্লবী’ শব্দটি যোগ করতে বলেছিলেন আবুল কাসেম সন্দ্বীপ। বেতারের নিজস্ব অনুষ্ঠান ঘোষক ফজল হোসেন ও কাজী হোসনে আরা বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত থাকলেও পরিচিত কণ্ঠস্বর হওয়ায় পরে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের অনুষ্ঠান ঘোষণা থেকে বিরত রাখা হয়। বিষয়টি স্বীকার করেন ফজল হোসেন।

২৬ মার্চ সান্ধ্য অধিবেশনটি চলে প্রায় আধঘণ্টা ধরে। এ সময়ে এম এ হান্নান আবারো আসেন কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রে ডা. আবু জাফরকে সঙ্গে নিয়ে এবং স্বকণ্ঠে প্রচার করেন ঘোষণাটি। আবুল কাসেম সন্দ্বীপ এবং আশিফুকুল ইসলামও ঘোষণাটি পাঠ করেন। কোরান তেলাওয়াত করেন কবি-সাংবাদিক আবদুস সালাম। অনুষ্ঠান ঘোষণায় ছিলেন সুলতান-উল-আলম (পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ) এই অধিবেশন সম্পর্কে ’৯৭ সালের ডিসেম্বর এ লেখককে দেওয়া ডা. সুলতান-উল-আলমের এক স্মৃতিচারণমূলক লেখা (এ বিষয়ে তাঁর চেম্বারে কথাও হয় বিস্তারিত) থেকেÑ‘২৬ মার্চ দুপুর বেলায় চট্টগ্রাম বেতার থেকে স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম বাণী পাঠ করলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান। মাত্র দুই মিনিটের এই ঘোষণা যাঁরা শুনেছেন তাঁরা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে স্বাধিকার সংগ্রামে নতুন শপথ নিল। অন্যরা হতবুদ্ধি ও বিহ্বল হয়ে রেডিওর নব ঘোরাতে শুরু করলো আরও কিছু শোনার জন্য। একজন বেতার ঘোষক হিসেবে আমার মনে হলো, এখনি বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। অনেক কষ্টে আগ্রাবাদ বেতার ভবনে পৌঁছে দেখি বেতার সহকর্মীরা উত্তেজিত। এদের মধ্যে রয়েছেন বেলাল মোহাম্মদ, মাহবুব হাসান, ডা. আনোয়ার আলী এবং হোসনে আরা। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় স্থির হলো এখান থেকেই বেতার প্রচার শুরু হবে। বেতারকর্মী মাহবুব হাসান টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন বেতার প্রকৌশলী মির্জা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পরামর্শ দিলেন যেহেতু আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আওতার মধ্যে এবং বেতার প্রচার শুরু হলে তাদের দ্বারা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক হলো কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্রকে এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা করে সাহায্য করলেন ডা. সৈয়দ আনোয়ার আলী। বেতারকর্মী বেলাল মোহাম্মদ নিলেন অগ্রণী ভূমিকা। ডা. সৈয়দ আনোয়ার আলী নিজেই গাড়ির হুইল ধরলেন। যতদূর মনে পড়ে এই গাড়িতে ছিলেন বেলাল ভাই, অনুষ্ঠান ঘোষিকা হোসনে আরা, মরহুম কবি আবদুস সালাম, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ এবং আমি। সন্ধ্যায় কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্রে গিয়ে একটি কক্ষে বসে কেন্দ্রের নাম ঠিক হলো “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র”। বেতার কেন্দ্রের প্রথম অধিবেশনের রূপরেখা ঠিক করে প্রচারের একটু আগেই হঠাৎ করে হাজির হন আবদুল হান্নান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আবার পড়ে শোনান। বেলাল ভাইয়ের প্রস্তাবে আমি অধিবেশনের ঘোষণার জন্য মনোনীত হই। মনের মধ্যে প্রচ- উত্তেজনা এবং আবেগ নিয়ে বুথে ঢুকে বেতার মাইক্রোফোনে উচ্চারণ করলাম “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি” এই নাম ঘোষণাটি উচ্চকণ্ঠে আরও দুবার উচ্চারণ করলাম। এভাবেই শুরু হলো স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ‘প্রথম’ অধিবেশন। যে অধিবেশন থেকে ছড়িয়ে পড়লো স্বাধীনতার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। অধিবেশনে একটি সংবাদ বুলেটিন পাঠ করেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। বহির্বিশ্বের সাহায্য কামনায় ইংরেজিতে নিউজ বুলেটিনে কণ্ঠ দেন তৎকালীন বেতার প্রযোজক আবদুল্লাহ আল ফারুক। বাংলার আপামর জনসাধারণকে যার হাতে যাই আছে তা দিয়ে পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান চট্টগ্রামের মরমী কবি আবদুস সালাম। অনুষ্ঠানে কারিগরি সহায়তায় ছিলেন বেতার প্রকৌশলী মুসলিম খান, দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ মুসা।

২৬ মার্চের সান্ধ্য অধিবেশন শেষে বেলাল মোহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গীরা চলে আসার পর বেলাল মোহাম্মদেরই ঘনিষ্ঠজন মাহমুদ হোসেন আগ্রাবাদ থেকে বেতার প্রকৌশলী আবদুস সোবহানকে নিয়ে কালুরঘাট ট্রান্সমিটারে যান রাত প্রায় ১০টায়। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, রঙ্গলাল দেব চৌধুরী, আগ্রাবাদ হোটেলের ফারুক চৌধুরী ও অনুষ্ঠান ঘোষক কবির প্রমুখ। এঁরা সবাই আগ্রাবাদ হোটেলে বসে বেলাল মোহাম্মদের সান্ধ্য অধিবেশন শুনেছিলেন। পরে আবেগের বশে ও দেশপ্রেমের চেতনায় স্বেচ্ছায় ছুটে গিয়েছিলেন কালুরঘাটে।’ অনানুষ্ঠানিকভাবে এটাকে ২৬ মার্চের তৃতীয় অধিবেশন ধরা যায়। ২৬ মার্চের বেতার অধিবেশন ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের ফলে মানুষের মনে ধারণা জন্মে যে, জনগণের পক্ষে বাঙালি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দখলে একটা বেতার কেন্দ্র রয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু হয়তো আশপাশে আত্মগোপন অবস্থায় থেকে যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ২৬ মার্চ রাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো এক জায়গা থেকে গোপন বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। সে সময় পাকিস্তান রেডিওর ওপর আস্থা না থাকায় সর্বস্তরের মানুষ রেডিও সেটের কাছে জড়ো হয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনতো বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও আকাশবাণী কলকাতার খবর। এ তিনটি বেতার অনুষ্ঠানের সময় (সংবাদ ও পর্যালোচনা) ছাড়া বাকি সময়ে নব ঘোরাতো স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান শোনার জন্য।
বেতার কেন্দ্রে ডা. এম এ মান্নান ও ছাত্রনেতৃবৃন্দ : মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীসহ অনেকেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে মুক্তিসংগ্রামের এই ক্রান্তিকালে অবদান রাখার চেষ্টা করছিলেন। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে ব্যস্ত থাকার কারণে অন্যের কর্মকা- সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানার সুযোগ পাননি। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ছাত্রলীগ ও মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাথায় চাপে বেতার কেন্দ্রে গিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে। তাঁরাও জনগণের উদ্দেশে কিছু বলতে চান বেতারের মাধ্যমে। মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে এম এ হান্নানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের কথা শুনেছেন। কিন্তু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি ও যোদ্ধাদের জন্য রসদ যোগাড়ে ব্যস্ত থাকার কারণে অনেকেই তা জানতে পারেননি। বিশিষ্ট প্যাথলজিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান, লেখক ডা. মাহফুজুর রহমান তখন মেডিকেলের জ্যেষ্ঠ ছাত্রনেতাদের অন্যতম। তাঁর নেতৃত্বে ডা. বেলায়েত, ডা. শাহাবুদ্দিন, পলিটেকনিক ছাত্রলীগের আজিজ, খুরশিদসহ ১০-১২ জনের একটি দল ২৭ মার্চ সকাল প্রায় ১১টায় কালুরঘাট বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রে গিয়ে খ-কালীন একটি অনুষ্ঠান প্রচার করেন যা বেলাল মোহাম্মদের লেখায় উল্লেখ করা হয়নি। ওই অনুষ্ঠান চলাকালে ডা. এম এ মান্নান এমপি, আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী এমএনএ এবং ডা. ইউসুফ ও শাহ-ই-জাহান চৌধুরী এসেছিলেন বেতার কেন্দ্রে। ওই অনুষ্ঠানে বেতার মেকানিক আবদুস শাকুর ও আবুল কাসেম সন্দ্বীপ উপস্থিত ছিলেন। ধারাবাহিকতার দিক থেকে এটি ছিল ৪র্থ অধিবেশন। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছিল ৮৭.০ কিলোহার্জএ। সেই অধিবেশনের বিষয়ে ডা. মাহফুজুর রহমান লিখেছেনÑ‘বেতারে পৌঁছেই বেতার চালু করা হয়। প্রথমেই ডা. এম এ মান্নানের ভাষণের একটি ক্যাসেট বাজান হয়। তিনি এটা সাথে করেই এনেছিলেন। এরপর আমাকে তুলে দেওয়া হয় সংবাদ পড়তে। সংবাদ পড়ার উচ্চারণ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় ভাষণের মত সংবাদ পড়া শুরু করে দিই এবং এক পর্যায়ে সংবাদে টিক্কা খানকেও মেরে ফেলি। ডা. বেলায়েত ইতিমধ্যে ইংরেজিতে এটি সংবাদ লিখে ফেলেন। তাঁর লেখা শেষ হলে আমি মাইক ছেড়ে দিই। ডা. বেলায়েতের পড়া শেষ হলে ডা. ইউছুফ একটি সুন্দর ভাষণ দেন। এর ফাঁকে ফাঁকে শাহ-ই-জাহান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। অল্পক্ষণ থেকেই আমরা সবাই শহরে চলে আসি। বেতারের চতুর্থ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা একবারই বেতারকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। পরে এদের সবাই কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন। বেতার নিয়ে লিখলেও দীর্ঘদিন এদের নিয়ে কেউ কিছু লেখেননি, বলা চলে প্রয়োজন অনুভব করেননি। যুদ্ধে এদের অবদান বেতারের সব অনুষ্ঠানে যোগদানের অবদানের চাইতে বেশি হবে বলেই বোধ হয় বেতারে তাঁদের ভূমিকাকে স্মরণ করাকে গুরুত্বহীন মনে করেছেন।’

মেজর জিয়ার ঘোষণা পাঠ পঞ্চম অধিবেশনে : ধারাবাহিকতার দিক থেকে পঞ্চম এবং বেতার কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত দ্বিতীয় অধিবেশনটি প্রচারিত হয় ২৭ মার্চ সন্ধ্যায়। এই অধিবেশনেই অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন যা সে সময় বেসামরিক জনতার পাশাপাশি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতস্ততঃ করা সৈনিকদেরও উদ্বেগ কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। মেজর জিয়াউর রহমানের বেতারে আসা ও তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা পাঠ নিয়ে পরস্পর বিরোধী নানা কথা শোনা যায়। বিশেষ করে জীবদ্দশায় দুএকজন স্তাবক প্রসঙ্গটি তুললেও বাড়াবাড়ি রকমের কিছু হয়নি। জিয়াউর রহমান নিজেও এ নিয়ে কোনো দাবি প্রকাশ্যে করেননি।

সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে এবং তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে জানা যায়, রাজনৈতিক নেতারা ভাবছিলেন যে, তাঁদের মধ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বেতারে প্রচারিত হলেও (এম এ হান্নানের মাধ্যমে) একজন সামরিক কর্মকর্তাও যদি বেতারের মাধ্যমে জনগণ বিশেষ করে বাঙালি সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্যে নিজেদের বিদ্রোহের ঘোষণা দেন তাহলে আইনের শৃঙ্খলায় আবদ্ধ সাধারণ সৈনিকেরা দ্বিধা-সংশয় ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে পাক-হানাদার বাহিনীর মোকাবেলায়। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ক্যাপ্টেন রফিক আগে থেকেই যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ বাঙালি কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। (চলবে)

মুহাম্মদ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকর্মী, সম্পাদক-ইতিহাসের খসড়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট