চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

জনবিড়ম্বনা লাঘবে সচেষ্ট হোন খোঁড়াখুঁড়িতে বিপন্ন নগরবাসী

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়নের কারণে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে উঠেছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসীর জীবনে এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়নপ্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে একদিকে বাড়ছে বায়ুদূষণ ও বায়ুদূষণজনিত রোগব্যাধি; অন্যদিকে চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি, যানজট ও চলাচলে বিড়ম্বনা, মূল্যবান সময় নষ্ট ও অতিরিক্ত অর্থখরচসহ নানাবিধ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী। কিন্তু জনভোগান্তি লাঘবের কোনো উদ্যোগ নেই। উন্নয়নবাজেটে বরাদ্দকৃত পরিবেশ রক্ষার অর্থও ব্যয় করা হয় না। কবে এই উন্নয়ন মহাযজ্ঞের খোঁড়াখুঁড়ি শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছেও নেই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে নগরবাসীর ভোগান্তি নিয়ে নেই কারো মাথাব্যথা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিকবিড়ম্বনা। এমন চিত্র নাগরিককাম্য নয় নিশ্চয়ই।

দৈনিক পূর্বকোণে গত বৃহস্পতিবার ‘কার পাপে এত খোঁড়াখুঁড়ি!’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন বলছে, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবাসংস্থা সমন্বয়হীনভাবে তাদের উন্নয়নপ্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বছরব্যাপী থাকে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। কোথাও পানি, কোথাও গ্যাস, কোথাও টেলিফোন, কোথাওবা বিদ্যুতের পাইপ লাইন সংস্কারের নামে বছরজুড়ে চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। সরকারি সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয় না থাকায় এক সংস্থা কাজ করে যেতে না যেতেই আরেক সংস্থা আসে খোঁড়াখুঁড়ির কাজে। এমনও দেখা যায়, কোনো সড়ক মেরামত করার পর মাস না পেরোতেই আবার তা খোঁড়া হয়। কাজও শেষ হয় না সময়মতো। ফলে সড়কজুড়ে সামান্য গুড়িবৃষ্টিতেই কর্দমাক্ততার পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে সড়কগুলো সরু হয়ে বাড়ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয় নগরবাসীকে। বর্ষামৌসুমে এই পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরো অসহনীয়। বার বার একই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নে বিভিন্ন সেবাখাতের সমন্বয়হীনতাই যে এর প্রধান কারণ তা বলাই বাহুল্য। তবে সরকারি সেবাসংস্থার জন্য সমন্বয় করে কাজ করাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, একমাত্র মন্ত্রণালয়কেই এ সমস্যা সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে কীভাবে একই সময়ে সেবাসংস্থাগুলোর কাজের অনুমোদন, কাজের ব্যাপ্তি, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একসঙ্গে করা যায়। খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা। এ ব্যাপারে নাগরিক দাবিও বহু বছর ধরে আছে। গণম্যাধ্যমেও ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতামত সম্বলিত প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, এমনকি নাগরিকমতও প্রকাশিত হয়েছে প্রচুর। কিন্তু তারপরও কেনো উন্নয়নকাজে সমন্বয় আনা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।

সমন্বয়হীনতার অর্থবহ কোনো ব্যাখ্যাও নেই। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেবাসংস্থার উন্নয়নকাজের সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেয় দুর্নীতিগ্রস্তরা। তারা নানাভাবে সরকারি অর্থের নয়ছয় করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকতে পারে, কিন্তু একই স্থানে বার বার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যে সরকারি অর্থের চরম অপচয় হচ্ছে, জনগণের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। উন্নয়নকাজের দীর্ঘসূত্রতা এবং সমন্বয়হীনতাকে জায়েজ করার জন্যে অনেক সময় যুক্তি দেয়া হয় এই বলে যে, ‘উন্নয়নের সুফল পেতে কষ্ট তো একটু করতেই হবে’। এটি একটি খোঁড়া যুক্তি। উন্নয়নের কারণে নাগরিককষ্ট হবে, সে বিষয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই। কিন্তু উন্নয়নের নামে সমন্বয়হীনভাবে বছরব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি চলবে, পরিবেশ রক্ষায়ও নেয়া হবে না কোনো বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ, তা মেনে নেয়া যায় না।

নগরপরিকল্পনাবিদরা তো বটেই, ওয়াসা’র এমডিসহ বিভিন্ন সেবাসংস্থার প্রধানরাও উন্নয়নকাজে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নয়নকাজের সমন্বয় সাধন সম্ভব নয়। সরকারি অর্থের অপচয় ও জনবিড়ম্বনা বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নয়নকাজের সমন্বয় সাধনে মনোযোগী হলে, সব কাজের প্ল্যান দেখে একসাথে অনুমোদন দিলে এবং একসাথে কাজ শুরু করলেই কেবল বছরব্যাপী রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে নগরবাসী। উন্নয়নকাজে সমন্বয়হীনতার পাশাপশি সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারার বিষয়টিও পীড়াদায়ক। এটি সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতার পরিচায়ক। এর পেছনে কারও গাফিলতি বা কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সড়কে কাজ চলাকালে জন ও যান চলাচলের জন্য যতটা সম্ভব বেশি জায়গা মুক্ত রাখা, কোনো অংশে কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্থান ব্যবহার-উপযোগী করা, ধুলার যন্ত্রণা রোধে নিয়মিত পানি ছিটানো এবং বৃষ্টিজনিত সমস্যায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাও দরকার। এতে কিছুটা হলেও জনদুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। তবে এ ব্যাপারে চসিককে জনপ্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। উন্নয়নপ্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির সাথে সম্পৃক্ত সেবাসংস্থাগুলোর সঙ্গে বসে চসিক একটি নাগরিক ও পরিবেশবান্ধব নিয়মবিধি তৈরি করে তা মানার ব্যাপারে নজরদারী করলে জনকাক্সিক্ষত ফল আসবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট