চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

আসুন, শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

অধ্যাপক শাহাজাহান কবীর ভূঁইয়া

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

শীত যেন এবার পঞ্জিকা ধরেই নেমে আসলো। পৌষের শুরুতেই যে শীত জেঁকে বসবে, সেই পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। শীতের তীব্রতা বাড়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বেশি কষ্ট পোহাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরা। বিশেষ করে অসহায় খেটে খাওয়া গরিব মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা বেড়ে গেছে। ঠা-াজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর-সর্দি-কাশি ইত্যাদি রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কজনদের দুর্ভোগ বেশি বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের ভর্তির হার বেড়েছে। শীতের সঙ্গে আছে হিমালয় থেকে আসা ঠা-া বায়ুর প্রবাহ। আছে ঘন কুয়াশাও।

কুয়াশার প্রকোপ বাড়ায় দেশের অনেক স্থানে সূর্যের দেখাও মিলছে না। রাজশাহীসহ আশপাশ এলাকায় দুদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। আমাদের চট্টগ্রামেও সকালে সূর্যের দেখা মেলে না। প্রচ- গরমের পর হঠাৎ করে শীত এসে যাওয়ায় সবাই অনেক কষ্ট ভোগ করছে দরিদ্র মানুষজন। শহরে তেমন মালুম না হলেও গ্রামে শীতের প্রচ- দাপট অনুভূত হচ্ছে। সকালের পর বিকালে ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। আর ভোর থেকে চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। ঘন কুয়াশায় আলোর স্বল্পতা সৃষ্টি হওয়ায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালানো হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে মানুষের চলাচল কমে গেছে। সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বাতাস আসে সেটাকে আমরা ‘উত্তরা বাতাস’ বলে থাকি। বর্তমান শীতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। এই বাতাস কনকনে হিম বয়ে এনে হাড় কাঁপুনির সৃষ্টি করছে। এই বাতাস না থাকলে দিনের তাপমাত্রা এত বেশি কমতো না আর এত ঠান্ডা ও অনুভূত হতো না। ৯-১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এত ঠান্ডা অনুভূত হতো না। যদি রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি থাকে । এই কারণে সূর্যের দেখা মিলছে কম। এ মাসের শেষ দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তীব্র শীত অনুভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্তই বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করার কারণে বিষুব অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়। হঠাৎ শীতের কারণে গরম কাপড়ের দোকানে বিক্রি বেড়েছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গরম কাপড়ের স্বল্পতা দেখিয়ে দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে পর্যাপ্ত গরম কাপড় না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক দরিদ্র মানুষ। ফুটপাত ও প্ল্যাটফর্মের যে সব দরিদ্র লোক রাত্রি যাপন করে তাদের কষ্টের সীমা নেই। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে না এলে এসব দরিদ্র মানুষগুলোর বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়বে।

তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর কাজে বের হতে না পারলে শীতের সাথে তাদের ক্ষুধার কষ্টও সহ্য করতে হয়। তাই এসময় দেশের এনজিওগুলো, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ, সেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচভিত্তিক সংগঠনগুলোর উচিত এসব দরিদ্র ও দুঃস্থ মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। এতে হতদরিদ্র মানুষগুলো নিদারুণ শীতকষ্ট থেকে নিস্তার পাবে।

শীতের সময় আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো শীতকালীন অসুস্থতা অর্থাৎ শীতকালীন রোগ। শীতের সময় দিন ছোট ও রাত বড় হওয়ার কারণে প্রাত্যহিক রুটিন মেনটেন করা দুরূহ। বিশেষ করে খাবার গ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে। শীতের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। শীতের সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে, যেমন- মাছ, শাক, সিম জাতীয় সবজি এবং ডিম খেতে হবে। ডিম এবং মাছে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন ভিটামিন ডি ও বি ও ভালো কোলেস্টরেল, যা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। শীতকাল শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মাস।
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি কমে যায় এবং শিশুরা এই সময় ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- ডায়রিয়া, নিউমনিয়া, কাশি, জ্বর ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শীতকালীন সময়ে শিশুর অভিভাবকরা সচেতন হলে এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। এই সময়ে শিশুর মা-বাবাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেন ঠা-া না লাগে এবং ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে শিশুকে। এ সময়ে কোন কারণে শিশুর তিন দিনের বেশি জ্বর কাশি থাকলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। অর্থাৎ এই সময় শিশুর প্রতি অতিরিক্ত যতœবান হতে হবে বাবা-মায়ের। তাহলে শীতকালীন রোগ ও অন্যান্য ঠা-াজনিত সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। ঋতুপরিবর্তন প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারা। তাই ঋতু পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে ও দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় নিতে হবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট