চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

রাজাকার তালিকা প্রসঙ্গ

সাইমুম চৌধুরী

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

দেশবাসীসহ সারা বিশ^ জানে ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মীয় অনুভূতির কারণে অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে তৎকালীন পাকিস্তানীদের সমর্থন করেছিল। এ কারো অজানা নয়। সেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা ইতিহাসে রাজাকার আলবদর আলশামস নামে খ্যাত। খুবই দুঃখজনক স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৪৯বছর পর এসে বর্তমান সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা জীবন বাজী রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের কারো কারো নাম রাজাকারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত অনেক রাজাকারের নাম তালিকায় নেই। এ বিষয়ে দেশবাসীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অবাক হবারই বিষয় কোনরূপ যাচাই বাছাই ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকার, আলবদর, আল শামস এর একটি তালিকা তৈরী করল। অবাক হবারই বিষয় এই তালিকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার, আলবদর আল শামস তৈরীর মূল হোতা এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নাম নেই। এদের নাম প্রারম্ভেই থাকার কথা।

স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও দেখছি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের আত্মা ভূত হয়ে আমাদের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে। তাই সবাইকে সাবধানী হবার অনুরোধ করছি। স্বাধীনতা বিরোধীদের অপকৌশল থেকে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো রাজনীতির মাঠে দারুণভাবে সক্রিয়।

পত্রিকান্তে জানা যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকার, আলবদর, আল শামস, স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরী করেছে তাতে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া গিয়েছে যারা রাজাকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া আওয়ামীলীগের বেশ কিছু নেতার নাম রয়েছে যাঁদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া ৩৮ জন নারী রাজাকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৯২ জনের নামও এসেছে রাজাকার হিসেবে। এভাবে কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া জনসম্মুখে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের নাম রাজাকার হিসেবে আসাটা দুঃখজনক। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। তালিকা প্রকাশের তিন দিনের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভুলভ্রান্তি বেশি হলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের মুখে রাজাকারের বিতর্কিত তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পত্রিকান্তে প্রকাশ আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত উল্লেখিত তালিকা স্থগিত থাকবে। সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাই করে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হবে। সংশোধিত তালিকা কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী করা নীতিগতভাবে আরো অনেক পূর্বেই তৈরী এবং প্রকাশ করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। ৪৯ বছর পর যাও করল তাও ভুলভ্রান্তিতে ভরা। জাতির জন্য বিষয়টি বড়্ই দুঃখজনক। সবশেষে বলব সারাদেশে এলাকাভিত্তিক বাসিন্দাদের নিকট থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের নাম সংগ্রহ পূর্বক একটি নির্ভুল তালিকা প্রস্তুতের আশু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট