চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

রোহিঙ্গা গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি প্রসঙ্গ

জসীম উদ্দীন মাহমুদ

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নিষ্ঠুরতা চালিয়ে আসছে মিয়ানমার। কখনোই তারা আইনের তোয়াক্কা করেনি। এবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ২০১৬ সালে দেশটির সরকার সেখানকার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যার মাত্রায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। জেনোসাইড কনভেনশনের সদস্যদেশ হিসেবে গাম্বিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এবারই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে গেছে পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গাম্বিয়া। মাত্র সাড়ে ১৮ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটি এখন বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গ্রেট হল অব জাস্টিস শান্তি প্রাসাদে (দ্য পিস প্যালেস) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গাম্বিয়ার মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তা এই মামলার প্রথম ধাপ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার বৈশ্বিক সনদ লঙ্ঘন করেছে কি না, তার বিচারই আইসিজের এই শুনানির উদ্দেশ্য। একই শহরের ১০ কিলোমিটারের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), যেখানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এর আগে উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন। ৫৭টি দেশের সংগঠন ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সমর্থন নিয়ে গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি করে। গত ১০ ডিসেম্বর মামলার পক্ষে বলে গাম্বিয়া, ১১ ডিসেম্বর মামলার বিপক্ষে বলে মিয়ানমার। ১২ ডিসেম্বর পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে দুই দেশ। গাম্বিয়া হয়তো ওআইসিভূক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক ও আইনি পরামর্শের সহায়তা পেয়েছেÑ এই ভাষ্য মিয়ানমার বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এটি যদি সত্যি হয়েও থাকে, তাহলেও আইনি দিক থেকে গাম্বিয়ার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গাম্বিয়া একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে মামলাটি করেছে এবং এ বিষয়ে সে যার কাছ থেকে ইচ্ছা সহায়তা নিতে পারে।

মিয়ানমারের যুক্তি ছিল , গাম্বিয়ার অভিযোগ উত্থাপনের এখতিয়ারই থাকতে পারে না। তাদের কথা হলো, আইসিজেতে যদি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলার কারও এখতিয়ার থেকে থাকে, তাহলে সেটি হলো বাংলাদেশ। কারণ, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছে। মামলার দ্বিতীয় ধাপেও মিয়ানমার গাম্বিয়ার এই এখতিয়ারকে বাতিল ঘোষণার দাবি তুলতে পারে। তবে এই শুনানিতে মামলার মেরিট পর্যালোচনায় মিয়ানমার যে একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে, তা পরিস্কার হয়েছে। শুনানিতে মিয়ানমার প্রথম থেকেই তাদের সেনাবাহিনীর ভাষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। তারা আদালতকে বোঝাতে চেয়েছে, রাখাইনে অভ্যন্তরীণ সংঘাত ছাড়া কিছু হয়নি এবং অভ্যন্তরীণ ‘সন্ত্রাসীদের’ দমন ও ‘জননিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালানোর এখতিয়ার আছে।
মিয়ানমারে যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গণহত্যা হয়ে থাকতে পারে, তা আদালত নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছেÑ চূড়ান্তভাবে এই সিদ্ধান্তে আসতে সুনির্দিষ্ট জোরালো প্রমাণ দরকার। মিয়ানমারের যুক্তি মেনে আইসিজে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে পিছিয়ে আসবেÑ এমনটি মনে হয় না। তবে মামলাটি সামনের দিকে গেলে এসব যুক্তিই মামলাটির প্রধান প্রতিপাদ্য হয়ে দাঁড়াবে। এক পর্যায়ে মিয়ানমারকে ‘কাউন্টার-ইনসার্জেন্সি’র ব্যাখ্যা দিতে চাপ দেওয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে একটি প্রশ্নে জবাব পাওয়া যাচ্ছে না; সেটি হলো, সন্ত্রাসীদের হামলা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী কাউন্টার-ইনসার্জেন্সির যে তত্ত্ব দিচ্ছে, তার সঙ্গে শিশুহত্যা ও পৈশাচিকভাবে নারী ও শিশুদের ধর্ষণের সম্পর্ক কোথায়? রোহিঙ্গাদের গ্রামে হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াও কি কাউন্টার-ইনসার্জেন্সির অংশ? এটিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিপ্রায় ছাড়া অন্য কিছু অনুমান করার সুযোগ আছে কি?

মিডিয়া পত্র-পত্রিকার কল্যাণে লক্ষণীয়, আদালতে অং সান সু চির উপস্থিতির কারণে এই শুনানির প্রতি মানুষের আলাদা রকমের আকর্ষণ ছিল। শুনানির প্রথম দিন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা যখন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সাধারণ নাগরিকদের হত্যাযজ্ঞ চালানো ও ধর্ষণের নৃশংস বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন সু চির চুপচাপ শুনে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সু চি আদালতে নিজের সরকারের সমর্থনে যা বললেন, তা খুবই লক্ষ করার মতো ছিল। তিনি সেনাবাহিনীর এমন কিছু কর্মকা-ের সাফাই দিয়েছেন, যা কোনো বিবেচনায়ই সাফাইযোগ্য বলে আদালতে বিবেচ্য হবে না। এটা কারো নজর এড়ায়নি যে তিনি তাঁর পুরো ভাষণের কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি (অবশ্য ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা সংগঠনটির নাম তিনি বলেছেন)। তাঁর ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করার এই সিদ্ধান্ত (এই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের পুরো আইনজীবী দল অনুসরণ করে আসছে) অত্যন্ত বাজেভাবে সামনে এসেছে। মানবাধিকারের আইকন হিসেবে চিত্রিত সু চির এই নীতি তাঁর ভাবমূর্তির স্খলন ঘটিয়েছে বলা যায়। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি একবারও উচ্চারণ না করে সু চি এবং তাঁর সরকার এই বার্তা দিতে চায় যে তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এতে বোঝা যায়, রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্য তাদের রয়েছে।
গাম্বিয়া গণধর্ষণের যে ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছে, তারও গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে সু চি ব্যর্থ হয়েছেন। এতেও মিয়ানমারের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা খর্ব হয়েছে। উপরন্তু সু চি আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিষয়কে টেনে আনায় রাখাইনে আন্তধর্মীয় সহাবস্থান হুমকিতে পড়তে পারে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি আইসিজেকে মিয়ানমারের নিজস্ব বিষয় নিজেকেই সামলাতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। মিয়ানমারের সামনে যে অভিযোগের পর্বত গাম্বিয়া এনে দাঁড় করিয়েছে, তার বিপরীতে সু চির এসব যুক্তি খুবই হালকা, বাস্তবতা থেকে অনেক দূর।

রাখাইনের বিষয়টি শুধু রোহিঙ্গা নামের একটি জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার লাভের বিষয় নয়, এটি মূলত বিশ্বমানবতার মর্যাদা রক্ষার প্রশ্ন। বিশ্ববাসীর কাছে সাধারণভাবে এ পর্যন্ত এটাই প্রতীয়মান হয়ে আসছে যে, সেনানিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র মিয়ানমার বেশ শক্তিশালী। শক্তির জোরেই তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের দেশছাড়া করেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি তারা ঝুলিয়ে রেখেছে। দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত ও দেশছাড়া করে তাদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি ও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
আইসিজের এই মামলাটি দুটি কারণে যুগান্তকারী। প্রথমত, প্রতিবেশী না হয়েও বৈশ্বিক সনদে স্বাক্ষরকারী হিসেবে মিয়ানমার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের আরেকটি উপমহাদেশ আফ্রিকার রাষ্ট্র গাম্বিয়া এই মামলার বাদী। গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে এর আগে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে (সার্বিয়া বনাম বসনিয়া এবং সার্বিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া)। দ্বিতীয়ত, এই প্রথম মানবাধিকারের লড়াইয়ের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একজন রাজনীতিক গণহত্যার সাফাই দিতে হাজির হলেন শান্তি প্রাসাদে। ১৯৯১ সালে শান্তি পুরস্কার বিজয়ের ২৮ বছর পর সামরিক শাসনোত্তর মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি তাঁর দেশের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযানের পর সু চি জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক ফোরামে খুব কমই অংশ নিয়েছেন।

মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে পদ্ধতিগতভাবে বহু বছর ধরে এসব করেছে। কিন্তু তারা কখনোই কোনো আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহির জন্য দাঁড়ায়নি। এর আগে মিয়ানমার এখতিয়ারের প্রশ্ন তুলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে (আইসিসি) সহযোগিতা করতে চায়নি। কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজে মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার বিচার কার্য শুরু করলেন। এখানে ব্যক্তি নয়, অভিযুক্ত স্বয়ং রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার। তবে আমরা সবাই জানি যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় চূড়ান্তভাবে কার্যকর করার বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে। আর এটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক ও হতাশার যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সদস্য খোলাখুলিভাবেই মিয়ানমার রাষ্ট্রের পক্ষ অবলম্বন করেছে। এসব দেশ বাংলাদেশেরও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার।
আশা করব, আইসিজেতে যেহেতু মামলাটির বিচার শুরু হয়েছে, তাই এই দেশগুলো এখন আইনকে তার আপন গতিতে চলতে সহায়তা করবে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের দায় প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য দেশটির স্টেট কাউন্সেলর সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আটজন। তাঁরা বলেছেন, রাখাইনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেনা কমান্ডারের পাশাপাশি তার দায় সু চির ওপরও বর্তায়। নোবেল ওমেন’স ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে। নোবেল বিজয়ীগণ হলেন, ইরানের শিরিন এবাদি (২০০৩), লাইবেরিয়ার লেমাহ গবোই (২০১১), ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান (২০১১), উত্তর আয়ারল্যা-ের মাইরেড মাগুয়ের (১৯৭৬), গুয়াতেমালার রিগোবার্টা মেনচু তুম (১৯৯২), যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস (১৯৯৭), ভারতের কৈলাস সত্যাথী (২০১৪), ও ড. মুহাম্মদ ইউনুস (২০০৬)। বিবৃতিতে নোবেলজয়ীরা বলেন, ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ সব অপরাধ প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই।’ রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে সু চির অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নোবেলজয়ীরা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে এসব অপরাধের নিন্দা জানানোর পরিবর্তে অং সান সু চি এ রকম নৃশংসতা সরাসরি অস্বীকার করে আসছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করতে এ পদক্ষেপ গ্রহণের (মামলা করার) জন্য আমরা গাম্বিয়াকে সাধুবাদ জানাই।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। এই অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে সব মিলিয়ে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তাঁদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমও সফলতার মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা সেখানে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। নোবেলজয়ীরা বলেন, ‘শান্তির মানুষ হিসেবে আমরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা, ভূমির মালিকানা, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত ও নৈতিক দায়িত্ববোধ পালন এবং তাঁর অধীনে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও নিন্দা জানাতে অনুরোধ করছি।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা ঘটেছে. জাতিসংঘের তরফেও শুরুতে তাকে গণহত্যা বলা হয়নি, বলা হয়েছিল এত্থনিক ক্লিনজিং। পরে অবশ্য তারা পরিস্কারভাবে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার কথা বলেছে। আদালতের সামনে এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, মিয়ানমারে কোনো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যদিও বহু স্বাধীন সংস্থার কাছে তার অকাট্য স্বাক্ষ্যপ্রমাণ আছে।
তদুপরি আদালত চাইলে সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তরফে গাম্বিয়ার মামলা কিংবা মানবতা সুরক্ষার মামলাটি পরিচালনার সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে সেই আবেদন রাখতে চাই। এই মামলা ভাবীকালের গণহত্যাকারীদের প্রতি একটি কঠোর বার্তা দেওয়ার সুযোগ ও পরিস্থিতি তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে ওআইসিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালে বাংলাদেশের তরফ থেকে একটি সর্বাত্মক কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন আইনজ্ঞ প্রতিনিধিদলের ওপর আমাদের পুরো ভরসা ও আস্থা রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করি, এ পর্যন্ত এই মামলায় অগ্রসর গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার দেশগুলোর মধ্যে শুধু নেদারল্যান্ডস ও কানাডা সরব রয়েছে। জানা যায় এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় গাম্বিয়াকে বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডা ও নেদারল্যান্ডস সহায়তার কথা জানিয়েছে। আমরা আশা করছি, এই দুটি দেশের সঙ্গে অন্য আরও অনেক দেশ শামিল হবে।

জসিম উদ্দীন মাহমুদ কথাসাহিত্যিক, ইসলামি চিন্তক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট