চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

ঘটনাবহুল উহুদ যুদ্ধ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

যে হেতু উহু দের যুদ্ধে সত্তর জন মুস লিম শহীদ হয়েছিলেন, তাই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলা মুসলিমদেরকে শান্তনা ও উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী ধর্মভীরু লোকদেরকেও জান ও সম্পদের ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ তাদেরই হয়েছে। তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী ঘটনাবলীর প্রতি একটু দৃষ্টিপাত করলেই তোমাদের কাছে এ রহস্য উদঘাটিত হয়ে যাবে। এ পবিত্র কুরআনে তোমাদের শিক্ষার জন্য তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের বর্ণনাও রয়েছে। মুসলিমদেরকে ওই ঘটনাবলী স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তোমরা এ যুদ্ধের ফলাফল দেখে মন খারাপ করনা এবং চিন্তিত হয়ে বসে পড়না। এ যুদ্ধে যদি তোমরা আহত হয়ে থাক এবং তোমাদের লোক শহীদ হয়ে থাকে তাতে কি হয়েছে, কেননা এর পূর্বে তো তোমাদের শক্ররাও আহত ও নিহত হয়েছিল।’ সূরা বাকারায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থাপ্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে, তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে কঠিন নিপীড়নে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে আল্লাহর নবী ও তাঁর সাথীরা আর্তনাদ করে উঠলেন, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে-আল্লাহতায়ালা শান্তনা দিয়ে বললেন, আল্লাহতায়ালার সাহায্য অতি নিকটে’- সূরা বাকারা- আয়াত ২১৪। সূরা আল ইমরানের ১৪২ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তোমরা কি মনে করো তোমরা (এমনি এমনি) বেহেশতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহতায়ালা (পরীক্ষার মাধ্যমে) এ কথা জেনে নেবেন না যে, কে (তাঁর পথে) জেহাদ করেছে এবং তোমাদের মধ্যে কে (বিপদে) কঠোর ধৈর্য্য ধারণ করতে পেরেছে’। এরপর আল্লাহতায়ালা উহুদ যুদ্ধের মুজাহিদগণকে সম্বোধন করে বলেন, ‘ইতিপূর্বেও বহু নবী তাঁদের দলবল নিয়ে ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তোমাদের মতই তাদেরকেও বহু বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, কিন্তু তথাপি তাঁরা দৃঢ়চিত্ত, ধৈর্যশীল এবং কৃতজ্ঞই রয়েছিলেন। তাঁরা অলস ও দুর্বল হননি এবং ধৈর্যের বিনিময়ে তাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ভালবাসা ক্রয় করে নিয়েছিলেন।’ ওহুদের যুদ্ধের সময় জনৈক সাহাবি আমার রাসূল (সা) কে আগলিয়ে ধরে রেখেছিলেন।

কাফেরগণ আমার রাসূল (সা) কে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি তীর নিক্ষেপ করতে থাকে, তবুও রাসূল (সা) কে রক্ষা করেছিলেন সেই বীর সাহাবি। ওহুদ পাহাড়ের প্রতিটি মাটির কণায় রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে, এমন রক্তাক্ত পাহাড় আর কোথাও দেখা যায় না। পরে চবি শিক্ষক ড. সোলায়মান এর হৃদয়গ্রাহী মোনাজাত উপস্থিত মুসল্লীদের হৃদয়কে করেছে আন্দোলিত, আলোড়িত। কেউ কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। হযরত আনাস ইব্ন মালিক (রা) কর্তৃক বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সা) ওহুদ যুদ্ধের দিন কেবল সাতজন আনসার ও দু’জন কোরাইশ (মুহাজির) সাথীসহ (শক্রবাহিনী কর্তৃক) অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং তারা তাঁকে (চতুর্দিক থেকে) বেষ্টন করে। তখন তিনি বলেন ঃ কে আমার পক্ষ থেকে শক্রদের প্রতিহত করবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। অথবা বলেনঃ কে জান্নাতে আমার সাথী হবে? তখন আনসারদের ভিতরকার এক ব্যক্তি এগিয়ে যুদ্ধ শুরু করলেন এবং অবশেষে শহীদ হলেন। এরপর পুনরায় তারা তাঁকে ঘিরে ফেলল এবং অনুরুপভাবে লড়াই করতে করতে তাঁদের সাতজনই শহীদ হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা (কোরাইশরা) সঙ্গীদের প্রতি সুবিচার করিনি। (আমরা বেঁচে রইলাম, অথচ তাঁরা শহীদ হলেন)-সহীহ্ মুসলিম শরীফ- ৪৫০৬। ওহুদ যুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক ময়দানের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেতভাবে যখন আমরা মোনাজাত করছিলাম উপস্থিত সবাই তখন ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কেউ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি।

রাসুলুল্লাহ (সা) এর ইন্তেকালের পর যে ক’জন লোক নবুয়তের মিথ্যা দাবী করেছিল, মুসাইলেমা ছিল তাদের অন্যতম। হযরত আবু বকর (রা) তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং সেই জিহাদেই ওয়াহ্শী মুসাইলেমাকে হত্যা করে হামযাকে হত্যা করার প্রায়শ্চিত করে, সহীহ্ রোখারী-৩৭৭০। সূরা আল ইমরানের ১৬৬ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘(ওহুদের ময়দানে) দু’দলের সম্মুখ লড়াইয়ের দিনে যে (সাময়িক) বিপর্যয় তোমাদের উপর এসেছিল, তা (এসেছে) আল্লাহর ইচ্ছায়, (এর দ্বারা) তিনি জেনে নিতে চান, কারা সত্যিকার মোমেন।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট