চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

চট্টগ্রামের ক্রিকেট কিছু প্রসঙ্গকথা

আজহার মাহমুদ

৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

ব্যা ট বলে র খেলা ক্রি কে ট। ক্রি কেট আমাদের আবেগ আমাদের ভালোবাসা। একসময় সেটা ফুটবল আমাদের অস্তিত্বে থাকলেও দিন দিন ক্রিকেট আমাদের অস্তিত্ব দখল করে নিচ্ছে। এ দখল করার কারণ হচ্ছে আমরা ক্রিকেটে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নতি করছি। এইযে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ এবং টান, এটা সাকিব-তামিমদের দেখেই হয়েছে। এরপর বর্তমান সময়ে নতুন নতুন অনেক তারকা বাংলাদেশে এসেছে। যার মধ্যে অন্যতম মোস্তাফিজ। ছোট বেলা থেকে ছেলেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সেনাবাহিনী তৈরী করার স্বপ্ন দেখেন অনেক বাবা-মা। ঠিক তেমনি ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নও দেখেন বর্তমানে অনেক বাবা-মা। সবাই যে প্রতিভাবান তা নয়। তবে অনেকেই যে আগামী দিনের সাকিব, গেইল কিংবা রশিদ খানের চেয়ে সেরা খেলোয়াড় হতে পারে সেটাও আমাদের ভাবনায় রাখতে হবে। ভারতে যখন শচিন ছিলো তখন অনেকে ভেবেছিলো তার মতো ব্যাটসম্যান ভারতে আর কাউকে পাওয়া যায় নাকি সন্দেহ। কিন্তু সেই ভারত তার পরে পেলো শচিনের চাইতে আরও বেশি কার্যকর ব্যাটসম্যান বিরাটকে। যাকে রান মেশিন বললেও ভুল হবে না। বাংলাদেশেও সেরকম অনেক প্রতিভা রয়েছে। যার সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন হয়তো আমরা নিতে পারছিনা। আমরা এখনও আশরাফুলের মতো ব্যাটসম্যন পাইনি। পাইনি রাজ্জাক, রফিকের মতো স্পিনার। যারা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশকে সার্ভিস দিয়েছে। এখন যেসব খেলোয়াড় আসে তারা দু’দিন পর হারিয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের ভাবনার বিষয়। আর এসবরে মূলে রয়েছে আমাদের ক্রিকেট একাডেমিগুলো। আমি অন্য জেলা নিয়ে না বলে শুধু চট্টগ্রাম নিয়ে বলি।

চট্টগ্রামের খেলোয়াড় বলতে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন তামিম। এরপর নাঈম হাসানকে দেখলাম। ইয়াসির আলি, ইরফান শুক্কুর, আরফাত মিশু ছাড়া বলার মতো খুব বেশি নাম নেই যারা জাতীয় পর্যায়ে ভালো ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ক্রিকেটের এমন অবস্থা আগে ছিলো না। আফতাব আহমেদ, নাফিস ইকবাল, আকরাম খান, নান্নু, এনামুল হক মনি সহ তখনকার খেলোয়াড়রা যেভাবে চট্টগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এখন সেটা তামিমের একাই করতে হয়। এর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা চট্টগ্রামের ক্রিকেট একাডেমিগুলোর দায়িত্বহীনতা। চট্টগ্রামে ছোটখাটো মিলিয়ে ১৭টির অধিক ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে।

যাদের কাজ হচ্ছে ক্রিকেট শেখানো। কীভাবে বল করতে হয় আর কীভাবে ব্যাট ধরতে হয় এবং ক্রিকেটের নানান দিক শেখাতে শেখাতে এক সময় ছেলেটার বয়স শেষ হয়ে যায় তবে তার ক্রিকেটার হয়ে উঠা আর হয় না। এরকম অনেক গল্প রয়েছে চট্টগ্রাম শহরে। বর্তমানে যে বিষয়টা সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে এসব একাডেমিগুলোর অনিয়ম এবং ব্যবসায়িক মনোভাব। এসব একাডেমিতে সর্বনি¤œ প্রায় তিন থেকে সাতশত পর্যন্ত ছাত্র থাকে। কিন্তু এতোগুলো ছাত্রের মধ্যে শিক্ষক থাকেন দু থেকে তিন জন। যার মধ্যে মূল শিক্ষক কিংবা শিক্ষকতা করার যোগ্যতা থাকে একজনের। যিনি পরিচালনা করেন একাডেমি। কয়েকটি একাডেমির শিক্ষক আছেন যারা ক্রিকেটের সাথে অতীতে কতটুকু জড়িত ছিলেন এবং তাদের কতটা দক্ষতা রয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের। শুধু তাই নয়, কোন একাডেমি থেকে কতজন খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে খেলছে এটাও মনিটরিং করার বিষয়। চট্টগ্রামের কয়েকটি একাডেমির ছাত্রদের সাথে আলাপ করে জানা যায় তাদের চাহিদা এবং অভিযোগের কথা। নাম উল্লেখ না করার শর্তে একটি একাডেমির ছাত্র বলেন, একাডেমির কোচ টুর্নামেন্টের আয়োজন করবে বলে প্রায় ৫০ জনের অধিক খেলোয়াড় থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়ে আর সেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন নাই। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাচ খেলতে পারে না এসব ছাত্ররা। এসব একাডেমির নিজস্ব কোনো মাঠও নেই। জিমনেসিয়াম কিংবা ক্রিকেটের সরঞ্জামের অভাবের কথাও হতাশার সুরে বলেন কয়েকটি একাডেমির ছাত্র। অনেকে ঢাকায় গিয়ে সেখানের সাথে চট্টগ্রামের কোচিং ব্যবস্থার পার্থক্য সম্পর্কেও বলেন। অভিযোগ রয়েছে। তবে সমাধানের চেষ্টা নেই কারও। তবে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে সিজেকেএস কে। মনিটরিং এবং তদারকি নেই বলেই এসব একাডেমির আজ এমন অবস্থা। তৈরী হচ্ছে না কোনো ভালো মানের খোলোয়াড়। আর একাডেমির পরিচালকরাও নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছেন। কারণ তাদের পেট চললেই হলো। আসলে তাদের না আছে ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা না আছে ক্রিকেটের ভবিষৎ নিয়ে ভাবনা। কয়েকটি একাডেমি ব্যতিত বেশিরভাগ একাডেমিই ব্যবসায়িক লক্ষ্য নিয়ে এসব একাডেমি পারিচালনা করে। যার ভবিষ্যৎ চট্টগ্রামের ক্রিকেটের অন্ধকার। সেই বিপদ সংকেত এখনই দেখা দিচ্ছে। তাই বিসিবি, সিজেকেএস নয় শুধু স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রীর উচিৎ চট্টগ্রামের ক্রিকেটের উপর সুনজর দেওয়া। তবেই এ আশনি সংকেত থেকে চট্টগ্রামের ক্রিকেট বাঁচবে।

আজহার মাহমুদ প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট