চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

বিষ্ফোরণে ৯ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু অনুমোদন ছাড়া গ্যাস তৈরি রোধ করুন

২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

তৈরিকৃত রাসায়নিক গ্যাস দিয়ে বেলুন ফোলানো এবং ফুলিয়ে বিক্রি করার ব্যাপারটি কী ভীষণ প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক তা রূপনগর ট্র্যাজেডি আমাদের চোখে আরেকবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ ধরনের এক দুর্ঘটনায় গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় ৯ শিশু নিহত হয়েছে। আরো কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আগেও অনেকবার এ ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে অনেকেই। তারপরও কেনো এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসাটি বন্ধে কঠোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে কঠোর হলে রূপনগর ট্র্যাজেডি দেখতে হতো না নিশ্চয়ই।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বুধবার রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করছিলেন এক ব্যক্তি। রং-বেরঙের বেলুনের আকর্ষণে তাকে ঘিরে ভিড় করছিল শিশুর দল। হঠাৎই প্রচ- শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে ল-ভ- হয়ে যায় ঘটনাস্থল। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকে কয়েক শিশুর নিথর দেহ।

বিস্ফোরণে কারও হাত, কারওবা পা উড়ে যায়। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসে কারও কারও। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পাঁচ শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) মারা যায় আরও এক শিশু। বৃহস্পতিবার মারা যায় আরো ৩ জন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশিত খবর বলছে, রূপনগরের বস্তিঘেঁষা এলাকায় দু-একদিন পরপর ভ্যান নিয়ে গিয়ে বেলুন বিক্রি করেন অনেকেই। স্থানীয় দরিদ্র শিশুদের অনেকে টাকার বদলে কুড়িয়ে পাওয়া বোতলসহ বাতিল সামগ্রী জমা দিয়েও বেলুন নিত তার কাছ থেকে। দুর্ঘটনার দিনও এটা-সেটা নিয়ে যায় শিশুরা। কিন্তু তারা কল্পনাও করতে পারেনি তাদেরকে মৃত্যু হাতছানি দিচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সিলিন্ডারে গ্যাস না থাকায় বেলুন বিক্রেতা পানির সাথে পাউডার জাতীয় কিছু মিশিয়ে সিলিন্ডারে ভরার সময়ই ঘটে বিস্ফোরণ।

এতে পাশে থাকা শিশুরা ছিটকে পড়ে দূরে। বিস্ফোরণের আগুনে ঝলসে যায় তারা। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে চার শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া যায়।

শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই এভাবে বেলুন বিক্রি করা হচ্ছে শিশুদের কাছে। এ ধরনের কর্মকা- যে চরম ঝুঁকিপূর্ণ তা বহু আগ থেকেই গণমাধ্যমের বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি কখনো। বিভিন্ন স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন এ ব্যাপারে সবাই সরব হলেও পরে কোনো উচ্চবাচ্য হয় না। ফলে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ তৎপরতাও প্রায় নির্বিঘেœ চলছে সারাদেশে। রূপনগরের ঘটনার মূল কারণ হয়তো তদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, বেলুন ফোলানোর কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোর প্রায় শতভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। সাধারণত হাসপাতালের পরিত্যক্ত সিলিন্ডারগুলোই এসব কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে যায় শতভাগ। আবার বেলুন বিক্রেতারাও নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে কৃত্রিম গ্যাস তৈরি করে, যা মারাত্মক দুর্ঘটনা ডেকে আনে। যদি এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারী থাকতো তাহলে এমন ঝুঁকিপূর্ণ তৎপরতা নিশ্চয়ই বন্ধ হতো। এতে আমাদের শিশুরাও নিরাপদ থাকার সুযোগ তৈরি হতো।

আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে আর নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের এখনই এ বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পর শাস্তির চেয়ে আগেই এ ধরনের দুর্ঘটনার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আইন অনুযায়ী অনুমোদন ছাড়া গ্যাস তৈরি ও ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহারও দ-নীয় অপরাধ। যারা এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের নিবৃত্ত করতে ও শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবশ্যই তৎপর হতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট