চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সিঙ্গাপুরের সানতোষা দ্বীপ

আশ্ফা খানম

১ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

সিঙ্গা পুরে আমা দের অবস্থান মাত্র তিন দিনের। আমা দের আজ কের সিডি উলে দুপুর দুইটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সানতোষা আইল্যান্ডে এ কাটাবো। তাই সকালের সময়টাকে আমরা চায়না টাউন ঘুরে দেখতে কাজে লাগায়। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে একটি চায়না টাউন থাকে। সেখানে চাইনীজদের রমরমা ব্যবসা এবং এর আশেপাশে তাদের বসবাস। আমরা সকালের নাস্তা সেরে দু’টি ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করে চায়না টাউনে চলে আসি। সেখানে গিয়ে মনে হচ্ছিল আমরা চীন দেশের কোথাও এসেছি। রাস্তার দু’পাশে চাইনিজ পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে টুকটাক জিনিস কেনাকাটা করে আবার হোটেলে ফিরে আসলাম। আমরা ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে নিই। উল্লেখ্য বাংলাদেশ থেকে আজকে আরো একটি পরিবার আমাদের সফরসঙ্গী হতে যাচ্ছেন। তিনি হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জিয়াউদ্দীন খালেদ চৌধুরী। তিনি তার একমাত্র কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। সান্তোষায় তারাও আমাদের সফরসঙ্গী হবে জেনে খুব ভালো লাগলো। অত্যন্ত পরোপকারী ও বিনয়ী ব্যক্তি জিয়াউদ্দিন ভাই। তার স্ত্রীও খুব নরম স্বভাবের মিশুক মানুষ। উনারা সিংগাপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন। পূর্বেই তাদের সাথে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে আমরা লাঞ্চ সেরে একসাথে আমাদের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভাবছিলাম এক সময় অপরাধের হার অপ্রতিরোধ্য গতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। সিঙ্গাপুরকে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বা “প্রাচ্যের শিকাগো” হিসেবে অভিহিত করা হতো। কিন্তু দায়িত্বে সৎ পেশাদারিত্বে দক্ষ এবং মেধায় যোগ্য সুসংগঠিত পুলিশবাহিনী আধুনিক ও নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরকে গড়ে উঠতে উল্লেখোগ্য ভূমিকা পালন করে । ফলে সিঙ্গাপুরে অপরাধের হার একেবারে কমে গেছে। ‘সানতোষা’কে পূর্বে পুলাও ব্লাকাং মাতি বলা হতো।

সানতোষার মালয় অর্থ হলো শান্তির জায়গা। ১৯৭০ সালে জায়গাটি জনসাধারণের সম্মতিতে পুন:নামকরণ করে সানতোষা রাখা হয়। এরপর সানতোষা ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন গঠন করে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৭২ থেকে পর্যটন স্পট করার লক্ষ্যে এ দ্বীপের উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়। এটি সিঙ্গাপুরের একটি রিসোর্ট দ্বীপ। পূর্বে এখানে ব্রিটিশ মিলিটারীদের ঘাঁটি ছিল এবং জাপানী বন্দীদের যুদ্ধক্যাম্প ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে দ্বীপটির নাম পরিবর্তন করে ‘সানতোষা’ রাখা হয় এবং একটি পর্যটন স্পটে পরিণত করা হয়। এখানে প্রতি বছর ২০ মিলিয়ন পর্যটক আসে। এখানে আকর্ষণীয় নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে ২ কি.মি. লম্বা বীচ, ২টি গলফ কোর্স, মারলিয়ন টাওয়ার, ১৪টি হোটেল, থীম পার্ক ইউনিভার্সেল স্টুডিও সিংগাপুর এবং সিংগাপুরের অন্যতম দুটি ক্যাসিনোর একটি সানতোষায় রয়েছে। প্রায় ৪২০ মিলিয়ন সিংগাপুরী ডলার এর বেসরকারী এবং ৫০০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরী ডলার এর সরকারী বিনিয়োগের মূলধন সৃষ্টি করে দ্বীপটিকে পর্যটনের স্পট তৈরীতে সাজানো হয়। সানতোষা এবং মাউন্ট ফেভার এর মাঝখানে ১৯৭৪ সালে সিঙ্গাপুরের প্রথম ক্যাবল কার সিস্টে চালু করা হয়। প্রথমে দ্বীপটিতে সিঙ্গাপুর নেভীর ঘাঁটি থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে তা সানতোষা থেকে পুলাও ব্রানি দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়। সানতোষার মনোরেল ১৯৮২ সালে দ্বীপের পশ্চিম ভাগ পর্যটকদের ঘুরে দেখাবার জন্য আটটি স্টেশন থেকে পর্যটকদের তুলে নেবার ব্যবস্থা করে।

সিঙ্গাপুরের এই দ্বীপ বিভিন্ন কারনে খুবই সুপরিচিত ও বিখ্যাত। সাবেক রাজবন্দী এবং নোবেল পুরস্কার মনোনীত থাইপো তার ২৩ বছরের কারাবন্দী জীবন থেকে ১৯৮৯ সালে মুক্ত হন। তিনি এরপর প্রায় সাড়ে ৩ বছর এই সানতোষা দ্বীপে নির্বাসিত হন।

এছাড়াও ২০১৮ সালের ১২ই জুন নর্থ কোরিয়া ও ইউনাইটেড স্টেট সামিত যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় তা এই সানতোষার ক্যাপেলা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য এই নিরাপদ ভেন্যুটি হোয়াইট হাউজ মনোনীত করে।

যথাসময়ে প্রায় ১২ সিটের মাইক্রো গাড়ী নিয়ে আমাদের ড্রাইভার হাজির হয়।

আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। গাড়ীর চালক পথে যেতে যেতে সানতোষা দ্বীপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেন এবং পথে দেখতে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন ও উন্নয়নের গল্প করতে থাকেন।

আশ্ফা খানম শিক্ষাবিদ, নারীউন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট