চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

ধনুষ্টংকার শিশুর ¯œায়ুকলাকে আক্রমণ করে

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

ধনুষ্টংকার শিশুদের ৬টি মারাত্মক রোগের মধ্যে অন্যতম। এ রোগ হয়ে থাকে ‘ক্লসট্রাইডিয়াম টিটানি’ নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবাণুর সংক্রমণে এ রোগ সংক্রমিত হলে রোগীর মাংশপেশী টানটান ও শক্ত হয়ে যায়। খিঁচুনী দেখা দেয় মাঝে মাঝে।

জীবজন্তুর মল ধুলা মাটি বিশেষত সার ব্যবহার করা হয়েছে এ রকম জমিতে এ রোগের জীবাণু ছীড়য়ে থাকে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ছিড়ে গেলে এ রন্ধ্রপথে রোগজীবাণু শরীরে ঢুকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়। শিশু জন্মের পরই নাড়ি কাটার সময় যথেষ্ট সতর্কতা ও বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা না হলে এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে। চামড়ার ভিতর দিয়েই এ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। কেউ কেউ অবশ্য শ^াসনালী বা অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি ভেদ করে সংক্রমণের কথা বলেছেন। এ জীবাণু শরীর থেকে বের হয়ে ¯œায়ুকলাকে আক্রমণ করে। প্রান্তিক ¯œায়ু থেকে কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্রে এ বিষ বাহিত হয়। রক্তেও বিষ ছড়ায়। বিষ যখন ¯œায়ুকোষে সম্পৃক্ত হয়ে যায় তখন এন্টিটক্সিন দিয়েও তাকে আর অকেজো করা যায় না। জীবাণু শরীরে ঢোকার ৩ থেকে ২১দিন পর রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়। কোন কোন সময় ১০০ দিনও লাগতে পারে। সংক্রমণের পর রোগলক্ষণ প্রকাশ পেতে যত দেরী হবে রোগের প্রকোপ ও তত কম হবে এবং রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পাবে। এ রোগের লক্ষণকে ৩টি স্তরে বিভক্ত করা যায়। প্রথম স্তরে পেটের দিকে একটা ব্যথা ঘুরে বেড়ায় এবংশরীরে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি দেখা দেয়। এ স্তরেই মাংশপেশীর সংকোচন দেখা যায়। ঢোক গিলতেও অসুবিধা হয় না, যা রোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় স্তরে পেশী টান টান ও শক্ত হয়ে যায়। চোয়ালের মাংশপেশীরও যন্ত্রণা সংকোচন ঘটে। প্রথমে চোয়াল সামান্য শক্ত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়, দাঁতে দাঁত চেপে থাকে মুখ খুলতেই পারে না। মুখের ভাব বিকৃত হয়ে যায়। পেটের মাংশপেশীও শক্ত হয়ে যায়। মাংশপেশীর টান ভাব যত বাড়তে থাকে ততই মাথা বেঁকে যায়। দেহ ধনুকের মত পিছন দিকে বেকে যায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ টান ভাব প্রকট হয়ে উঠে। সমস্ত গতি হয় শ্লথ, কষ্টকর হয় কোন কিছু গিলতে। শ^াস-প্রশ^াস নেয়াও কষ্টকর হয়ে উঠে ও বুকে কঠিন চাপ পড়ার মত অবস্থা হয়। কণ্ঠস্বর বদলে যায়।

তৃতীয় স্তরে রোগ আরও গুরুতর হলে শুরু হয় খিঁচুনি। প্রথমে বিলম্বিত লয়ে, তারপর ঘন ঘন। কোন কোন সময় প্রথমবারের খিঁচুনিটাই মারাত্মক হতে পারে এবং এতেই রোগী মারা যেতে পারে। ২/৩ সপ্তাহ বা আরও বেশী সময় ধরে পর্যায়ক্রমে খিঁচুনি হতে পারে। এ খিঁচুনি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। খিঁচুনির প্রচ-তায় রোগীর শ^াসপ্রশ^াস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। রোগ গুরুতর হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনেই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগের প্রকোপ মাঝারি ধরনের হলে ৭ থেকে ১০ দিন খিচুনি থাকে। পরে ক্রমান্বয়ে পেশীর টানটান ভাব কমে আসে। রোগী বাঁচলে পেশীটান ৩ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। শিশুর জন্মের ৭ দিনের মধ্যে তার এ রোগ হলে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।

ধনুষ্টঙ্কারে সবচেয়ে মারাত্মক হল শ^াসপ্রশ^াসজনিত জটিলতা। বেশীর ভাগ রোগীই মারা যায় দম বন্ধ হয়ে। এছাড়া নিমোনিয়া সংক্রমণেও মৃত্যু হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর প্রস্রাব আটকে যায়। দেখা দেয় দারুণ কোষ্ঠকাঠিন্য। সাংঘাতিক আক্ষেপের ফলে জিব ক্ষত বিক্ষত হতে পারে বা চাপে পড়ে কশেরুকায় চিড় ধরতে পারে। হৃদপিন্ডের মাংশপেশীয় প্রদাহও হতে পারে। চোয়াল শক্ত হয়ে মাংশপেশীর যন্ত্রণাহীন সংকোচন হবে এবং সে সঙ্গে পেটের বেদনাহীন সংকোচন হবে এবং যে সঙ্গে পেটের বেদনাহীন টানটান ভাব হবে জ¦র হচ্ছে না এরকম অবস্থা হলেই বুঝতে হবে ধনুষ্টঙ্কার হয়েছে।

ধনুষ্টঙ্কার যাতে না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের ধনুষ্টঙ্কারে প্রতিষেধক টিকা (টিটেনাস টকসয়েড) দিলে প্রসবকালে তার যেমন এ রোগ হবার ভয় থাকে না তেমনি নবজাতক জন্মাবার পর তার ও ঐ রোগ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। ধনুষ্টঙ্কার প্রতিরোধের জন্য এখন পৃথিবীর সব দেশেই শিশুদের ৩ মাস বয়সে ট্রিপল এন্টিজেনের প্রথম ডোস দেয়া হয়। তারপর ৪ মাস বয়সে একবার এবং ৫ মাস বয়সে আর একবার একত্রিত প্রথম ডোস দেয়া হয়।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ
সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট