চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

দুধভাতে উৎপাত : বিশ^াস-বিভ্রমে মানুষ

মুহাম্মদ আবু নাসের

২৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিনের খাবারে ভেজাল-দূষণে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। মাছ-মাংস, ফলমূল, শাক-সবজি থেকে শুরু করে চাল-ডাল, তেল-নুন, হলুদ মরিচ, দুধ-দই-ঘি কীসে ভেজাল নেই? কীসে মেশানো হচ্ছে না মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক? কীসে নেই ভয়ংকর ফরমালিন, অ্যান্টিবায়োটিক, সিসার ন্যায় প্রাণঘাতী নানা উপাদান? সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে আর ভেজাল ও দূষিত খাদ্যের ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষও দীর্ঘদিন ধরে এসব নিয়ে হা-হুতাশ করে যাচ্ছে। অবশ্য সাম্প্রতিককালে খাদ্যে ভেজাল-দূষণ রোধের জন্য জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই-এর তৎপরতা এবং উচ্চ আদালতের নানা নির্দেশনায় সাধারণ মানুষ-এর মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল কিন্তু এবার বাজারে থাকা নানা ব্রান্ডের দুধের মান নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে চলে গেছেন দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষক এবং সরকারি মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা।

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে সেসব জেনে মারাত্মক বিভ্রান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যে ভয়াবহ ভেজাল দূষণের এই কালে আক্ষরিক অর্থেই দুধভাতে উৎপাতে পড়া মানুষ এখন কাকে বিশ^াস করবে – বিএসটিআইকে নাকি বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকদেরকে? দেশের বাজারে যেসব তরল দুধ পাওয়া যায়, সেগুলোর মান নিয়ে দুই রকম প্রতিবেদন দিয়েছে বিএসটিআই ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। বিএসটিআই এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের দ্বারা অনুমোদিত পাস্তুরিত তরল দুধে কোন ক্ষতিকারক উপাদান নেই। অন্যদিকে বাজারে প্রচলিত সাতটি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেসবে মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ও তিনটি অপাস্তুরিত দুধে ফরমালিন এবং ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের গবেষকরা। গবেষকরা বাজারে পাস্তুরিত যে সাতটি দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছেন তা হচ্ছে – মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলো চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো।

নাগরিকদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ অনুসারে ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। পাশাপাশি গত বছর থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস’ পালিত হচ্ছে।

দেশে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ২০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান ও আছে। কিন্তু মোড়কজাত খাদ্য বিপণনকারী কোম্পানী এবং খোলাবাজারের খাদ্য বিক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধেই খাদ্যে ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল ও দূষণের অভিযোগ থাকলেও কখনোই কারোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা শোনা যায় নি।

দুধের ন্যায় শিশুখাদ্য এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যসহ খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল দূষণ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট