চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

আলোচনার টেবিলেই সমাধান হোক ক্রিকেটারদের ১১ দাবি

২৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সোমবার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনেকটা আকস্মিক উপস্থিত হয়ে বিশে^র সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা যেভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিসিবির বর্তমান নেতৃত্বের ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করলেন, একইসঙ্গে ‘ধর্মঘট’ ডাকলেন এবং পরের দিন এক সংবাদসম্মেলনের আয়োজন করে বিসিবি সভাপতি যেভাবে ধর্মঘটী খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ‘কড়া’ অবস্থান ব্যক্ত করলেন- তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। দু’পক্ষের এমন আচরণ ও বক্তব্যে অনাকাক্সিক্ষত বিভাজনই স্পষ্ট হয়েছে। এমন চিত্র আমাদের ক্রিকেটের জন্যে মঙ্গলকর নয়। যা আলোচনার টেবিলে বসে সহজেই সমাধান করা যেতো তা বাইরে টেনে এনে কেনো জটিলতার দিকে ঠেলে দেয়া হলো তা বোধগম্য নয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে তিক্ততার পথই শুধু মসৃণ হয়নি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ক্রিকেটে। এমন পরিস্থিতি দেশবাসীকে পীড়া দিয়েছে। দ্রুত সমাধান-উদ্যোগ না নেয়া হলে এমন পরিস্থিতি দেশের ক্রিকেটকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, সোমবার সাংবাদিকদের সামনে ক্রিকেটারদের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভগুলো হঠাৎ করেই আগ্নেয়গিরির মতো উদ্গিরিত হয়েছে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে ৪৯ জন ক্রিকেটারের উপস্থিতিতে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ক্রিকেটারদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া ও কোয়াবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ, বেতন-ম্যাচ ফি বাড়ানো, ক্রিকেটারদের অনুশীলন সুবিধা বাড়ানো, ক্রিকেটারদের পাশাপাশি দেশি কোচ, আম্পায়ার এবং মাঠকর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, জাতীয় ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে ফরম্যাট চালু করা, ঘরোয়া ক্রিকেটের টুর্নামেন্টগুলোর জন্য নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকা, বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বকেয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা, বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথা ফিরিয়ে আনা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন ক্রিকেটাররা। যতদিন পর্যন্ত তাদের এসব দাবি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) না মানবে, ততদিন পর্যন্ত ম্যাচ অনুশীলন থেকে শুরু করে ম্যাচ খেলাসহ সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকা- থেকে নিজেদের বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসানরা। টুইটারের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়ার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন মাশরাফিও। সেদিন মিরপুর একাডেমি মাঠে প্রথম সারির দশ ক্রিকেটার একেক করে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন মিডিয়ার সামনে। ক্রিকেটারদের এই ধর্মঘটের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আসন্ন ভারত সফর।

ক্রিকেটারদের এমন দাবির প্রেক্ষাপটে দেশবাসী আশা করেছিলেন দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু তা না করে উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে বিসিবি সভাপতি ক্রিকেটারদের ধর্মঘটকে ক্রিকেট ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করলেন। তাঁর মতে, ‘দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করতেই এই ধর্মঘট। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যার অংশ হিসেবে ক্রিকেটাররা আন্দোলনে নেমেছে এবং ধর্মঘট ডেকে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে।’ এমন মন্তব্যে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। আর এ সুযোগটা নিতে পারে আমাদের ষড়যন্ত্রকারীরা। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ক্রিকেটারদের কোন দাবি থাকলে তা নিয়ে আগে বোর্ডের দ্বারস্থ হতে পারতেন।

এরপর সেই দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন, ধর্মঘট হতে পারতো। আমরাও তা-ই মনে করি। তবে এখন সেসব নিয়ে অভিমান করার চেয়ে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানই শ্রেয়। এতেই আমাদের ক্রিকেটের মঙ্গল, দেশের মঙ্গল। আমরা আশা করবো, দুই পক্ষই বাস্তবতা অনুধাবন করবেন এবং স্বল্পতম সময়ে নিজেদের অবস্থান নমনীয় করবেন। বস্তুত ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে এর বিকল্পও নেই। ক্রিকেট ও দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অলোচনার টেবিলে বসলে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে, সন্দেহ নেই। আমরা উভয় পক্ষের শুভবোধের উদয় দেখতে চাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট