চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুর সুস্থ বিকাশে সুষম খাবার

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্যে নিয়মিত প্রোটিনসহ সুষম খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুর মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ, কর্মপ্রেরণা, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনে পরিস্ফূটিত করার জন্যে এর বিকল্প নেই। বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট বলছে, দেশে কম বয়সী শিশুদের ৪১ শতাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। দেশে বর্তমানে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার। ইউনিসেপে’র ‘ইমপ্রুভিং চাইল্ড নিউট্রিশন’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশ্বের ৮০ শতাংশ খর্বকায় শিশুর বসবাস ১৪টি দেশে। এই তালিকায় বাংলাদেশও আছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে সারাবিশ্বে শিশুপুষ্টির সূচক হিসাবে খর্বাকৃতির (স্টান্টিং) গুরুত্ব পাচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা তাই পুষ্টিপরিস্থিতির উন্নতিতে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের শুরুর দিকে বৃদ্ধি ও উন্নয়নের সময় শিশু যদি লাগাতারভাবে অপুষ্টির শিকার হয়, তাহলে শিশু খর্বাকৃতির হয়। বয়স বাড়লেও তার উচ্চতা তেমন বাড়ে না। শূন্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের এই হিসাবের মধ্যে নেওয়া হয়। খর্বাকৃতির শিশুর মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা শিশুর চেয়ে ৪ গুণ বেশি। শিশুর খর্বকায় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে তার মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ না হওয়ার সম্পর্ক আছে। এর পরিণতিতে শিশুর বোধশক্তির ঘাটতি থাকে, শিশু স্কুলে খারাপ করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে আয়-উপার্জন কম হয়। অন্যদিকে এসব শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুটিয়ে যাওয়ার এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। ব্রাজিল, গুয়াতেমালা, ভারত, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে শিক্ষার্থীদের খর্বাকৃতির একটা ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকদিনের অপুষ্টির ফল হচ্ছে স্টান্টিং বা খর্বাকৃতি। শারীরিক বৃদ্ধির সময় অনেক শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। দীর্ঘদিন এটা চলতে থাকলে শিশুর বৃদ্ধি ঘটে না। শিশু খর্বাকৃতির হয়ে পড়ে। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শুধু বুকের দুধ, ৬ থেকে ২৩ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাদ্য এবং ২৪ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত যথাযথ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার শিশুর সঠিক বৃদ্ধির সহায়ক হলেও সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ সচেতন নয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সরকারি পদক্ষেপগুলোও তেমন কার্যকর ও সুচিন্তিত নয়। ফলে শিশুর পুষ্টিহীনতা ও খর্বাকৃতি রোধে কাঙ্খিত সাফল্য আসেছে না। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে ধীরগতিতে হলেও খর্বকায় শিশুর হার কমছে।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, পাঁচ থেকে নয় বছরের বাড়ন্ত শিশুদের গঠন ও মেধা বিকাশের জন্যে দৈনিক ১,৮২০ থেকে ২,১৯০ কিলোক্যালরি পর্যন্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার দিতে হয় শিশুকে। এর অন্যথায় শিশুর মেধা ও মননের বিকাশ যথানিয়মে হয় না। তারা আক্রান্ত হয় নানা প্রকার রোগব্যাধিতেও। আবার তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও থাকে না প্রয়োজনমাফিক। ফলে শিশুর পুষ্টিহীনতা এড়াতে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সরকার সারাদেশে ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এতে ফলও আসে। তবে তা কাক্সিক্ষত নয়। প্রসঙ্গত, পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন-এ, লৌহ এবং আয়োডিনের অভাব। অপুষ্টির কারণে শিশুরা নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মেধা ও মননেরও বিকাশ হয় না। অপুষ্টির কারণে শিশুদের শেখার ও মনে রাখার ক্ষমতা দুটিই কমে যায়। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। কারণ পুষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষার মান বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর করা যায় না।

আমরা মনে করি, শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থে আরো ব্যাপক পুষ্টি কর্মসূচি চালু করা উচিত। আশার কথা হচ্ছে, সরকার দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিসমৃদ্ধ দুপুরের খাবার প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা যেমন হ্রাস পাবে তেমনি শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। শিশুরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারবে। আনন্দ ও আগ্রহের সঙ্গে পাঠ গ্রহণ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও বাড়বে। টিফিন পিরিয়ডে ক্লাস রেখে বাসায় চলে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে ঝরেপড়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে, বৃদ্ধি পাবে ভর্তির হার। পুষ্টিকর খাবার পাওয়ার কারণে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। পুষ্টিসমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পড়াশোনা, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে শিশুদের মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হলে একটি সুশিক্ষিত সুস্থ ও মেধাবী জাতি গড়ার পথও মসৃণ হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট