চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারী নির্যাতন থেমে নেই সমাজমানস পরিবর্তনে উদ্যোগ নিন

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে এখন অতি দ্রুত গতিতেই হচ্ছে নারীর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। বাড়ছে নারীশিক্ষার হারও। বর্তমানে দেশে নারীশিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বর্তমান সময়ে সরকারের নারীবান্ধব নীতির কারণে নারীরা সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এটি আমাদের জন্যে একটি আশা জাগানিয়া সুখবর নি:সন্দেহে। কিন্তু যে হারে নারীর অগ্রগতি হয়েছে সে হারে কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি আশানুরূপ। বরং ক্রমান্বয়ে এ সহিংসতা বেড়েই চলেছে। এটি কারো কাম্য নয়। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্যে ফলদায়কও নয়।

এক গবেষণাতথ্যে দেখা যাচ্ছে, সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী কোন না কোনভাবেই যৌননির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশে এ হার ৬০ শতাংশ। পারিবারিক বা নিকট আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরাই বেশী যৌননির্যাতনের শিকার হন বলে গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৭৮ জনকে। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশই শিশু ও কিশোরী। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক ধর্ষণের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। সমস্যাটি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে এ কারণে যে, এই দেশে ধর্ষণের বিচার করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দুর্বলতা ও দীর্ঘসূত্রতা অত্যন্ত প্রকট। আবারর সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ফলে অত্যন্ত কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। গৃহনির্যাতনের ঘটনাও বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশুনির্যাতনও।

দেশে শিশু ও নারীনির্যাতনের এই চিত্র চরম উদ্বেগের। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর নানা গবেষণায়ও এ ধরনের চিত্র আগে বহুবার উঠে এসেছে। পত্রপত্রিকার নানা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও নারীর ওপর যৌনসন্ত্রাসের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এর মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে খামখেয়ালির কারণে নির্যাতন রোধে কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। আমরা মনে করি, জরুরি ভিত্তিতে নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- জনসচেতনতা তৈরি, নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, নারীকে ‘মানুষ’ হিসেবে চিন্তা করা, নিজেদের মধ্যে বোধ তৈরি করা, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, প্রত্যেকটি স্কুলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যে কমিটি আছে তা কার্যকর করা, গণমাধ্যমে নারীকে বিকৃতভাবে বা বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন না করা, নারীবিষয়ক সংবাদের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে যথাযথভাবে তুলে ধরা, সরকারের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা, নারীকে উৎপাদক হিসেবে দেখা, কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতায় বায়োলজিক্যাল শিক্ষায় আগ্রহ করে তোলা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি। বিনোদনমূলক শিক্ষা যেমন পথ ও মঞ্চ নাটক জারি গান, পালা গান, কুইজ শো, বিতর্ক প্রতিযোগিত, ভিডিও শোর ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন বাড়াতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজ মানসেও পরিবর্তন আনতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট