চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ

ফজল আহমদ

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পৃ থিবীর ইতি হাসের জগন্য তম গণহত্যা করেছে পাকি স্তানের বর্বর সামরিক বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর বিহারী রাজাকার আলবদর, আল সামস, মুজাহিদ বাহিনী, মিলিশিয়া বাহিনী, ১৯৭১ সালে এই গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিল পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয়ভাবে মূল পরিকল্পনাকারী ছিল শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন চার্চলাইট নাম দিয়ে শুরু হওয়া গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পরিচালিত সেই পৈশাচিক নারকীয় হত্যাকান্ড থেকে বাদ যায়নি বন্দর নগরী চট্টগ্রাম তথা সমগ্র চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রামে পাকিস্তানী সামরিক অফিসার বিগ্রেডিয়ার আসনগরীর নেতৃত্বে ২৫ মার্চ ১৯৭১ চট্টগ্রামে গণহত্যা শুরু হয়। তা পর্যায়ক্রমে পুরো শহর, শহরতলী জেলার গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত, চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গা, হালিশহর গোডাউন, পাহাড়তলী, শেরশাহ কলোনী মেডিকেল কলেজ, দক্ষিণ কাট্টলী নাথপাড়া চট্টগ্রাম বন্দর জেডি এলাকাসহ প্রায় ১১৫টি স্থানে চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার লোককে হত্যা করে, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন পত্রিকা মারফত জানা গেছে যে, শুধু চট্টগ্রাম জেলায় ৪/৫ লক্ষ লোক হত্যা হয়।

চট্টগ্রাম সেনানিবাস বর্বরতার স্বাক্ষী, এখানে প্রায় ২৫০০ নিরস্ত্র বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করা হয়। সেনানিবাসের বাহিরে প্রথম হত্যাকা- সংগঠিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায়, বন্দরের ১৭ নং জেটিতে ২৭ মার্চ প্রায় ১১২ জন নিরস্ত্র বাঙালি সৈনিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। যাদের সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের নামে জেটিতে নিয়া হয়েছিল। ৩১ মার্চ হালিশহর নাথপাড়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও তাদের এ দেশিয় দোসর বাহিনীদের সহযোগিতায় ৩৯ জন নিরীহ এলাকাবাসীকে হত্যা করে, একই সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় নাথ পাড়ায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৪০ জন ইপিআর সদসকে। নাথপাড়া ও আবদুর পাড়া গণহত্যায় বুলেট ব্যবহার করা হয়নি ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার, জবাই করে, পেট চিরে, মাথা কেটে, বর্শায় বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।

হালিশহর সিভিল সাপ্লাই গোডাউনে অভ্যন্তরে পাকিস্তানি বাহিনী চালু করেছিল নির্যাতন কেন্দ্র, বিজয়ের পর উক্ত গোডাউন গিয়েছিল ৩৮টি লাশ, প্রবর্তক সংঘের পাহাড় ছিল একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বর্বরতার আর একটি কেন্দ্র, গরিবুল্ল্যা শাহ মাজারের লাশের এলাকায় ছিল সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি, এখানে ট্রাকে ট্রাকে লাশ এনে গর্ত করে গণকবর দেয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নৃশংসতার স্বাক্ষী পাহাড়তলী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে প্রায় ১০ হাজার লোক হত্যা করা হয়, একদিনে বধ্যভূমিতে ১০ নভেম্বর ১৯৭১ হত্যা করা হয় প্রায় ৪০০ জনকে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনের রেল ঝাউতলা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে সকল লোককে ট্রেন থেকে নামিয়ে হত্যা করা হয়। এমনি ভাবে চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষকে এই প্রিয় মাতৃভূমির লড়াইয়ে অকাতরে জীবন দিয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি বীর মুক্তিযোদ্ধ ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর হাতে রের্সকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।

আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর। মুক্তিযুদ্ধের জীবন দানের ফলশ্রুতিতে পেয়েছি, বিজয়ের আনন্দ, মহান স্বাধীনতা, কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বিপ্লবের তীর্থস্থান চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ, চট্টগ্রামবাসী ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে, আবার স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে চট্টগ্রামবাসী বাধ্য হয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যায় ভাষা শহীদদের শহীদ মিনারে, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সচেতন মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিগত বছরগুলোতে অবিরাম দাবি জানিয়ে আসছে একটি কেন্দ্রীয় ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ’ এর জন্য কিন্তু অনন্ত পরিতাপের বিষয় চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগে দৃশ্যমান নয়, সচেতন মানুষ খুবই হতাশ, সরকার আসে সরকার যায়, চট্টগ্রামবাসীর দাবী পূরণ হয়। এই অবহেলার একদিন জবাবদিহি করতে হবে শাসক দলকে, চট্টগ্রামের বীর জনগণের রক্তক্ষয়ী লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসকে অবক্ষয় কোন সুযোগ নাই, এই দাবী অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তাহলেই পাঁচ লক্ষ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে, চট্টগ্রামবাসী তাদের প্রিয়জনকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।

লেখক : গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা; সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট