চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বলিষ্ঠ প্রতিরোধ উদ্যোগ নিন

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সাঁতার শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় জনসচেতনতার অভাবে দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। গত সোমবারও কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নে পুকুরে ডুবে একই পরিবারের দুই কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ হৃদয়বিদারক ঘটনায় এলাকায় চলছে শোকের মাতম। শিশুদের এমন করুণ মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

দৈনিক পূর্বকোণের খবরে প্রকাশ, সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বশর সওদাগরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আঁখি ও ফাতেমা নামের নিহত দুই শিশুর বয়স যথাক্রমে ৭ ও ৮ বছর। তাঁরা সম্পর্কে পরস্পর চাচাতো-জেঠাতো বোন। প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, সোমবার বিকেলে বাড়ির আঙিনায় খেলছিল তারা। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত আটটার দিকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পুকুরে জাল ফেলে খোঁজা হলে এক পর্যায়ে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

ইদানিং পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে। সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে দেশে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও বিপরীতে বাড়ছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার। আর দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অসচেতনতা এবং সাঁতার বিষয়ে শিক্ষার অভাব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে যেসব শিশু মারা যায় তাদের প্রায় ৯৯ ভাগই সাঁতার জানে না। আবার তাদের গতিবিধির ওপর থাকে না পরিবারের নজরদারীও। বোঝাই যাচ্ছে, শিশুদের প্রতি পরিবারের লোকজনের যথাযথ নজর না থাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। যদি যথাসময়ে তাদের সাঁতার শেখানো হতো এবং কোথায় যাচ্ছে, কী করছে ইত্যাদি বিষয়ে নজর রাখা হতো তাহলে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু দেখতে হতো না নিশ্চয়ই। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের সচেতনতা ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পানিতে ডোবাসহ বিভিন্ন ধরনের জখমে মৃত্যু ও আহতদের নিয়ে পরিচালিত জাতীয় জরিপ মতে, দেশে প্রতিদিন ৫৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোর ৪০ জন এবং বয়স্ক ১৩ জন। সেভিং লাইভস ফ্রম ড্রাউনিং প্রজেক্ট (সলিড) ইন বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যা মোট শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশ। আর প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রসঙ্গত, দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বেশিরভাগ খবর গণমাধ্যমে আসে না। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর হার আরো বেশি হতে পারে। আর বাংলাদেশে এ মৃত্যু ঘটে প্রধানত গ্রামাঞ্চলের পুকুর, ডোবা, নালা, লেক ও নদীতে। শিশুদের ওপর নজর না রাখা, সাঁতার না জানা, পুকুরে বা নালায় সুরক্ষা না থাকা পানিতে ডোবার ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলেও তা প্রতিরোধে দেশব্যাপী কোন বলিষ্ঠ কর্মসূচি নেই।

আমরা মনে করি, পানিতে ডুবে মৃত্যুকে ‘নিয়তি’ বলে আর নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। একের পর এক পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকবে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই এ ব্যাপারে অভিভাবক তথা পরিবারসহ সবারই দায়িত্ব আছে সেটি মনে রাখতে হবে। মৃত্যুর কার্যকারণগুলো ব্যাখ্যা করে সে অনুযায়ী জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সাঁতার শেখার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে; একইসঙ্গে শিশুদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট