চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

স্বাগত হিজরি নববর্ষ ১৪৪১

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

হিজরি নববর্ষের নতুন চাঁদ ও নবপ্রভাত আজ নতুন জীবনের বারতা নিয়ে এসেছে। দুঃখ-গ্লানি, বেদনা-ব্যর্থতা, হতাশা-হাহাকার, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, সহিংসতা-অস্থিরতা সব পেছনে ফেলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের আশায় প্রাণের গভীর আবেগে উদ্বেল আজ সমগ্র মুসলিমবিশ্ব। প্রায় দেড়সহ¯্র বছর ধরেই পহেলা মহররম হিজরি নববর্ষ হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে বিশ্বব্যাপী বদলেছে মানচিত্র, বদলেছে শাসক। রাজনীতি-অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ঘটেছে ব্যাপক ওলটপালট। কিন্তু কোনো পরিবর্তনই হিজরি নববর্ষের উজ্জ্বলতাকে এতোটুকু ম্লান করতে পারেনি। উপরন্তু সময় পরিক্রমায় এখন বিশ্বমুসলিমের চিত্তে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে। ইসলামের বিধিবিধান চান্দ্রতারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় বিশ্বমুসলিমের জীবনে হিজরি বর্ষের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। স্বাগতম হিজরি নববর্ষ ১৪৪১।

হিজরি সনের গোড়াপত্তন হয় বিশ্বনবি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মনোয়ারায় হিজরতের স্মৃতিকে ধারণ করে। ইতিহাসবিদ পি কে হিট্টি বলেছেন, ‘হিজরতের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কী জীবনের অবসান ঘটে, যা তাঁর জীবনে সূচিত করে এক নতুন দিগন্তের।’ ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেছেন, ‘হিজরত বিশ্বনবির (সা.) পবিত্র জীবন ও কর্মে নতুন বাঁক আনয়ন করে, ইসলামের ইতিহাসে উন্মোচিত করে বৃহৎ দিগন্তের।’ হিজরতের পর থেকেই ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলিমদের শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয় এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। হিজরতের ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা থেকেই হজরত ওমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে হিজরতের ১৭তম বর্ষে হিজরি সন গণনা শুরু করেন। এ সময থেকেই ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আদর্শগত ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতে মুসলিমরা মহররম মাস দ্বারা বর্ষ গণনা শুরু করে। বাংলাদেশে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ হতে সর্বক্ষেত্রে হিজরী সন ব্যবহার শুরু হয়। উপমহাদেশে প্রায় ৫৫০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে এই হিজরি সন স্বীকৃত ছিল। ইংরেজরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর হিজরি সনের পরিবর্তে ইংরেজি সনের প্রচলন ব্যাপকতা লাভ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। তবে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় হিজরি সনের প্রভাব বিন্দুমাত্র কমেনি। রমযানের রোযা, দুই ঈদ, হজ, যাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরি সন ধরেই আমল করতে হয়। রোযা রাখতে হয় চাঁদ দেখে, ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে। এভাবে অন্যান্য আমলও। মুসলমানদের ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে দিন, তারিখ, মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়। ফলে বিশ্বের মুসলিমদের কাছে ইসলামি সন হিসেবে হিজরি সন অতি পবিত্র এবং অত্যন্ত মর্যাদা ও তাৎপর্যম-িত।
হিজরি নববর্ষকে ঘিরে প্রতিজন মুসলিম নতুনভাবে উদ্দীপিত হয়। হতাশা, ব্যর্থতা ও গ্লানি উপড়ে ফেলে জীবনের জয়গানই বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই হিজরি নববর্ষ শুধু একটি সংখ্যার আবর্তন নয়, একটি জাতির নবরূপায়ণ। বিদায়ী বছরে এক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে মুসলিম জাতি। দুরাত্মা ইয়াজিদের প্রেতাত্মারা সারাবিশে^ সক্রিয়। বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের উপর নির্যাতন নিপীড়নে নিত্য নতুন কারবালার সৃষ্টি করছে তারা। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, মিয়ানমার, চীনসহ সারাবিশ্বে মুসলিমদের উপর চলেছে পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন। রোহিঙ্গাদের গুলি করে হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, যুবক ও শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ করে মারা, মহিলাদের গণধর্ষণ ও হত্যা করার ইত্যাদি ঘটনা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এর মধ্যেই পালিয়ে এসেছে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা। ফলে এদেশের জন্য তৈরি হয়েছে কঠিন চাপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনৈক্য ও পুঁজিবাদী দাশত্বের কারণে এসব ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাকর। আমরা আশা করতে চাই, ১৪৪১ হিজরি বর্ষে এ ধরনের ন্যাকাকারজনক চিত্রের অবসানে বিশ্বমুসলিম ঐক্যবদ্ধ হবে।

নতুন বছরে মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবসাম্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের নতুন শপথে দাঁড়াতে হবে। নতুন বছরের নতুন চদ্রোদয় সব অন্ধকার কেটে আমাদের নিয়ে যাক এমন এক সকালের দিকে যেখানে থাকবে না শোষণ-নির্যাতন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া; সুশাসন ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর অনটনের অন্ধকার। নতুন বছর হোক সবার জন্য সুসময়ের উদ্বোধন। সম্প্রীতি ও শান্তির আলোয় উদ্ভাসিত হোক সমগ্র বিশ্ব। চিরতরে বিদায় নিক অসত্য, অন্যায়, অনাচার ও অশান্তি। নতুন বছরের এই নবীন প্রভাতে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নতুন বছর হোক সবার জন্য কল্যাণময়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট