চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গণপিটুনি রোধে আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা

জুবায়ের আহমেদ

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতুতে বহু শিশুর মাথা লাগবে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে একটি চক্র। এই গুজবের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় কোনো ভিত্তি নেই। সেতু কর্তৃপক্ষও এমন গুজব অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বলে নাকচ করে দিয়েছে। অথচ অশুভ চক্রগুলো এই গুজবকে ছড়িয়ে দিয়েছে সারাদেশে। এই গুজবে বিশ^াসীরা এখন সারাদেশে সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই বাছবিচার ছাড়াই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিচ্ছে। সারাদেশে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ গণপিটুনীর শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, যা চরম অমানবিক। অথচ আইন অনুযায়ী কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে, এমনকি অপরাধী হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করাই নিয়ম। নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে অপরাধীকে পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার নেই কোন নাগরিকের। নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়া স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, এর আগেও নানা সময় নানা গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি চাঁদে দেখা গেছে, গুজব ছড়িয়েও কিছু মানুষকে উসকে দিয়ে বিচারকাজে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিকে উস্কে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে যেকোন সময় যেকোন মুহূর্তে কতেক মানুষ একত্রিত হয়ে কোন অপরাধীকে ধরতে পারলেই আইনের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরাই মারধর করতে করতে মেরে ফেলে, যার অসংখ্য নজির বাংলাদেশে বিদ্যমান। ছিনতাইকারী, ডাকাত, ছেলেধরা কিংবা যেকোন প্রকার অপরাধীসহ অনেক সময় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে রাস্তাঘাটে ‘ধর ধর’ বলে আওয়াজ দিলেও মানুষ কোন কিছু যাচাই না করেই গণপিটুনীতে লিপ্ত হয়, যা কাম্য নয়।
বিনা অপরাধে মানুষের গায়ে হাত তোলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ কোন অপরাধ করলে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া দায়িত্ববান নাগরিকের কর্তব্য, অপরাধী যত বড় অপরাধই করুক না কেনো, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই কোন নাগরিকের, রাষ্ট্রীয় আইনেও এ অধিকার নেই, তেমনি ধর্মীয়ভাবেও অপরাধী শাস্তি দেয়ার অধিকার রাখে শুধুমাত্র আদালত। সাধারণ মানুষের কাজ অপরাধীকে আইনের কাছে তুলে দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশে অপরাধীকে সনাক্তের পর দায়িত্ববান সংস্থা তথা পুলিশবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার বিপরীতে অধিকাংশ সময়েই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, যার মাধ্যমে একটি প্রাণের মৃত্যু হয়, মৃত্যু হয় একটি পরিবারের স্বপ্নের, সর্বোপরি লঙ্ঘিত হয় ন্যায়বিচার। পাশাপাশি উত্তেজনার বশে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ব্যক্তিরা আইনের আওতায় না আসলেও বিবেকের আদালতে অপরাধী হতে হয় নিঃসন্দেহে।
নিরপরাধ কিংবা অপরাধী হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার (আত্মরক্ষা ব্যতীত) অধিকার নেই কোন নাগরিকের। শুধু ছেলেধরা গুজবেই নয়, যেকোন অপরাধজনক ঘটনা সৃষ্টি হওয়ার পর অপরাধীকে সনাক্ত করা গেলে, তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে না নিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হয়। অন্যথায় পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের নিয়ে একা রাস্তায় বেরুতে সাহস পাবে না, অপরাধ করে অনুতপ্ত হওয়া ব্যক্তিও আইনের মাধ্যমে শাস্তি পেয়ে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ পাবে না, নিরপরাধ মানুষ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পাবে না এবং এর মাধ্যমেই গণপিটুনীতে হত্যার মতো নির্মম ও অমানবিক ঘটনা বাড়তেই থাকবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট