চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাজেটে শুল্কবৃদ্ধি তামাকজাত পণ্যের ধূমপানের বিরুদ্ধে দরকার সামাজিক আন্দোলন

২১ জুন, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের ২০১৯-২০ সালের বাজেটে জনদাবীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে তামাকজাত সকল ধরনের নেশাপণ্যের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে, ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে সব ধরনের তামাকপণ্যের। এতে ধূমপায়ীদের ক্রয়-ক্ষমতার উপর বেশ কিছুটা চাপ পড়বে। তবে, সন্দেহ থেকেই যায় যে, কেবল মূল্য বাড়িয়েই তামাক-নেশাগ্রস্তদের কি নিরস্ত করা যাবে। মানসিক সচেতনতা দরকার সবার আগে। যা-ই হোক, এটাও মন্দের ভালো-এ কথা বলাই যায়।
দেশে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা ভাবনায় জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে শুল্ক বাড়িয়ে অতি সাধারণ মানের সিগারেটের প্রতিটি শলাকার মূল্য ক্রয়-ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলা হোক। এতে নি¤œ আয়ের মানুষদের মধ্যে ধূমপানের আগ্রহ হ্রাস পাবে। বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশেই সিগারেটের দাম সবচেয়ে কম। ফলে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশী। স্বাস্থ্য সচেতনতার আজকের দিনগুলোতে ধূমপানকে বিষপানের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এই বিষপান দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও করে জেনে-শুনেই। ফলে, শিক্ষাজ্ঞানহীন যে বিশাল জনতা, তাদের আর দোষ কি? তারা প্রায় সকলেই ধূমপানে অভ্যস্ত হয় নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের এবং নিজেদের পরিবেশের আশেপাশের অন্যান্যদের ধূমপানের পরম আয়েশে নিয়োজিত থাকতে দেখে। এদের মাঝে অধিকাংশ জনই ধূমপানের ক্ষতির দিকটা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাত নয়। তাই, নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
জীবনের নানা দুর্বিপাক, টেনশন, হতাশা, স্মার্টনেস প্রকাশ ইত্যাদির জন্যেও মানুষ সিগারেটের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। তা ছাড়া, বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলোর এক সময়ের নানা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের প্রভাবে মানুষ আজও ধূমপায়ী হয়ে উঠতে কম উদ্বুদ্ধ হয় না। আসলে আজকের বিশে^ তৃতীয় বিশে^র অভাবী জনগোষ্ঠীকে তাদের অপূরণীয় আকাক্সক্ষাকে উসকে দিয়ে নানা ধরনের ভোগ্য পণ্যের প্রতি আকর্ষিত করার জন্যে বহুজাতিক ব্যবসায়ী চক্রগুলো বাজার অর্থনীতির যে ফাঁদ পেতে চলেছে নানা কৌশলে ধূমপানের প্রতি টেনে নেয়ার প্রচেষ্টাও তার মধ্যে একটি। আর এই ফাঁদে আমাদের দেশের হাজার হাজার তরুণ পা দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে জানা যায়, উন্নত দেশগুলোতে ধূমপায়ীর সংখ্যা ক্রমশ নি¤œমুখী হলেও আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এর অর্থ হলো, এদেশে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা যা-ই চলুক না কেনো তা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারছে না। বরং বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলোর সিগারেট পানে উদ্বুদ্ধকরণ কৌশলের কাছে নিষেধাত্মক প্রচারগুলো মার খেয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। মানব শরীরের জন্যে এসব অত্যন্ত বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। ধূমপানের নিকোটিন মূলত নিউরোচের সাব-ইউনিট আলফা-৭ ধারণ করে। ধূমপানের বিষাক্ত নিকোটিন সরাসরি এই ‘ধারকে’ এসে পৌঁছে এবং তা নিউরনে গ্লুটামেট তৈরি করে। এই গ্লুটামেটের প্রভাবে নিউরণে ডোপামিন তৈরি হয়। এই ডোপামিন হল আনন্দ-অনুভূতি তৈরির একমাত্র নিয়ামক শক্তি। এই অনুভূতি সিগারেট পানের পর মিনিট ৪৫ মাত্র কার্যকর থাকে। তবে ক্ষতির তথ্যটি হলো, এই নিকোটিন মূলত ফুসফুসকে আক্রমণ করে। নিকোটিন জমতে জমতে ফুসফুসের রঙই পাল্টে যায়। ফুসফুস ক্রমশ তার কর্মক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং এক সময় পচন ধরারও সম্ভাবনা থাকে। হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগও ধূমপানের কারণে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিকোটিনের বিষক্রিয়া ধূমপানের ক্ষেত্রে সরাসরি ও তাৎক্ষণিকভাবে হয় না, হয় স্লো-পয়জনিং এর মতো ধীরে ধীরে। এই বিষ ধূমপায়ীর শরীর স্বাস্থ্যকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। তখন আর করার কিছু থাকে না। অতএব, ধূমপানের বিরুদ্ধে যদি একটি সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়, তাতেই সুফল অর্জিত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট