চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন

সাইমুম চৌধুরী

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিটি মানুষ বয়সের একটি সন্ধিক্ষণে এসে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে চায়। আর তাই আয় রোজগারের আশায় কোন না কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। কেউ কেউ মা বাবা স্ত্রী সন্তান ছেড়ে বিদেশেও পাড়ি জমায়। সেরকমই কিছু ঘটনা নিয়ে লিখতে বসা। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ কক্সবাজার সমুদ্র পথ দিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার নামে একটি চক্র বাংলাদেশ থেকে বহু নারী পুরুষকে সে দেশে পাঠাচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ আবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছার আগেই ট্রলার ডুবিতে মারা যাচ্ছে। কেউ আবার (নারী) দালালদের খপ্পরে পড়ে ঠাঁই হয় যৌন পল্লিতে।

উল্লেখ্য বর্তমানে এই পাচারকারীদের দৃষ্টি রোহিঙ্গা নারীদের উপর। গত ১১ ফেব্রুয়ারি/২০২০ সকাল সাতটায় (আনুমানিক) বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলার ডুবিতে ১৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয় এবং জীবিত উদ্ধার হয় ৭২ জন। এদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশি, বাকীরা সবাই রোহিঙ্গা এবং নিখোঁজ রয়েছে ৫১জন প্রায়। ২০১৪ সালের আগস্টে কক্সবাজারের রামু উপজেলার এক নারীকে নেপালে চাকরি দেয়ার নামে মানব পাচারকারীরা খুলনার এক পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। পাঁচ মাস পর পুলিশ ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের রামু থানায় ৩ পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে। অদ্যবধি ওই ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারে নি পুলিশ। জানা যায় ২০১২ সালে দেশে মানবপাচার আইন হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আইনে ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ওই জেলার (কক্সবাজার) ৮টি থানায় ৪৬৭টি এবং ট্রাইব্যুনালে ১৭০টি। ২০১২ থেকে ২০২০ এই দীর্ঘ সময়েও একটি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয় নি।

আমরা যাঁদের রোহিঙ্গা বলছি তাঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে যাঁরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে তাদের দু একজন ছাড়া সবাই মুসলমান। ২০১২ থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ এবং তাড়িয়ে দেয়ায় সমুদ্রপথে বাংলাদেশের এসে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিতে তাঁদের আশ্রয় দেয় আশ্রয় শিবিরে। বর্তমানে তাঁরা জীবিকার সন্ধানে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে দালালদের মাধ্যমে। আবার এক শ্রেণীর দালাল রোহিঙ্গা নারীদের বিক্রি করছে যৌন পল্লীতে। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ৬০০ নারীশিশুকে উদ্ধার করেছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মানব পাচারকারীদের টার্গেট রোহিঙ্গা মেয়ে ও শিশুরা। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে মানব পাচারে সক্রিয় রয়েছে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা দালাল। তারাই নানা প্রলোভনে ফেলে রোহিঙ্গা মেয়ে ও শিশুদের আশ্রয় শিবির থেকে বের করে দেশীয় দালালদের কাছে বিক্রি করে। কক্সবাজারের নোঙর নামক এনজিও পরিচালক বলেন ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কক্সবাজার আশ্রয় শিবির থেকে এক লাখের উপরে মানবপাচার হয়েছে। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর ২০১৬ থেকে ২০১৮ কক্সবাজার উপকূল দিয়ে মানব পাচার বন্ধ ছিল। এরপর ২০১৯ থেকে পুনরায় মানব পাচার আবার শুরু হয়।

বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের পরিসংখ্যানে জানা যায় ২০১২ থেকে ২০১৫ সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছে ১ লাখ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএন এইসআরের তথ্যমতে ২০১৮ থেকে ২০১৯ বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫৯৮ জন। মিয়ানমার সরকারের অমানবিক আচরণে এই যে প্রতিবছর রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিনের ভিটেমাটি ছেড়ে অজানা ঠিকানায় পাড়ি দিচ্ছে তা কি বিশ^ সমাজ চেয়ে থাকবে? বিশ^বিবেকের কি করার কিছুই নেই? এটাই এখন প্রশ্ন বিশ^-বিবেকের কাছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট