চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাজা থেকে বাঁচতে ইয়াবা কারবারীর চালাকি

এক ঠিকানায় জামিনে অন্য ঠিকানায় জেলে

নাজিম মুহাম্মদ

২৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

নাম ঠিক থাকলেও পিতা-মাতা আর এলাকার ঠিকানা ইচ্ছে করেই ভুল দিয়েছিলেন ইয়াবা পাচারকারী মঞ্জুরুল আলম। তিনি নগরীর খুলশী থানায় ইয়াবা সংক্রান্ত দুটি মামলার আসামি। ধরা পড়ার পর পুলিশের কাছে মা, বাবা আর ঠিকানা দিয়েছেন ভিন্ন।

একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে জামিনে বের হয়ে অন্য মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে ফের কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয়। এ ঘটনার পর পুলিশ জানতে পারে দুই মামলার আসামি একই ব্যক্তি। সাজা থেকে বাঁচতে তিনি ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। মঞ্জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানার আমবাগান এলাকা থেকে ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে ফারুক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ফেডেক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচার করেন। পরে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে এবং জালাল নামে ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসের এক কর্মচারীকেও গ্রেপ্তার করে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে গ্রেপ্তার ফারুক, জালাল ও মঞ্জুর আলমকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে দেয়া মঞ্জুরুল আলমের ঠিকানা হচ্ছে টেকনাফের পূর্বগোদারবিল ইউনিয়নে। তার বাবার নাম আমির হোসেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই-চট্টগ্রাম মেট্টো অঞ্চলের পরিদর্শক

সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ফারুক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলো মঞ্জুর আলম নামে একব্যক্তির কাছ থেকে সে ইয়াবা সংগ্রহ করে ফেডেক্স কর্মী জালালের মাধ্যমে তৈরি পোশাকের ভেতরে করে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচার করে। নিউইয়র্কের ব্রকলিন শহরে হাফিজ ও নাজমুল নামে দুই ব্যক্তি ইয়াবাগুলো সংগ্রহ করে থাকেন। ‘মামলাটি তদন্ত করে গত ১৮ আগস্ট আমরা গ্রেপ্তার ফারুক, জালাল ও পলাতক মঞ্জুরকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি এবং অন্যদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আবেদন করি’। এদিকে গত ২৪ আগস্ট রাতে ষোলশহর এলাকা থেকে খুলশী থানা পুলিশের হাতে ৩০২ পিস ইয়াবাসহ মঞ্জুর আলম ও আব্দুল মতিন নামে দুই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। খুলশী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর সুচতুর মঞ্জুর তার বাবার নাম নজির আহমেদ ওরফে কালা মিয়া এবং মার নাম উল্লেখ করেন আয়েশা খাতুন। আর ঠিকানা উল্লেখ করেন নগরীর ডবলমুরিং থানার হাজি পাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচারের মামলাটি আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি মঞ্জুর বাড়ি টেকনাফের গোদারবিল এলাকায়। তার বাবার নাম আমির হোসেন ও মার নাম আজম বাহার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৯১২২১৯০৬৩০০০২২৬।

জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট খুলশী থানা পুলিশের হাতে ৩০২ পিস ইয়াবা নিয়ে গ্রেপ্তার হবার কয়দিনের মধ্যে ওই মামলায় জামিনে বের হয়ে আসে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচারের মামলায় জামিনের জন্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করলে অভিযোগপত্রে তার না থাকায় আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা জানান, ‘মঞ্জুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের কপি আমাদের কাছে আসার পর আমরা কারাগারে গিয়ে জানতে পারি আমাদের মামলার আসামি মঞ্জু ও ২৪ আগস্ট খুলশী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মঞ্জু একইব্যক্তি। তবে দুই মামলায় ঠিকানা দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন। নাম ঠিকানা ভুল দিয়ে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেছেন ইয়াবা ব্যবসায়ী মঞ্জু। মঞ্জুর আসল ঠিকানা ও বাবা, মার সঠিক নাম জানতে আমরা আদালতে রিমান্ড আবেদন করেছি। তাকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০ পিস ইয়াবা নিয়ে নগরীর আমবাগান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি পেশায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি।

মাঝে মাঝে দর্জির কাজও করেন। ২০১৬ সাল থেকে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। আর ইয়াবা বিক্রি করতে গিয়ে আমেরিকা প্রবাসী নাজমুল হক রুশো নামে ঢাকার এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। রুশো আমেরিকা চলে যাবার পর ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে আমেরিকায় ইয়াবা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে হাফিজ নামে এক ব্যক্তির সাথে ফোনে পরিচয় করে দেয়। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের দিকে হাফিজ ফোন করে নগরীর বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করে দেয়। তারা ফারুককে ইয়াবা দিয়ে যেতো। বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজের আদলে প্যাকেট করে ইয়াবাগুলো ঢাকার মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের পাশে অবস্থিত ফেডেক্স ইন্টারন্যাশনাল প্রায়োরিটির পার্শ্বেল রিসিভার জালালের কাছে দিয়ে আসতো। জালাল প্যাকেটগুলো আমেরিকায় হাফিজের কাছে পাঠিয়ে দিতো।

জবানবন্দিতে ফারুক বলেন, পর পর দুটি ইয়াবার চালনা পাঠানোর পর তৃতীয়বার দুই হাজার ইয়াবার একটি চালান নিউইয়র্ক কাস্টম কর্তৃপক্ষ আটক করে। কয়দিন বন্ধ থাকার পর ফের আমেরিকায় ইয়াবা পাচার শুরু করে ফারুক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, নিউইয়র্কে বসবাসরত হাফিজ ও নামজুল রুশো মূল ইয়াবা পাচারকারী। ফারুক চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকায় ফেডেক্স কুরিয়ারের জালালের কাছে পাঠাতো । জালাল ইয়াবাগুলো হাফিজের কাছে পাঠিয়ে দিতো। মঞ্জুরুল আলমের কাছ থেকে সর্বশেষ ইয়াবা সংগ্রহ করেছিলো ফারুক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট