চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

কাল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা

সিডিএ’র চলমান ১০ প্রকল্পের ৫টির তেমন অগ্রগতি নেই

জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পে অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ

ইমরান বিন ছবুর

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চলমান তিনটি বড় প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র ৮ মাস। প্রায় ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকার এসব প্রকল্পে গড় অগ্রগতি হয়েছে মাত্র সাড়ে ২১ শতাংশ।

এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ ২৮ মাসে শেষ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ করতে হবে ৮ মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ এর জুনে শেষ হবে।

এছাড়া দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রিং রোডের (কালুঘাট-চাক্তাই) অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৬.৫ শতাংশ। যার মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। নির্মাণাধীণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরও (লালখান বাজার-বিমানবন্দর) একই দশা। কাজে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র ৮ মাস।

সিডিএ’র বর্তমানে চলমান ১০ প্রকল্পের মধ্যে প্রকগুলোর কাজের অগ্রগতি কিছুটা ভাল, সেগুলোর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। পরবর্তীতে প্রকল্পগুলোর মেয়াদ এবং প্রকল্প ব্যয় দুটোই বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পসমূহ হল সিটি আউটার রিং রোড। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দুই হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত মেয়াদ রাখা হয়েছে আগামি জুন পর্যন্ত। শম্ভুক গতিতে কাজ চলছে সিডিএ’র আরেক প্রকল্প এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর বহিসীমানা দিয়ে লুপ রোডড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ। এই সড়কটি মূলত নির্মাণ কাজ শুরু হয় চউকের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আকতার উদ্দিনের আমলে। তখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভিতর দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে বিশ^বিদ্যালয়ের আপত্তির কারণে রাস্তা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বার বার প্রকল্পের সংশোধনী এবং মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ এখনো চলছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি তিন লক্ষ টাকা।

বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২২০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিরাজদৌল্লাহ রোড হতে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ সড়কের (বাকলিয়া এক্সেস রোড) কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। এই প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র ৮ মাস। বাকি প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ৯২০ কোটি এক লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গার্মেন্টস সেক্টরের কর্মজীবী নারীদের জন্য কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ (সল্টগোলা পতেঙ্গায়) এবং ২৬০ কোটি ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কন্সট্রাকশন অব ১০ স্টোরিড এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এট দেওয়ানহাট।

একাদশ জাতীয় সংসদের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির আগামীকাল রবিবারের ষষ্ঠ বৈঠকে সিডিএ’র চলমান ১০ প্রকল্পের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও বৈঠকে সিডিএ’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সমূহ সংসদীয় কমিটিকে জানানো হবে নিশ্চিত করেছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির সভাপতিত্বে এসভা অনুষ্ঠিত হবে।

সচেতন মহলের দাবি, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় দূর্ভোগ এবং খরচ দুটোয় বাড়ে। এতে জনগণের অর্থ নষ্ট হচ্ছে।

এ সম্পর্কে সিডিএ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ জানান, জাতীয় সংসদের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সিডিএ’র চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া, সভায় সিডিএ’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হবে।

সিডিএ’র চলমান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, বাইপাস সড়ক (লুপ রোড), বাকলিয়া এক্সরোড রোড, রিং রোড (কর্ণফুলী-কালরঘাট), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (লালখান বাজার-বিমানবন্দর), জলাবদ্ধতা প্রকল্প, গার্মেন্টস সেক্টরের কর্মজীবী নারীদের জন্য কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ (সল্টগোলা পতেঙ্গায়), কন্সট্রাকশন অব সিডিএ স্কয়ার এট নাসিরাবাদ, কন্সট্রাকশন অব ১০ স্টোরিড এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এট দেওয়ানহাট, অনন্যা আবাসিক এলাকার উন্নয়ন (২য় পর্যায়)।
এছাড়া, সিডিএ’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান (২০২০-২০৪১), চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (২য় পর্যায়), দক্ষিণ কাট্টলী হতে সীতাকু- পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ, নর্থ সাউথ-১ সংযোগ সড়ক নির্মাণ (আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়ক), নর্থ সাউথ-২ রোডের উন্নয়ন (শাহ আমানত ব্রীজ কানেক্টিং রোড হতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ), কবি কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (ফিরিঙ্গী বাজার মোড় হতে সদরঘাট), বহদ্দারহাট থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ (চাঁন্দমিয়া সওদাগর রোড)। এছাড়াও রয়েছে, ডেভেলপমেন্ট অব ফতেয়াবাদ নিউটাউন ইন চট্টগ্রাম, কন্সট্রাকশন অব সিডিএ কর্ণফুলী কমপ্লেক্স এট আগ্রাবাদ, সী ফ্রন্ট স্মার্ট সিটি ইন চট্টগ্রাম।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ সভা আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা। সিডিএ’র চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। কোন প্রকল্পের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এছাড়া, সিডিএ’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হবে। সভার সভাপতিত্ব করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট