চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

পাউবোর উচ্ছেদ করা সম্পত্তি ফের প্রভাবশালীদের দখলে

পাউবোর উচ্ছেদ করা সম্পত্তি ফের প্রভাবশালীদের দখলে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৬ নভেম্বর, ২০২৫ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

কাট্টলী এলাকায় অবৈধ দখলমুক্ত করা ১১৭ একর জমি নিয়ে এখন ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। দীর্ঘদিন ধরে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে ছিল এসব সম্পত্তি। উচ্ছেদের কয়েকদিনের মধ্যেই ফের দখলদাররা আগের জায়গায় ফিরে আসে।

 

চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৯৭০ সালে দক্ষিণ পতেঙ্গা, দক্ষিণ কাট্টলী ও উত্তর হালিশহর এলাকায় ৬০১ দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের পর বিপুল পরিমাণ জায়গা অব্যবহৃত রয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে তা ধীরে ধীরে দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সাবেক মেয়র-এমপি ও কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রভাবশালীরা মিলেমিশে গিলে খেয়েছিল পাউবোর জমি। এসব জমিতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার ইয়ার্ড, গাড়ির গ্যারেজসহ পাকা ও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল।

 

গত জুলাই মাসে জেলা প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর সহায়তায় বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিন দিন ধরে টানা উচ্ছেদ অভিযানে ১১৭ একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছিল। 

 

বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাগরিকা স্টেডিয়াম এলাকায় উদ্ধার করা জায়গায় নগরের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সিসি ব্লক বানানো হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক ব্লক রাখা হয়েছে। এই জায়গা ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে

 

সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পুরনো দখলদাররা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। চলছে সেই কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, স্কেভেটর ইয়ার্ডের কার্যক্রম। চলছে গ্যারেজের কাজও। খাজা কালু শাহ পার্কিং নামে একটি ইয়ার্ডে দেখা গেছে, ৩০-৩৫ লরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক রাখা হয়েছে। দুটি লরি বের হতে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ইয়ার্ডেও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ইয়ার্ডে নতুন করে স্টিলের কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। 

 

দেখা যায়, উচ্ছেদ করা স্থানের মধ্যে ঈশান মহাজন রোডের বাংলাবাজার ও কর্নেল জোনস রোডের শেষ প্রান্তে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। আউটার রিংরোড লাগোয়া কাট্টলী খালের ওপর স্টিলের পাটাতনের সেতু নির্মাণ করে ইয়ার্ডগুলোর কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন স্থানে দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

 

আউটার রিং রোড থেকে কাট্টলী ঈশান মহাজন রোডে বেয়ে নামার সময় চোখে পড়ে ৪-৫ জন যুবক বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করছে। ইয়ার্ডে বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য তার বসানো কাজ চলছে বলে জানান স্থানীয় এক চা দোকানি।

 

দিশেহারা পাউবো :

উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ জায়গা নিয়ে দিশেহারা পানি উন্নয়ন বোর্ড। উচ্ছেদ অভিযানে ৪০ একরের স্থাপনা ছিল। সবমিলে ১১৭ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, ‘উচ্ছেদ করা জায়গা আয়ত্বে রাখতে তারকাটার ঘেরা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য চার কোটি ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এক কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি।’

 

পিলার ও তার কাটা ঘেরা দেওয়ার জন্য তিন প্যাকেজে ভাগ করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে এখনো দুই প্যাকেজের ছাড়পত্র দিতে পারেনি পাউবো।

 

পাউবো সূত্র জানায়, শহর রক্ষা বাঁধের জন্য ৬০১ দশমিক ৭৯ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে বিএস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে ৪০৮ দশমিক ২২ একর। রেকর্ডভুক্ত হয়নি ১৯৪ দশমিক ৩৭ একর। নামজারি হয়নি ১২৫ দশমিক ১৪ একর। এরমধ্যে সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৪৮ দশমিক ৮৩ একর। কর্ণফুলী টানেলের জন্য হস্তান্তর করা হয় ১১ দশমিক ৮৭ একর। ১৩ দশমিক ৬৫ একর জায়গা নিয়ে জটিলতার কারণে মামলা রয়েছে। ৬ দশমিক ৪৯ ইজারা দেওয়া হয়েছে।            

 

 

উদ্ধার ১২শ কোটি টাকার সম্পত্তি পাউবোর উচ্ছেদ করা ১১৭ একর জায়গা ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে ছিল। ওই মৌজায় প্রতি শতক জমি ১০-১১ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়। গড়ে ১০ লাখ টাকা করে হলেও উদ্ধার করা জমির মূল্য দাঁড়ায় ১১৭০ কোটি টাকা।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট