গত কয়েক বছর ধরে আমন ও বোরো মৌসুমে চালের সংগ্রহ ছিল হতাশাজনক। বাজার দরের ওপর নির্ভর করে খাদ্য বিভাগের কাছে চাল বিক্রি করতো মিল মালিকেরা। আর ধান সংগ্রহ ছিল একেবারে হতাশাজনক। গত আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহে রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম জেলা। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে বড় রেকর্ড। গত দুই মৌসুমে বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে ৩২ ও ৩৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়সার আলী পূর্বকোণকে বলেন, সরকার এবার ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য গতবারের চেয়ে কেজিতে চার টাকা করে বাড়িয়েছে। তাই কৃষক ও মিল মালিকেরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান-চাল বিক্রিতে উৎসাহী হয়েছেন।
তিনি বলেন, এবারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম সফল করতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১১ জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালনে অনুরোধ করা হয়েছে। সবার আন্তরিক চেষ্টায় এক দশকের তুলনায় এবার ধান সংগ্রহে রেকর্ড করেছে। ভালো ও ন্যায্য দামে সরকারকে ধান দিতে পেরে কৃষকরাও খুশি হয়েছেন।
চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান কিনছে কেজিতে ৩৬ টাকা করে। আর চাল মিল মালিকের কাছ থেকে আতপ চাল কেজিতে ৪৮ টাকা ও সিদ্ধ চাল কেজিতে ৪৯ টাকায় কিনেছে। যা গত বোরো মৌসুমের চেয়ে কেজিতে চার টাকা করে বাড়িয়েছে সরকার।
খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার হাজার ১৫৯ মে. টন। তার বিপরীতে গত সোমবার পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে তিন হাজার ৯২৪ মে. টন। যা সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৯ মে. টন। বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৫২৯০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। আতপ চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৩ মে. টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে চার হাজার ৮০৮ দশমিক ৩৬০ মে. টন। সিদ্ধ চালের ৫৯৬ মে. টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৪৮২ দশমিক ৪০ টন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, চলতি মৌসুমে ধান-চালের দাম ভালো থাকায় সংগ্রহও ভালো হয়েছে। হালিশহরসহ বিভিন্ন খাদ্য গুদামে শতভাগ চাল সংগ্রহ হয়েছে। বেশির ভাগ উপজেলায় ধান সংগ্রহও শতভাগ লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। অতীতের চেয়ে ধান সংগ্রহ এবার আশাব্যঞ্জক হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবার ধান-চাল সংগ্রহ শতভাগ সাফল্য অর্জন করবে।
চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ ও ফলন-দুটোই বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার টন। গতবারের তুলনায় আবাদ বেড়েছে ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন বেড়েছে ৪৭ হাজার ৬৬৩ টন।
বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের চাষি কুমকুম দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও বাড়তি থাকায় কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে উৎসাহী হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর