চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে তিন বছরে তরমুজের চাষ বেড়েছে ৪ গুণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

‘তরমুজ ভালা পতেঙ্গার, গয়াম মজা পটিয়ার’- সাগর তীরবর্তী পতেঙ্গার রসালো তরমুজ নিয়ে গানটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু কালের বিবর্তন ও নগরায়ণের ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। তবে চট্টগ্রামে তরমুজের আবাদ বাড়ছে। পতেঙ্গার রসালো তরমুজের সুবর্ণ ফিরিয়ে এনেছেন সুবর্ণচরের চাষিরা।

 

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ৬৭৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। ২০২২ সালে আবাদ হয়েছিল ১৭০ হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে তিন বছরের ব্যবধানে তরমুজের আবাদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এছাড়াও চলতি মৌসুমে ৪২৩ একর জমিতে বাঙ্গি ও ৯৭৮ একর জমিতে খিরার আবাদ করা হয়েছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুচ ছোবহান পূর্বকোণকে বলেন, একসময় পতেঙ্গার তরমুজের খ্যাতি ও সুদিন ছিল। নগরায়ণের ফলে পতেঙ্গায় এখন আর তরমুজের চাষ হয় না। মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে তরমুজের চাষবাদ হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, ২০২২ সালের দিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কয়েকজন কৃষক জমি বর্গা নিয়ে পরীক্ষামূলক তরমুজের চাষ শুরু করেন। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়। এখন ব্যাপক আকারে চাষাবাদ হচ্ছে।

 

কৃষক ও কৃষিবিভাগ জানায়, জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা এলাকায় কয়েক বছর ধরে তরমুজের চাষাবাদ হয়ে আসছে। আরও কয়েকটি উপজেলার চরাঞ্চলেও চাষাবাদ হয়ে আসছিল।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামে বড় ধরনের তরমুজের আবাদ হয় না। তারপরও বর্তমানে ভালো ফলন হওয়ায় তরমুজের চাষ বাড়ছে। জেলার মিরসরাই ছাড়াও রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশে কম-বেশি আবাদ হয়ে আসছে। বেলে-দোঁআশ মাটিতে তরমুজের আবাদ ভালো হয়। তাই সাগর উপকূলীয় বালিমিশ্রিত মাটিতে ভালো চাষ হয়। এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলে বার্মি কম্পোস্ট, কেঁচোসার, জৈবসার, গোবরসার মিশ্রিত করে জমিতে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তরমুজসহ যেকোন ফসল ভালো উৎপাদন হয়।

 

কৃষকেরা জানান, কয়েক বছর ধরে তরমুজের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষাবাদও বাড়ছে। চলতি বছর রমজান মাসে তরমুজের ভালো চাহিদা ছিল। এ সময় ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। বোয়ালখালীতে নদী বা সাগরের তীরবর্তী জমি, পাহাড়ি সমতল জমিতে কয়েক বছর ধরে ভালো তরমুজের চাষ হচ্ছে।

 

বোয়ালখালীর করলডেঙ্গার কৃষক আলী ওসমান বলেন, তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি। লাভও ভালো পাওয়া যায়। এতে তরমুজের আবাদও বাড়ছে। চলতি বছর ১০ একর জমিতে তরমুজ, বাঙ্গি, শসাসহ নানাজাতের সবজি চাষ করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন চাষিও কম-বেশি চাষাবাদ করেছেন।

 

ক্ষেত থেকে ফড়িয়া ও লোকজন এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যায় বলে জানান বাঁশখালীর চাষি মো. মিয়া। তিনি বলেন, সাগর উপকূল এলাকা হিসেবে বাঁশখালীতে আগাম জাতের তরমুজের চাষ হয়। রোজার মাসে প্রতিটি তরমুজ আকারভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 

কৃষিবিভাগ জানায়, চট্টগ্রামে ব্ল্যাকবেরি, গোল্ডেন ক্রাউন, আনারকলিসহ নানাজাতের তরমুজ চাষ হয়ে আসছে। কৃষিবিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট