চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

কর্ণফুলী থানার এএসআইকে বোকা বানিয়ে ৪৪ হাজার টাকা হাতালো প্রতারক!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ১:০০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় মো. রায়হান (২১) এক যুবকের কাছ থেকে ডিবির ওসি পরিচয়ে ৪৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিকাশ প্রতারক চক্র। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) কর্ণফুলী থানায় এ ঘটনা ঘটে।

 

জানা গেছে, কর্ণফুলীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে আবদুল কাইয়ুম ফাহাদ (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ফাহাদ প্রতারণার শিকার রায়হানের বড় ভাই। এরা কর্ণফুলীর শিকলবাহার ২ নম্বর ওয়ার্ডের খলিলুর রহমানের বাড়ির আবদুস সালাম মনুর ছেলে।

 

ভাইকে পুলিশে আটক করেছে এমন সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় থানায় আসেন রায়হান। তখন কর্ণফুলী থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন এএসআই মো. জাকির হোসেন।

 

এএসআই জাকির হোসেন জানান, থানায় সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটের দিকে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তখন হঠাৎ ডিউটি অফিসারের সরকারি ফোন নম্বরে একটা নম্বর থেকে কল আসে। শেষ নম্বর সম্ভবত ডাবল জিরো হবে। পরে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ডিবি পুলিশের ওসি হাসান পরিচয় দেন।

 

এরপর তিনি জানতে চান- তোমার হাজতে আসামি কয়টা আছে। উত্তরে আমি জানাই একজন। তখন ডিবি ওসি জানান, আসামিটা কালকের ওটা না। নারী ও শিশু অপহরণ মামলার। তখন আমি জানাই হ্যাঁ।

 

পরে কথিত ডিবি ওসি জানান, তুমি আসামিকে জিজ্ঞেস করো। আসামির কেউ থানায় আছে কিনা। আমি মনে করছি তিনি সিসিটিভিতে সব দেখতেছেন। কর্ণফুলী থানার ওসি স্যার যেহেতু আগে ডিবিতে ছিলেন। আমি মনে করছি স্যার হয়তো ডিবির কাউকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

 

পরে আমি ডিউটি অফিসারের চেয়ার থেকে উঠে হাজতের আসামিকে জিজ্ঞেস করি তার কোন আত্মীয় স্বজন থানায় এসেছে কিনা। তখন আসামি জানান, রায়হান নামে এক ভাই থানার বাহিরে আছেন। তখন এ কথা শোনে ডিবি ওসি রিকুয়েস্ট করেন, ভাইকে যেন ফোনটা একটু দিই। কথামতো আমি বাহিরে গিয়ে আসামির ভাইকে খুঁজে ফোনটি ধরিয়ে দিয়ে চলে আসি।

 

যেহেতু আমার একটু তাড়াহুড়ো ছিলো। তার ঠিক দেড় দুই মিনিট পর ফোনটি আবার আমাকে দিতে আসে রায়হান। তখনো কিন্তু লাইন কাটেননি ওসি হাসান। পরে ওসি আরও জানান, আসামির ভাই যেন থানার ভিতরে না আসেন। আমিও সরল মনে তা বলে কাজ করতে থাকি।

 

এরপর বিকেল ২ টা ৪০ মিনিটের সময় হঠাৎ রায়হান এসে আমাকে বলল, আপনার নাম বলে যাকে ফোন ধরাই দিয়েছিলেন সে ৪৪ হাজার টাকা বিকাশে নিয়ে গেছে। আমি তখন বলি, কোন স্যার। তখন রায়হান বলে, ওই যে আপনি যাকে উর্ধ্বতন অফিসার বলে ফোন ধরাই দিলেন।

 

রায়হান বলল, তার ভাইকে ৫ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে দিবে, ওসি স্যারের সাথে কথা বলবে, তদন্ত স্যারের সাথে কথা বলবে। এসব কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তখন সাথে সাথে থানার সেকেন্ড অফিসারকে আমি বিষয়টি জানাই। পরে ওসি তদন্ত স্যার আমাকে ডেকে সব জানতে চান। আমি তো সরল বিশ্বাসে ফোনটা দিলাম। কিন্তু ঘটনাটি ঘটলো ভিন্ন।

 

এ ঘটনায় বিকাশ প্রতারণার অভিযোগ সূত্রে কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসান তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে জানতে পারেন, যে বিকাশ প্রতারক টাকা নিয়ে গেছে। সেটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানায়। প্রতারকের আইডি কার্ডে নাম বাবুল মিয়া। ওর নাম্বারেই টাকাটা গেল। পরে একটি নম্বরে পেমেন্ট করে ১৪ হাজার টাকা ব্যবহার করেন। অন্য আরেকটি নম্বরে সেন্টমানি করেন ২৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা ওই নম্বরে ছিলো। পেমেন্ট নম্বরের লোকেশন আবার রাজশাহী গোদাগাড়ি থানায়।

 

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, যতটুকু তথ্য পেলাম তাতে মনে হলো টাকাটা নেওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন নম্বরে ট্রান্সজেকশন করেছে। যদিও বিকাশ কেয়ার সেন্টারে অভিযোগ দেওয়া হলো। বাকিটা ভুক্তভোগীর অভিযোগ মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট