চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাঠকের মত

শুধুমাত্র শাস্তিবিধান কিশোর অপরাধ দমনে যথেষ্ট নয়

প্রসঙ্গ কিশোর গ্যাং

ডা. মো. সাজেদুল হাসান

১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

একজন চিকিৎসক কিশোর গ্যাংয়ের ইটের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর অপরাধ তিনি তাঁর ইফতার কিনতে যাওয়া ছেলেকে কিশোর গ্যাংয়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি চট্টগ্রাম নগরীর ফিরোজ শাহ এলাকায় রমজানের শেষদিকের ঘটে। যেহেতু প্রয়াত চিকিৎসক বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় প্রভাবশালী কেউ নন তাই বিষয়টি আমাদের অনেকটা অগোচরে থেকে যায়। গতকাল যুগপৎ দৈনিক পূর্বকোণ ও প্রথম আলো পত্রিকা মারফত আমরা বিষয়টি জানতে পারি এবং হতচকিত হয়ে যাই। আরও বিস্মিত হই যখন আমরা শুনি ঘটনাস্থল নগরীর আকবর শাহ থানার নিকটবর্তী এবং এখানে একটি টর্চার সেল আছে যা ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতার অধিনায়কত্বে পরিচালিত হয়। যিনি আবার দলীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দর্প প্রদর্শন করেন এবং স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাঁর অবাধ্য হলে ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন করার ইতিহাস এলাকার মানুষ জানলেও স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য তাঁকে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেন নি। এই অভিযোগ না করার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ সত্য। কারণ অভিযোগ করে উল্টো বিপদে পড়ার সাহস অনেকেরই নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জনগণকেই অভিযোগ করতে হবে কেন? তাহলে পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী কিংবা সোর্সের কাজ কি? বছরের পর বছর ধরে সদর রাস্তার উপর স্থাপিত এরূপ টর্চার সেল মানুষজনকে নির্যাতন করে যাবে আর আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী জানবে না এটা কেমন কথা? তবে শুধু আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে একা দোষারোপ করলে হবে না, যেতে হবে সমস্যার গভীরে। কিশোর গ্যাং এই সমাজের বৈষম্য থেকে সৃষ্টি। শহরাঞ্চলে বস্তি থেকে উঠে আসা এসব তরুণ না পেয়েছে অভিভাবকের স্নেহ, না পেয়েছে নাগরিক সুবিধা। জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছে অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশে বা পথ শিশু হয়ে। ক্রমাগত বঞ্চনা তাদের করেছে একরোখা ও বেপরোয়া। দুরন্ত সাহস আর সমবয়সীদের সাথে দলবদ্ধতা এদের মূল শক্তি। এই অপশক্তিকে ব্যবহার করে পাড়ার বড় ভাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা ক্ষমতাসীনদের ছাত্র যুব সংগঠন। ভোটের রাজনীতি, প্রতিপক্ষ সামলানো, চাঁদাবাজি এই কিশোর গ্যাংয়ের নৈমিত্তিক কাজ। এভাবে শীর্ষ পর্যন্ত গড়ে উঠে দুর্বৃত্তায়নের হায়ারার্কি।

শুনেছি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একজন ডিসির সদিচ্ছা সাময়িক উপশম দিতে পারে, কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে যথেষ্ট নয়। যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক ছত্রছায়া অপসারিত না হবে ততদিন কিছু পিসমিল পরিবর্তন হয়তো পরিলক্ষিত হবে। তারপর আবার সেই তিমিরেই ফিরে যেতে হবে। অবস্থা কত ভয়াবহ হলে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রদান করেন, বলাই বাহুল্য। শুধুমাত্র আইনের কঠোর প্রয়োগ দিয়ে এই ক্ষত উপশম হবে না, রাজনৈতিক অঙ্গীকার আর সামাজিক সংস্কার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট