‘সাড়ে তিন কানি জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। বন্যায় দুই থেকে আড়াই কানি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলাও। তারপরও বীজ সংগ্রহ করে নতুন করে চারা রোপণ শুরু করেছেন।’ কথাগুলো বলেছেন বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে। শুধু চেয়ারম্যান কাজল দে নন, ওই এলাকার চাষিরা নতুন করে বীজ রোপণ শুরু করেছেন। চেয়ারম্যান কাজল দে বলেন, জমি থেকে এখনো পুরোপুরিভাবে পানি নামেনি। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নামতে সময় লাগছে। তারপরও দূর-দূরান্ত থেকে বীজ সংগ্রহ করে প্রায় ৩শ কানি জমিতে নতুন করে চারা রোপণ করেছেন কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণের হিসাব, জেলায় ৬ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়। এরমধ্যে তিন হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। ৪২ হাজার ১৯০ জন কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়।
চেয়ারম্যান কাজল দে বলেন, জমি থেকে পানি নামতে শুরু করায় কৃষকেরা নতুন করে চারা রোপণ শুরু করেছেন। কিন্তু বীজতলা সংকটে অনেকেই চারা রোপণ করতে পারছে না।
বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের কৃষক আবুল মনসুরের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। পূর্ব গোমদণ্ডী থেকে ৪০ শতক জমির চারা কিনেছেন ১৭শ টাকায়। ওই চারায় নতুন করে আমন আবাদ শুরু করছেন তিনি।
বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। আশা করছি, প্রস্তুত থাকা বীজতলা দিয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয়। কিন্তু আগস্টের শুরুতে জলোচ্ছাস ও বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাউজান, রাঙ্গুনীয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে আমনের চারা রোপণ করছেন চাষিরা। দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজে কেউ বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। কেউ চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আনোয়ারা উপজেলার চাষি আবদুর রহিম বলেন, ‘৫ কানি জমির মধ্যে তিন কানি জমিতে আমন চারা রোপণ করেছিলাম। বন্যায় প্রায় দুই কানি জমির চারা নষ্ট হয়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচারক মো. আবদুচ ছোবহান পূর্বকোণকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ৬৫ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। পানি নামার পর থেকে সবকটি উপজেলায় সমানতালে চারা রোপণ শুরু হয়েছে। যেসব উপজেলায় বন্যা হয়নি এবং অতিরিক্ত, উদ্বৃত্ত বীজ রয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের মধ্যে সরবরাহের চেষ্টা করছি। আশা করছি, বীজের সংকট হবে না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ৩ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসময় আউশ ধান, আমনের বীজতলা, আমনের আবাদ ও সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক লাখ ১৬ হাজার ২৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায়। সাতকানিয়ায় ১৯ হাজার ৬৬৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। লোহাগাড়ায় ১০ হাজার ৫৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চন্দনাইশে ১৫ হাজার ৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতি ৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানান, বন্যায় ঘরবাড়ি, জমা-জমি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে চাষাবাদ করার মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই বেশির ভাগ কৃষকের।
পূর্বকোণ/আরডি