চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের ধারণা, ভোটের পরিবেশের উপর নির্ভর করছে ভোটার উপস্থিতি। কারণ গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৪ শতাংশ। এরমধ্যে নগরের অংশে উপস্থিতি ছিল ৯ শতাংশ। এ উপনির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।

 

জাতীয় রাজনীতিতে চট্টগ্রাম-১০ আসন গুরুত্ব বহন করে। এ আসন থেকে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত এম.এ মান্নান, ইসহাক মিয়া, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ডা. আফছারুল আমিন চৌধুরী।

 

আগামী ৩০ জুলাই উপনির্বাচন হবে এ আসনে। কাল ১৩ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠে লড়বেন আওয়ামী লীগ, জাপা দলীয় প্রার্থীসহ চার জন। ৩-৪ মাসের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তবে ৫০ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে আনার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু পূর্বকোণকে বলেন, ‘সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি আশা করছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির।’ তিনি বলেন, শুধু আমাদের চেষ্টা থাকলে হবে না, ভোটারদেরও ভোটারাধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে।’

 

তবে তৃণমূল বিএনপি দলীয় প্রার্থী দীপক কুমার পালিত পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভোটাররা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন মনে করলে উপস্থিতি ২৫ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছি। তাও নির্ভর করছে নির্বাচনী পরিবেশের ওপর। কারণ সরকারি দলের প্রার্থী জিতে যাবে-এই ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। এতে ভোটের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায় না। এছাড়াও উপনির্বাচনের চেয়ে মানুষের নজর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। সব মিলিয়ে ১৫-২০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি হবে বলে মনে হচ্ছে।’

 

সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ভোটে জয় নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তারপরও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে দলের নীতি নির্ধারকেরা। কারণ ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার সুযোগ পাবে বিরোধী দল। বিএনপি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে আসছে। নির্বাচনে উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে আসছে দলটি।

 

গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১ জন। এরমধ্যে বোয়ালখালী অংশে ভোটার ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার ৯০১ জন। নগরীতে তিন লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ জন। ১৯০ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ৭৫ হাজার ৩০৫ জন ভোটার। ভোটের হার ছিল ১৪ শতাংশ। এরমধ্যে নগরীর অংশে ভোট পড়েছে ৯ শতাংশ। নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম-১০ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। ১৫৬ ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ২৫১ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট হবে ইভিএমে।

 

ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। লালখান বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছেন। কিন্তু উপনির্বাচনে ভোটের টার্নআউট কম। এটা সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, অবহেলা। সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি কার্যকর করলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে।’

 

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকবে জাতীয় পার্টি। জাপা প্রার্থী মো. সামসুল আলম বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা উন্মুক্ত করে দিলে আমরা ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারবো। এতে ভোটার উপস্থিতি ৩৫ শতাংশ হতে পারে। অন্যথায় ভোটার উপস্থিতি কম হবে।’

 

আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর ও ডবলমুরিং) আসনে ভোটগ্রহণ হবে। গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ৪ জুন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডা. আফছারুল আমীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে টানা তিনবার (২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার আওয়ামী লীগ এ আসনে প্রার্থী করেছে নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুকে।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট